কলকাতা পুলিশের এল.এস.আই. মুরসিদা খাতুনের সক্রিয়তায় নাবালিকা নির্যাতন মামলায় দোষী সচিন সিংয়ের আজীবন কারাদণ্ড

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 1 d ago
তদন্তকারী অফিসার মুচিপাড়া থানার এল.এস.আই. মুরসিদা খাতুন ও  নাবালিকা নির্যাতন মামলায় দোষী সচিন সিং
তদন্তকারী অফিসার মুচিপাড়া থানার এল.এস.আই. মুরসিদা খাতুন ও নাবালিকা নির্যাতন মামলায় দোষী সচিন সিং
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

নাবালিকা কিশোরীর উপর দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত সচিন সিং-কে দোষী সাব্যস্ত করেছে কলকাতার এক্সক্লুসিভ পকসো (POCSO) আদালত। বুধবার আদালতের মাননীয় বিচারক সচিন সিং-কে আজীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সমাজে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ রুখতে কঠোর শাস্তি প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ একই ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়।

এই মামলার সূচনা হয় ২০২৩ সালের ২২ মে, যখন মুচিপাড়া থানায় কেস নং ৭৯/২০২৩ হিসেবে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ ছিল যে, অভিযুক্ত সচিন সিং দীর্ঘদিন ধরে এক নাবালিকা কিশোরীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন।
 
প্রতীকী ছবি
 
ঘটনার পর পুলিশ পকসো আইন, ২০১২-এর ধারা ৪ অনুযায়ী মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। মামলার তদন্তভার পড়ে এল.এস.আই. মুরসিদা খাতুনের উপর, যিনি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট, সাক্ষ্য ও ফরেনসিক প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হলে অভিযোগের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
 
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত প্রথমে অপরাধ অস্বীকার করলেও আদালতে একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হয়। বিচার চলাকালীন ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দিও মামলার গুরুত্ব বাড়ায়। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরের বিচারিক প্রক্রিয়ার পর অবশেষে আদালত আজ রায় ঘোষণা করে। বিচারকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এক নাবালিকার প্রতি এমন নির্মম ও অমানবিক আচরণ সমাজের মূল্যবোধে গভীর আঘাত হানে এবং এমন অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা জরুরি।
 
প্রতীকী ছবি
 
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত তদন্তকারী অফিসার মুরসিদা খাতুন বলেন, “এই মামলায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সাহস এবং সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হত না।” আইনজীবী মহলে এই রায়কে শিশু সুরক্ষা আইনের প্রয়োগে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালতের এই রায় পকসো আইনের কার্যকারিতা আরও জোরদার করবে এবং সমাজে একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, শিশুদের উপর যে কোনো ধরনের নির্যাতনের ক্ষেত্রে শাস্তি অবশ্যম্ভাবী।
 
অপরাধীর সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আদালত নির্দেশ দেয়, জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগীর পুনর্বাসন ও মানসিক সহায়তার কাজে ব্যয় করা হবে। সচিন সিং সাজা শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি, তবে তাঁর আইনজীবী জানান, তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
 
প্রতীকী ছবি
 
এই রায়ে একদিকে যেমন ভুক্তভোগী পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, অন্যদিকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে শিশু সুরক্ষার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই রায় শুধু এক ব্যক্তির সাজা নয়, বরং সমাজে একটি প্রতীকী বার্তা, যে কোনো নাবালিকার প্রতি যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে আইনের চোখে কোনো ছাড় নেই।
 
এই মামলার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, সাহসিকতা, প্রমাণনির্ভর তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আদালতের নিষ্ঠা, এই তিনটি উপাদান মিলেই নির্যাতনের শিকারদের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি দেয়।