ঢাকা ও ইসলামাবাদ
দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ আবারও কাছাকাছি আসছে। শনিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার ঢাকায় পৌঁছান, যা ২০১২ সালের পর কোনও শীর্ষ পাকিস্তানি কূটনীতিকের প্রথম সফর। ইসলামাবাদ একে বলছে “ঐতিহাসিক” ও “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক”।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এবং গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করেছে। ভারতঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন।
দারের এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়াতে একাধিক চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই ভিসা বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে এবং সমুদ্রপথে বাণিজ্যও শুরু হয়েছে। রবিবার সকালে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ নিয়ে আলোচনা করেছে, বিশেষ করে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও যোগাযোগ জোরদারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান চালুর পরিকল্পনাও চলছে। পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সফরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
শনিবার ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সহযোগিতামূলক ও আগামীর দিকে তাকানো সম্পর্ক গড়তে পাকিস্তান অঙ্গীকারবদ্ধ।”
রাজনৈতিক আলোচনায় ঐতিহাসিক মাত্রা
দার জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। জামায়াতের সহকারী আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানান, “ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-কে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, তা নিয়েও মতবিনিময় হয়েছে।”
পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এন সি পি), যারা গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়, এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর আগের দিন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা ইসলামাবাদে বৈঠক করেন।
অতীতের রক্তাক্ত ইতিহাস
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার অভিযোগ এখনও ঢাকার জনমনে গভীরভাবে প্রোথিত। বাংলাদেশ দাবি করে লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আর অনেকেই আজও পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে আসছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ভারতের ওপরই নির্ভরশীল থেকেছে, যেটি দেশটিকে প্রায় চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।
তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পাল্টেছে। অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মোহাম্মদ ইউনুস ইতিমধ্যেই ভারতকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে ঢাকা অভিযোগ করেছে, ভারত নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগকে গোপনে সমর্থন দিচ্ছে, যা দিল্লি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।
সব মিলিয়ে ইশাক দারের সফর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে চলেছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।