“ধারণা ভাঙার কিক—ফ্রিস্টাইল ফুটবলে তারকা হাদিয়া হাকিম”

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 3 h ago
হাদিয়া হাকিম
হাদিয়া হাকিম
 
শ্রীলতা মেনন, ত্রিশূর

FOR THE GIRLS OUT THERE…., সর্বশেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে চিৎকার করে ওঠে এই ক্যাপশন, যেখানে হিজাব পরিহিতা হাদিয়া হাকিম দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার পটভূমিতে চমৎকারভাবে ফুটবল কায়দা করে খেলছেন। হাকিম একজন পেশাদার ফ্রিস্টাইল ফুটবল খেলোয়াড়, অর্থাৎ শিল্পী ও ফুটবলারের এক অনন্য মিশ্রণ। এই শিল্প দেখাতে তাঁর এগারোজন খেলোয়াড়ের একটি দল প্রয়োজন হয় না।
 
কোঝিকোড়, কেরালার মেয়ে হাদিয়া বারো বছর বয়সে ফ্রিস্টাইলিং-এর সঙ্গে পরিচিত হন। কাতারে স্কুলে পড়ার সময় তিনি ফুটবল খেলতেন। কিন্তু পরিবার যখন কেরালায় ফিরে আসে, তখন ১২ বছরের হাদিয়া মরিয়া হয়ে ফুটবল খেলতে চাইতেন। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর বাড়ির আশেপাশে বা স্কুলে মেয়েদের কোনো ফুটবল দল ছিল না। কিন্তু হাদিয়া ফুটবলকে এতটাই ভালোবাসতেন যে হাল ছাড়তে রাজি হননি।
 
খেলার ছন্দে হাদিয়া
 
তিনি ইউটিউবে ফ্রিস্টাইলিং টিউটোরিয়াল খুঁজে পান এবং বছরের পর বছর ধরে ঘরে বসেই কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলেন। ইউটিউবে তাঁর ভিডিও প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং হাজার হাজার ভিউ আসতে থাকে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর ফলোয়ার দ্রুত বাড়তে থাকে। 
 
২০২২ সালে কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে। দর্শকে ভরা ৪০ হাজার সিটের স্টেডিয়ামে বিরতির সময় নেচে ওঠে হাদিয়ার ফুটবল। সেই মুহূর্ত তাঁর জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়গুলোর একটি।
 
ফ্রিস্টাইল ফুটবল প্রাচীন দক্ষিণ এশীয় কিছু খেলার সঙ্গে যুক্ত হলেও এটি আগে জাদু প্রদর্শনীতে বা মারাদোনার মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়দের মাধ্যমেও দেখা যেত। আজ এটি আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পাওয়ায় এর নিজস্ব চ্যাম্পিয়নশিপও অনুষ্ঠিত হয়।
 
খেলার ময়দানে হাদিয়া হাকিম
 
হাদিয়া হাকিম বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর যাত্রা অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, আমার ফ্রিস্টাইল ফুটবল যাত্রা আমাকে ক্রীড়াশক্তি, শিল্প আর প্রভাবকে একত্র করতে সাহায্য করেছে। আমি একাধারে পারফরম্যান্স আর্টিস্ট, অ্যাথলিট ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
 
বুর্জ খলিফার সামনে পারফর্ম করা ভিডিও নিয়ে তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেন, এই পোস্ট ইতিমধ্যেই এক মিলিয়ন লাইক পেয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই খেলা আমাকে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং ফুটবল, ফ্রিস্টাইল ফুটবল ও স্পোর্টস মিডিয়ার পেশাদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করেছে।
 
তাঁর সবচেয়ে গৌরবের মুহূর্ত ছিল দোহায় বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে পারফর্ম করা, ২০২৩ সালের ফিফা বিশ্বকাপে।
 
কোঝিকোড় থেকে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার পর এখন তিনি পারফরম্যান্স ও সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে ব্যস্ত।
 
কিকের রিহার্সালে হাদিয়া হাকিম
 
ইনস্টাগ্রামে তাঁর এক পোস্ট, “আমি শক্তি, উদ্দেশ্য আর একটি ফুটবল বহন করি। শুধু নিজের জন্য নয়; প্রতিটি মেয়ের জন্য।”
 
তাঁর হ্যাশট্যাগ প্রায় সবসময়ই #WomenEmpowerment #WomenInSports,যেন ফ্রিস্টাইল ফুটবলের প্রতি তাঁর আবেগময় যাত্রার অন্তর্নিহিত সুর। এটি তাঁকে একটি পরিচয় দিয়েছে, আর সেই পরিচয়ের মধ্য দিয়েই তিনি পেয়েছেন স্বাধীনতা, নিজস্ব আকাশের নীচে নিজের জায়গা।
 
হাদিয়া নিজের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন এবং কখনও তাঁর সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যকে বাঁধা হতে দেননি। এক পোস্টে, যেখানে লেখা ছিল “Your clothing is oppressive”, তিনি এই ধারণাকে বিদ্রূপ করে হিজাব গাউন পরে সাবলীলভাবে ফ্রিস্টাইলিং করেন।
 
হিজাব দিবসে তিনি পোস্ট করেন, “হিজাব সুন্দর, ভালোবেসে পরুন, গর্বের সঙ্গে পরুন।”, আর তখনও তিনি খেলছেন তাঁর চিরচেনা স্কার্ফ পরে।
 
ফ্রিস্টাইল করার সময় তিনি সাধারণত ঢিলেঢালা টপস, ট্রাউজার আর মাথায় স্কার্ফ পরেন। মাঝেমধ্যে তিনি এসব ধরনের পোশাকের বিজ্ঞাপনও দেন, “আমার ফুটবল ফ্যান্ডমের জন্য একেবারে পারফেক্ট পোশাক খুঁজে পেয়েছি!”
 
দুবাইতে হাদিয়া হাকিম
 
তিনি এখন স্থায়ীভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন এবং সেখানেই নিজের স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটছেন। তিনি এখন বিবাহিতও। এক মজাদার ঘোষণায় লিখেছেন, “জীবনকে একসঙ্গে জাগল করার মতো কাউকে পেয়ে গেছি…”
 
কিন্তু তাঁর প্রতিটি পোস্টের অন্তর্নিহিত সুর হচ্ছে, “তুমি যে পরিবর্তন দেখতে চাও, সেটাই নিজে হয়ে ওঠো।”