চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে তোড়জোড়, ১লা নভেম্বর দশমীতে হবে ঐতিহ্যবাহী মিছিল

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 11 h ago
চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে তোড়জোড়, ১লা নভেম্বর দশমীতে হবে ঐতিহ্যবাহী মিছিল
চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে তোড়জোড়, ১লা নভেম্বর দশমীতে হবে ঐতিহ্যবাহী মিছিল

শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ 

সপ্তমী নিশি থেকেই শুরু শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। চন্দননগরের রাস্তাঘাটে এখন এক অন্যরকম ব্যস্ততা। বাঁশ বাঁধা, লাইট বসানো, থিম তৈরি, ট্রাকে কাঠামো সাজানো— সর্বত্র চলছে  তোড়জোড়। সারারাত ধরে চলছে শোভাযাত্রার গাড়িগুলিকে সাজিয়ে তোলার প্রস্তুতি। কোথাও পৌরাণিক কাহিনির প্রতিফলন, কোথাও বা আধুনিক সমাজের চিত্র। প্রতিটি গাড়ির পেছনেই আছে আলাদা থিম, আলাদা বার্তা। একদিকে দেবী আরাধনার প্রস্তুতি, অন্যদিকে শহরজুড়ে শোভাযাত্রার সাজসজ্জা— এই দুই মিলিয়েই এখন উৎসবের রঙে রঙিন চন্দননগর।
 
প্রসঙ্গত, শোভাযাত্রায় অংশ নেবে মোট ৭০টি পুজো কমিটি, যারা নিজ নিজ প্রতিমা, থিম এবং আলোকসজ্জা নিয়ে রাস্তায় নামবে দশমীর রাতে। 

জগদ্ধাত্রী পুজোর মূল আরাধনা নবমীতে হলেও, ষষ্ঠীর দিন থেকেই দেবীদর্শনের ভিড় জমতে থাকে সর্বত্র। সেই সঙ্গে শুভযাত্রার প্রস্তুতিও তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। সপ্তমী নিশি থেকেই বিভিন্ন মন্ডপের সামনে রাস্তার ধারে ধারে চোখে পড়ল শোভাযাত্রার গাড়ি যেগুলোকে বাসবে যে তরুণ তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো তৈরি করে অথবা আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।
 
একদিকে যখন শহরে মানুষ পুজো দেখতে ব্যস্ত অন্যদিকে তখন আলোর কারিগররা শোভাযাত্রার গাড়ি সাজাতে নতুন নতুন ক্রিম নিয়ে কাজে মগ্ন।  চন্দননগরে দশমীর দিনেই হয় ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রা। চলতি বছরে  ১লা নভেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে এই মহামিছিল।

চন্দননগরের আলোকসজ্জা দেখতে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। শহরের রাস্তা, তোরণ, ঘাট— সর্বত্র রঙিন আলোর জাল বোনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ জানিয়েছেন, “এ বছর প্যান্ডেল, প্রতিমা ও আলোকসজ্জায় রয়েছে বিশেষ চমক। দর্শনার্থীরা এক নতুন অভিজ্ঞতা পাবেন।”

চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির চেয়ারম্যান নিমাইচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, এ বছর আগের তুলনায় পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ১৭৭টি পুজো কমিটি ছিল কমিটির অধীনে, আর এ বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০। এর মধ্যে ১৩৩টি চন্দননগর থানা এলাকায় এবং ৪৭টি ভদ্রেশ্বর থানা এলাকায়।

চন্দননগরের ঐতিহ্য মেনে এ বছরও শোভাযাত্রায় কোনও বাজি ব্যবহার করা হবে না, থাকবে না ডিজে বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড সিস্টেম। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিমার রঙে সীসা জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি লরির চালকের সোজাসুজি ও দু’পাশের জানালা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হচ্ছে নজরদারি ক্যামেরা, থাকবে পুলিশের কড়া নজর।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়— এটি এক শহরের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গৌরবের প্রতীক। ফরাসি উপনিবেশের এই শহর আলোকসজ্জা ও শিল্পভাবনার এক অনন্য মেলবন্ধন তৈরি করে প্রতিবছর।

একদিকে শঙ্খধ্বনি ও ঢাকের আওয়াজে মুখরিত শহর, অন্যদিকে রঙিন আলোর মালায় মোড়া রাস্তাঘাট— ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চন্দননগর যেন এক আলোর নগরীতে পরিণত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, “শোভাযাত্রার রাতে গোটা শহর যেন আলোয় ভেসে যায়। এটা শুধু পুজো নয়, এটা আমাদের গর্বের উৎসব।”

আসন্ন ১লা নভেম্বরের শোভাযাত্রা ঘিরে তাই এখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে চন্দননগর। দেবীর আরাধনা, আলোর সমারোহ, শিল্পের প্রদর্শন আর শহরের আবেগ— এই চারেই মিশে রয়েছে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী উৎসবের অমলিন ঐতিহ্য। জগদ্ধাত্রী পুজোর এই শোভাযাত্রা চন্দননগরবাসীর গর্বের শোভাযাত্রা ।