শতানন্দ ভট্টাচার্য
দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার সোনাই-র সাতকরাকান্দিতে প্রায় আড়াইশো বছর পুরনো একটি মসজিদ রয়েছে। রাজ্যে সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এই মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে এই ঐতিহাসিক যুগের সাক্ষী বহন করা মসজিদটিকে নতুন করে নির্মাণের জন্য পুরনো মসজিদটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পাকা করেছিল মসজিদ পরিচালন সমিতি ২০২০ সনে। এবং এজন্যে অস্থায়ী একটি ঘরও নির্মাণ করা হয়েছিল নামাজ পড়ার জন্যে। ঠিক সেইসময় অর্থাৎ ২০২১ সনের ৬ মার্চ অসম সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সঞ্চালকালয় থেকে কাছাড় জেলাশাসকের কাছে এই পুরনো মসজিদের তথ্য চেয়ে চিঠি আসে এবং এই মসজিদকে সংরক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
সাতকরাকান্দি পাকা বড় মসজিদের প্রাঙ্গণ
এরপর ২০২২ সনের ৮ জুলাই মসজিদটি বিভাগকে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা শুরু হয়। এই সরকারি সিদ্ধান্তের পরই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সমিতি। সমিতির সম্পাদক আইনুল হক লস্কর জানান যে এলাকার সবাই খুব খুশি সরকারি এই সিদ্ধান্তে। তবে সরকারি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতে সময় লাগলেও ঐতিহাসিক ওই মসজিদটি আগামী প্রজন্মগুলোর কাছে এক স্মরণীয় বিষয় হিসেবে থেকে যাবে।
জানা গেছে, প্রায় আড়াইশো বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাতকরাকান্দির এই ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদটির নাম সাতকরাকান্দি পাকা বড় মসজিদ। অতীতের স্থাপত্য শিল্পের মুন্সিয়ানা মসজিদটিতে এখনও বিরাজমান।
মসজিদের সম্মুখের অংশ
মসজিদটির ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে অবস্থান করছে সাতকরাকান্দি প্রথম খণ্ড আনুয়ার তীরে। প্রায় দেড় বিঘা জমির উপর ৪৮/২৬ ফিট জুড়ে রয়েছে মসজিদের ভবন। উপরে রয়েছে ৫ টি গম্বুজ। প্রায় ৩০ বছর আগে মসজিদের আটটি মিনার ভেঙে পড়েছে। মসজিদটির নির্মাণ শৈলী, কারুকার্য, মায়াবী রূপ এখনও মোহিত করে বৃহত্তর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের।
মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন জমিদার সোনা মিয়া চৌধুরী। তিনি তখনকার সময় খুবই ক্ষমতাশালী জমিদার ছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, আঠারো শতকের শেষে কিংবা উনিশ শতকের প্রথমার্ধে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদের মূল দরজার উপরে ১২ই মাঘ ১২৫৮ বাংলা স্পষ্ট করে লেখা থাকলেও গ্রামবাসীর মতে মসজিদটির বয়স আড়াইশো বছরের কাছাকাছি। লিখিত সাল, তারিখটি পরবর্তীতে সংস্কারের সময়ই লিখা হয়েছে।
মসজিদের ভেতরের অংশ
ঐতিহ্যের প্রতীক মসজিদটিতে এখনও নিয়মিত নমাজ আদায় করছেন মহল্লার মুসল্লি সহ সোনা মিয়া চৌধুরীর উত্তরসূরিরা। সোনা মিয়া চৌধুরী মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ওজুর ব্যবস্থা হিসাবে আনুয়ায় বিশাল ঘাট নির্মাণ করেন। সুবিশাল পরিসর নিয়ে আজও এই ঘাট স্থাপত্য শিল্পের ঐতিহ্যময় স্মারক হিসেবে মসজিদের সঙ্গে সাতকরাকান্দি আনুয়ারও শোভাবর্ধন করে আসছে। এই ঘাটে শুধু ওজু নয়, স্নান সহ প্রয়োজনীয় সব কাজই সারেন গ্রামের মানুষ। তাছাড়া উপরিভাগে বসে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। মুসল্লিরা তো বটেই, গ্রীষ্মের দুপুর কিংবা প্রতিদিনের বিকেল-রাতে সাধারণ মানুষও এসব আসনে এসে বসেন, সময় কাটান।
বরাক উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র শিলচর শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা এই ঐতিহাসিক মসজিদটি পর্যটকদের কাছেও একটি দর্শনীয় স্থান।