ভারতবর্ষ: কাজী নজরুল ইসলামের উত্তরাধিকারকে AI-র নতুন স্বীকৃতি
Story by atv | Posted by Sudip sharma chowdhury • 4 d ago
মেখলা দাশগুপ্ত ও কাজী নজরুল ইসলাম
মলিক আসগর হাশমি ,নয়াদিল্লি
ভারতের সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীত ঐতিহ্যে যুক্ত হলো এক নতুন অধ্যায়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-কে উৎসর্গ করে সম্প্রতি মুক্তি পেল প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক গান ‘ভারতবর্ষ’। এই গানটি সামনে এনেছেন বাংলার তরুণ এবং প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী মেখলা দাশগুপ্ত, যিনি সাহিত্য এবং প্রযুক্তির এক অভিনব সংমিশ্রণ তুলে ধরেছেন। এই উদ্যোগ নজরুলের রচনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে জীবন্ত করে তুলেছে।yle="font-size: 20px;">নজরুলের উত্তরাধিকার এবং নতুন প্রজন্ম
কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বাংলার নয়, বরং পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের এক বিশাল সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়, কারণ তাঁর কবিতা ও গান ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
তাঁর রচনাগুলি কেবল স্বাধীনতা আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেনি, বরং আজও সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবতার পক্ষে অনুপ্রেরণার উৎস। তবে সময়ের পরিবর্তন এবং ডিজিটাল যুগে এই উদ্বেগ দেখা দেয় যে নতুন প্রজন্ম কি নজরুলের কবিতা ও গানের সঙ্গে ততটা সংযুক্ত হতে পারবে, যেমনভাবে আগের প্রজন্ম যুক্ত ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তরই মেখলা দাশগুপ্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে দিয়েছেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI)সাহায্যে এমন একটি গান তৈরি করেছেন, যা নজরুলের অমর রচনাগুলিকে শিশু ও তরুণদের কাছে আধুনিক রূপে পৌঁছে দেয়
‘ভারতবর্ষ’ – গানের বার্তা
‘ভারতবর্ষ’ শুধু একটি গান নয়, এটি ইতিহাস এবং প্রযুক্তির এক অসাধারণ মেলবন্ধন। এই গানে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার শব্দ, তাঁর আদর্শ এবং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আধুনিক সঙ্গীত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
গায়িকা মেখলা দাশগুপ্ত
এই গানটি শিশুদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে স্বাধীনতা, সাহস এবং সমতার মতো মূল্যবোধ কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং আজকের প্রজন্মের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
গায়িকা মেখলা দাশগুপ্ত বলেন, “এই গানে কবির সৃষ্টি এবং প্রযুক্তির এমন এক মিশ্রণ রয়েছে যা কাজী নজরুল ইসলামের রচনাগুলিকে আজকের শিশুদের কাছে নতুন এক আঙ্গিকে উপস্থাপন করে। আমরা এতে কবির একাধিক ছবি এবং ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত নানা দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করেছি,যাতে শ্রোতারা শুধু গানটি শুনেই না, বরং অনুভবও করতে পারেন।”
শিল্প ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ
গান তৈরির সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-র ব্যবহার শুধুমাত্র সঙ্গীতেই নয়, ভিজ্যুয়ালস (দৃশ্যচিত্র)-গ্রহন করা হয়েছে। কবির ছবিগুলিকে AI-র সাহায্যে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে দর্শকরা ভারতের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে নতুনভাবে অনুভব করতে পারেন।
এই প্রয়োগ দেখায়, প্রযুক্তির ব্যবহার কেবল আধুনিকতার প্রতীক নয়, বরং তা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমও হতে পারে।
