শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
ভারতের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে নয়া অধ্যায় যোগ হয়েছে—বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (BSF) এয়ার উইংয়ের প্রথম মহিলা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ইন্সপেক্টর ভাবনা চৌধুরীর নাম থেকে গেল রেকর্ডে।
হরিয়ানার রেওয়ারি জেলার অধিবাসী ভাবনা ছোটবেলা থেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতেন; স্কুলজীবনে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি বিষয়েই তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরে তিনি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে বিএসএফে যোগ দেন। সীমান্ত রক্ষার কঠোর দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে তার নিষ্ঠা, দক্ষতা ও অধ্যবসায় ভিন্ন মাত্রায় পরিণত হয়—ফলে তিনি আজ সেই অবস্থানে পৌঁছেছেন, যেখানে পূর্বে কোনও নারী যাননি।
২০২৫ সালের আগস্টে বিএসএফ নিজস্ব ইন-হাউস ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করলে ভাবনা ছিলেন প্রথম ব্যাচের একজন প্রাইমারি সদস্য। ওই প্রোগ্রামে তিনি মোট ১৩০ ঘণ্টার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন; প্রশিক্ষণের মধ্যে ছিল বিমানযন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ, উড্ডয়ন নিরাপত্তা প্রোটোকল, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং বাস্তব উড্ডয়ন অনুশীলন।
প্রশিক্ষণের সময়ে তিনি Mi-17 হেলিকপ্টার ফ্লিটের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে কাজ করেন এবং পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশে উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে অনুশীলন ও বাস্তব অপারেশনে পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন করার পর ১২ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বিএসএফের মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধরী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে “ফ্লাইং ব্যাজ (Flying Brevet)” তুলে দেন—একটি সম্মান যা বিমান পরিচালনায় সরাসরি যুক্ত কর্মীদের পরিচয় ও স্বীকৃতি বহন করে।
সেই মুহূর্তে ভাবনা বলেন, “আমি আমার ইউনিফর্মের গর্ব বুকে ধারণ করি। আজ আমি শুধু একজন অফিসার নই, প্রতিটি মেয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছি যে বিশ্বাস করে—স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি তুমি তাকে তাড়া করতে পারো।” প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভাবনার এই সাফল্য কেবল বিএসএফের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে না, বরং ভবিষ্যতে আরও মহিলা টেকনিক্যাল অফিসার, পাইলট ও মিশন কমান্ডার তৈরির পথ সুগম করবে।
তার পরিবার ও গ্রামের মানুষও গর্বিত; মা জানিয়েছেন, “ছোটবেলায় খেলনা প্লেন নিয়ে ঘর ভরিয়ে রাখত ও। আজ সত্যিই সে উড়ছে—দেশের হয়ে, দেশের গর্ব হয়ে।” গ্রামের মানুষ এখন স্নেহভরে তাঁকে ‘আকাশের মেয়ে ভাবনা’ নামে ডাকে। ইন্সপেক্টর ভাবনা চৌধুরীর অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি দেশের নারীর অদম্য অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতার প্রতীক; যখন তাঁর হেলিকপ্টার বিএসএফ এয়ার উইংয়ের আকাশে উড়বে, তা হয়ে থাকবে সেই ভারতের প্রতীক, যেখানে নারী আর শুধু স্বপ্ন দেখে না—নিজের স্থান আকাশে জিতে নেয়।