মেদিনীপুরের বেড়বল্লভপুর সুফি চাঁদশা পীরের মাজার দেখভাল করছেন হিন্দু ভক্তরা!

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 4 h ago
মেদিনীপুরের বেড়বল্লভপুর সুফি চাঁদশা পীরের মাজার
মেদিনীপুরের বেড়বল্লভপুর সুফি চাঁদশা পীরের মাজার
 
শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরী, মেদিনীপুর

আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। ৫০ বছর ধরে মেদিনীপুরের বেড় বল্লভপুর সুফি চাঁদশা পীরের মাজার দেখাশুনা করছেন হিন্দু ভক্তরা। আর এরাই আগলে রেখেছেন সুফি চাঁদশা পীরের মাজার। দেখ ভালের পাশাপাশি পীরের মাজারটি সংস্কারের কাজও হিন্দু ভক্তরাই করেন। 
 
স্থানীয় মানুষদের মতে, সত্তরের দশকের আগে থেকে মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত বেড়বল্লভপুর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ভবঘুরের মতো থাকতেন সুফি চাঁদশা পীর। তিনি হিন্দুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সকলেই তাকে চাঁদশা বাবা নামে ডাকত। ১৯৮০ সালে ৮২ বছর বয়সেই মেদিনীপুর শহরেই মারা যান চাঁদসা পীর বাবা। তার শেষকৃত্যের কাজ অর্থাৎ দাফন করেন বেড় বল্লভপুর অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই। দারুন সমারহের সঙ্গে  তার দাফন সম্পন্ন হয়। তারপরই চাঁদশা পীরের সমাধিস্থল চাঁদশা বাবার মাজার নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
 
মাজারের বাইরের একটি দৃশ্য
 
বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সুফি চাঁদশা বাবার কাছে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়- এরকম কথা চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর  দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে সুফি চাঁদসা বাবার কথা। এরপর ধীরে ধীরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন চাঁদশা বাবা।
 
উল্লেখ্য, পীর বাবার মৃত্যুর পর চমথ সেতুয়া নামে এক হিন্দু ভক্ত (যিনি  কয়েক বছর আগে মারা গেছেন) ও তার পরিবারের উদ্যোগে চাঁদশা পীরের সমাধিস্থল রূপ নেয় চাঁদশা বাবার মাজারে। আর এই মুসলিম পীরের মাজার থেকে হিন্দুরাই শুরু করেন চাঁদশা বাবার ভক্তি, বাণী এবং মাহাত্ম্য প্রচার। ধীরে ধীরে সারা মেদিনীপুর শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চাঁদশা বাবার মাহাত্ম্য কথা। বর্তমানে মুসলিম অধ্যুষিত এই এলাকার মাজারে  পুণ্যার্থীদের ৮০ শতাংশই আসেন হিন্দুরা।
 
কেন এই মাজার এত জনপ্রিয়?
 
স্থানীয় মানুষজন বলছেন, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই আসে মাজারে বাবার আরাধনা করতে। জানা গেছে বাবার দরবারে মানত করে নাকি নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভ করেছেন, চাকরিপ্রার্থীরা পেয়েছেন চাকরি। আবার ব্যবসায়ীরা কোটিপতিও হয়েছেন। 
 
মাজারের ভিতরের একটি দৃশ্য
 
মাজার ঘিরে বাৎসরিক অনুষ্ঠানও হয়:
 
প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ  দিনে আয়োজন করা হয় মাজারের বাৎসরিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান ঘিরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম হয় এখানে। বাৎসরিক অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এখানে বিশেষ অনুষ্ঠানও হয়। সেই অনুষ্ঠানেও সব ধর্মের মানুষ এখানে আসেন বাবার আশীর্বাদ নিতে।
এই দিন মাজারে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন হয়। তাছাড়া এই দিন সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ভোজনের ব্যবস্থাও আছে। ঐদিন ২০০ থেকে ৪০০ মানুষকে খাওয়ানো হয় পোলাও,বেগুন ভাজা, সাদা ভাত, ডাল, তিন রকমের তরকারি ও পায়েসl হিন্দু-মুসলিম এই খাবার গ্রহণ করেন চাঁদশা বাবার প্রসাদ হিসাবে।
 
জেলার স্থানীয় কলম পত্রিকার সাংবাদিক জুলফিকার আলী বলেন, সেতুয়া পরিবার  দীর্ঘ বছর মাজার আগলে রেখেছে, এবং নিয়ম-কানুন মেনেই অনুষ্ঠান করে বাবার। কিন্তু মাজারটির রক্ষণাবেক্ষণ আর এলাকার মানুষ ঠিকমতো করতে পারছেন না। এলাকার মানুষ বলছেন আমরা চাই আমাদের মাজারের দিকে একটু নজর দিক প্রশাসনের কর্তারা। ভোট এলে নেতারা আসেন, বলেন সংস্কার করে দেব। কিন্তু ভোট চলে গেলে কিছুই হয় না।’
 
তা যাই হোক,চাঁদশা বাবার মাজার জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এক অনন্য নজির তৈরি করেছে মেদিনীপুরের বেড়বল্লভপুরে।