গায়িকা মেখলা দাশগুপ্তের বিশ্বাস, কাজী নজরুল ইসলামের রচনাগুলিকে একটি গান বা একক পরিবেশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। তাঁর সাহিত্য ও সঙ্গীত এতটাই বিস্তৃত ও গভীর যে প্রতিটি প্রজন্ম সেখানে নতুন অর্থ খুঁজে পেতে পারে।
মেখলা বলেন,“এই গানের উদ্দেশ্য হলো নজরুলের রচনাগুলিকে আধুনিক সময়ের চাহিদা ও চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত করা,যাতে শিশু ও তরুণ প্রজন্ম অনুভব করতে পারে—এগুলি কেবল অতীতের সাহিত্য নয়,বরং তাদের জীবন ও অনুভূতির সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।”
নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণা
কাজী নজরুল ইসলামের রচনাগুলি আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে শেখায়। তাঁর গান ও কবিতায় প্রেম, সমতা ও বিদ্রোহের এক অসাধারণ মেলবন্ধন দেখা যায়।‘ভারতবর্ষ’ গানটি মনে করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা শুধু অতীতের কোনো ঘটনা নয়,বরং প্রতিটি যুগেই তাকে রক্ষা করা ও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা জরুরি।
এই গানের মাধ্যমে শিশুদের বোঝানো হয়েছে যে ভারত কেবল একটি ভূগোলিক সত্তা নয়,বরং একটি সাংস্কৃতিক চেতনা। আর এই চেতনাকে জীবিত রাখতে সাহিত্য ও সঙ্গীত-এর অবদানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের এই প্রথম AI-ভিত্তিক গান শুধু প্রযুক্তিগত অর্জন নয়,বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক দায়িত্বের প্রতীক।‘ভারতবর্ষ’ প্রমাণ করে যে, যখন শিল্প ও প্রযুক্তি একত্রিত হয়,তখন ফলাফল শুধু বিনোদন নয়, বরং নতুন চিন্তা ও প্রেরণাও সৃষ্টি করে।
কাজী নজরুল ইসলামের রচনাগুলি সময়ের সীমার বাইরে,আর মেখলা দাশগুপ্তের এই প্রয়াস আসন্ন প্রজন্মকে এই বার্তা দেয় বিদ্রোহী কবির কণ্ঠ আজও ঠিক ততটাই প্রাসঙ্গিক,যতটা একশো বছর আগে ছিল।
কৃষ্ণ কনহাইয়া এসো, মনে মোহন, মুরলি বাজাও।
কান্তি অনুপম, নীলপদ্মাসনে, সুন্দর রূপ দেখাও।
শোনাও সুমধুর নূপুর গুঞ্জন,
"রাধা, রাধা" বলে ঘুরে ঘুরে বনবন,
প্রেম-কুঞ্জে ফুলশয্যায়, মোহন রাস রচাও —
মোহন, মুরলি বাজাও।
রাধা নাম লেখা অঙ্গে অঙ্গে,
বৃন্দাবনে ঘুরো গোপী-সঙ্গে,
গলায় পরো বনফুলের মালা,
প্রেমের গান শোনাও, মোহন,মুরলি বাজাও।
জয়তু শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীকৃষ্ণ মুরারি,
শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী।
গোপাল, গোবিন্দ, মুখুন্দ, নারায়ণ,
পরমেশ্বর, প্রভু, বিশ্ববিহারী।।
সূর, নার, যোগী, ঋষিরা সেই নাম গায়,
সংসারের দুঃখ-শোক সব ভুলে যায়।
ব্রহ্মা-মহেশ্বরও আনন্দ পায়,
গান গায় অনন্ত গ্রহ-নভচারী।।
এই ধরাধামে জন্ম নিয়ে সকলেই আসে,
আমি রোদনরত প্রথম সেই নামটাই রেখেছি পাশে।
এই সংসার ছেড়ে যাবো একদিন,
কানে বাজবে সেই ভয়-হারী ত্রাণ নামের বারি।।
গোপাল, গোবিন্দ, মুখুন্দ, নারায়ণ,
পরমেশ্বর, প্রভু, বিশ্ববিহারী।।
জগজন মোহন সংকটহারী,
কৃষ্ণমুরারি, শ্রীকৃষ্ণমুরারি।
রাস রচান শ্যামবিহারী,
পরম যোগী, প্রভু, ভয়হরণকারী।।
গোপীজনের প্রিয়, বৃন্দাবনের ভয়হরণকারী,
পুরুষোত্তম প্রভু, গোলোকচারী।
বাঁশি বাজান, বনে বনে ঘুরেন,
ত্রিভুবনের রক্ষক, ভক্তের ভিখারি।।
রাধাকান্ত হরি, ময়ূরের পালকধারী,
কমলাপতি, জয় হোক গোপীমন হরণকারী।।
কাজী নজরুল ইসলাম এর শেষ যাত্রা
কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে ‘পিক্স রোগে’ আক্রান্ত হন। এই অসুস্থতার কারণে তিনি সাহিত্য কর্ম থেকে দূরে সরে যান। বাংলাদেশের সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি পরিবারসহ ঢাকায় আসেন। তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে ৭৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে দুর্গা ও কৃষ্ণকে লেখা তাঁর ভজনগুলো আজও গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে গাওয়া হয়।