পাটনা
বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে উৎসবের আবহে। মোট ১৮টি জেলার ১২১টি আসনে প্রায় ৬৪.৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা গত দুই দশকে অন্যতম সর্বোচ্চ। রাজ্যের রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে এই অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ ভোটদানের হার।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ভোট পড়েছিল ৫৭.২৯ শতাংশ, আর ২০০০ সালে ৬২.৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৫ বছর পর বিহারে ভোটারদের এমন উচ্ছ্বাস দেখা গেল। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই প্রবণতা রাজ্যের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে।
রাজ্যে ভোটদানের জন্য সম্মিলিত ভোটারদের একটি ছবি (ফাইল)
বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দুই দশক পূর্তির পথে। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা জুড়ে বিহারের রাজনীতি প্রায় তার চারপাশেই আবর্তিত হয়েছে। জোট পরিবর্তন, রাজনৈতিক রদবদল, বিরোধী চাপ, সব কিছুর মাঝেও নীতীশই থেকেছেন কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু এবার ভোটের প্যাটার্ন অন্য গল্প বলছে। প্রশ্ন উঠছে, জনতা কি এবার পরিবর্তনের সুর তুলতে চলেছে, নাকি স্থিতিশীলতার পক্ষে রায় দেবে?
ইতিহাস বলছে, ২০০০ সালে যখন ভোটের হার ছিল সর্বোচ্চ, তখন আরজেডি বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছিল। বিজেপি–জেডিইউ তখনও একজোট হয়ে লড়েছিল, এবং কংগ্রেস ও অন্যদের সমর্থনে রাবড়ি দেবীর সরকার গঠিত হয়। সেই সরকার টিকে ছিল ২০০৫ পর্যন্ত। এরপরের নির্বাচনেই ৪৬ শতাংশ ভোটদানের মধ্য দিয়ে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ প্রথমবার পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। শুরু হয় “সুশাসন বাবু” যুগ।
বিগত কয়েক বছরের সর্বোচ্চ ভোটের হাড়ের একটি লিস্ট (ফাইল)
বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি আকর্ষণীয় দিক হলো, এখানে সামান্য কয়েক শতাংশ ভোটের ওঠানামাই সরকার বদলের কারণ হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, আগে বাড়তি ভোটদান মানে ছিল শাসকবিরোধী রায়ের ইঙ্গিত, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই সমীকরণ বদলেছে। বিহারের ১১টি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৫ বার বেশি ভোট পড়লে বর্তমান সরকারই পুনর্নির্বাচিত হয়েছে, আর ভোট কমলে দুইবার ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে।
২০২৫ সালের এই নির্বাচন তাই আগের ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। দুই দশক আগে যেমন ৪৬ শতাংশ ভোটে রাজ্যের রাজনীতি উল্টে গিয়েছিল, এবার তার বিপরীতে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোটে আবার নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে গেল।
রাজ্যে ভোটদানের জন্য সম্মিলিত ভোটারদের একটি ছবি (ফাইল)
এখন দেখার বিষয়, এই উচ্ছ্বসিত ভোটার অংশগ্রহণের ঢেউ বিহারে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে কি না, নাকি “সুশাসন” যুগই আবারও নতুন আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে।