আজকের অসমে রেল,স্থল,জল আকাশ পথে গুয়াহাটিতে পৌঁছানোর সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু এক সময়ে অসমে নদী পথেই ছিল একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।স্বাধীনোত্বর অসমে পাণ্ডু বন্দর ছিল একমাত্র বহিঃ রাজ্যের সাথে সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যম। এই জল পথে মহাত্মা গান্ধী থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও অন্যান্য ব্যক্তিরা অসমে এসেছেন। ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ১৯৩০ সালে এই পাণ্ডু বন্দর ছিল বৃহৎ শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র। শরাইঘাট রেল ব্রীজ নির্মাণ হবার আগে অবধি পাণ্ডুতে জলপথই ছিল অসমের সাথে যোগাযোগের মুল চালিকা শক্তি। সেই বন্দরে কাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রমিকদের নিয়ে চলে পাণ্ডু পোর্টের নিত্যদিনের কাজ কর্ম ।দিনের কাজের শেষে তাঁদের পূজা ও আরাধনার প্রতি সচেতন ছিল বন্দর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ সরকারের আমলে ১৯৩০ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ । পান্ডুতে স্থাপিত করে "মজদুর পাণ্ডু পোর্ট শিব মন্দির"ও "মসজিদ ই রহমত" নামের এক শিব মন্দির ও একটি মসজিদ। ব্রিটিশ সরকারের সময়ে স্থাপিত এই মন্দির ও মসজিদ আজ অসমে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই মসজিদের ইমাম থেকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথায়, শান্তির সাথে দুই সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধি কামনায় তাঁদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই মসজিদ ও মন্দিরকে দিয়েছেন। আজ অবধি কোন বিষয়ে তাঁদের নিজেদের মত ভেদ হয়নি। আওয়াজ দ্যা ভয়েস কে মসজিদ ই রহমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোবর আলী জানান তাঁদের পূর্বপুরুষ থেকে এই দুই সম্প্রদায়ের সম-মিলনে পূজা ও ঈদের উদযাপন হয়ে আসছে।
অন্যদিকে গত ৪২বছরে শিব মন্দির পরিচালনা করে আসা যোগেন্দ্রর সিং জানান, পোর্ট কর্তৃপক্ষ এই মন্দির ও মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছিল। ফেরী ঘাটের এই মন্দির বা মসজিদকে ঘিরে কোনো ধরনের অসুবিধা হয়নি। সবাই তাঁদের ভগবানকে আরাধনা করবে নিজের মতে তাতে আপত্তি করার কিছুই নেই। তিনি জানান, মসজিদে আজান বা নামাজ আদায় করার সময় আমরা ইচ্ছা করেই মন্দিরে ঘণ্টা বাজানো বা পূজা পাঠ বন্ধ করি। অন্যদিকে এলাকার এক বাসিন্দা যিনি বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই এই মন্দিরের পাশে থাকা ও মসজিদ রয়েছে কিন্তু তাতে কোনো আপত্তি বা অসুবিধা হয়নি। মীরা সিং তাঁদের এই সহবস্থান আগামী দিনে অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে আশাব্যক্ত করেন।
শিব মন্দির
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নির্বাচনী এলাকায় পাণ্ডুর চার নং ওয়ার্ডে পোর্টের গা ঘেঁসে রয়েছে এই মন্দির ও মসজিদ। এই মন্দির ও মসজিদের সহবস্থান ধর্মীয় আবেগ অনুভূতিকে দুই সম্প্রদায়ের আস্থা - বিশ্বাসের ও মহামিলনের গভীরে নিয়ে গেছে। ঈদ কিংবা শিব রাত্রি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়ের আদান প্রদানের মাধ্যমে এক অনন্য দৃষ্টান্ত যা মাইল ফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ১৯৩০থেকে ২০২৫ সালের এই অমৃত কালে দুই সম্প্রদায়ের সুমধুর সম্পর্ক সত্যি মনে করিয়ে দেয় কবির ভাষায়, "বিভেদের মাঝে দেখো মিলন মহান।"