শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
এবারও অন্যথা হয়নি! গত ২৩২ বছর ধরে চলে আসা রীতি এবারও একই ভাবে পালিত হল ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজা মণ্ডপে। আজ শনিবার পরনে লাল-ডুরে শাড়ি, কপালে সিঁদুরের টিপ, মাথায় ঘোমটা, গলায় একগাছা হার, হাতে চুরি পড়ে মাকে বরণ করতে তৈরি তেঁতুলতলা বারোয়ারির সতেরো জন পুরুষ সদস্য। এমন সাজে মায়ের বরণ করছেন কিছু পুরুষ—হ্যাঁ, পুরুষরাই! দশমীর দিন ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা জগদ্ধাত্রী পুজোয় এই অনন্য দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও। নিয়মমাফিক বরণের সমস্ত আয়োজন থাকলেও, মহিলাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে—বরং তাঁদের ভূমিকায় পুরুষরা, সম্পূর্ণ স্ত্রীর বেশে।
এই অনন্য রীতি চলে আসছে টানা ২৩৩ বছর ধরে। তেঁতুলতলা বারোয়ারি পুজোয় মোট ১৭ জন পুরুষ আছেন, যাঁরা সিঁদুর পরানো থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন —সব দায়িত্ব পালন করেন বিবাহিত নারীর বেশে। রীতিনীতি শেষ হলে আবার আনন্দ, সেলফি, হাসি-মজায় মাতেন তাঁরা।
জনশ্রুতি, ব্রিটিশ আমলে ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি অঞ্চলে ফরাসি ও ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল। নিরাপত্তার কারণে মহিলাদের বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু পুজো চলবে কীভাবে? তখনই এলাকার পুরুষেরা মহিলাদের সাজে পুজোর দায়িত্ব নেন। সেই থেকেই শুরু এই রীতি, যা আজও অপরিবর্তিত।
উল্লেখ্য, এই পুজোর সূচনাতেও রয়েছে ইতিহাস। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুর ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটিতে থাকতেন। তাঁর উদ্যোগেই রাজানুমোদিত হয়ে দুই কন্যাকে নিয়ে তিনি বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। পরে সেই পারিবারিক পুজো বারোয়ারি রূপ নেয়, যা আজও তেঁতুলতলার গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক।