প্রথম দফার ভোটে বিহারের নতুন দিক: তরুণ ভোটার, বড় লড়াই, বড় বার্তা

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 1 d ago
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
 
আওয়াজ দ্যা ভয়েস / নয়াদিল্লি / পাটনা

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার ভোটগ্রহণ আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা রাজ্যের রাজনীতি, তারকা প্রার্থিতা এবং ‘বাহুবলীদের’ ভাগ্য নির্ধারণের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে। এই দিনে বহু নামী রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রিয় শিল্পী ও বিতর্কিত প্রার্থীর ভবিষ্যৎ ইভিএমের বোতামে বন্দি হবে। রাজ্যের প্রায় ৩.৭৫ কোটি ভোটার ১,৩১৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। উৎসবের আবহে ভোটকেন্দ্রগুলিতে সকাল থেকেই ভোটারদের উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, আর পুরো রাজ্য এখন নির্বাচনী উত্তেজনায় সরগরম।
 
আজকের এই ভোট শুধু প্রার্থীদের ভবিষ্যতই নির্ধারণ করবে না, বরং বিহারের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাও স্পষ্ট করবে। সবার দৃষ্টি এখন ইন্ডিয়া জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব এবং বিজেপির উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীর মতো শীর্ষ নেতাদের দিকে।
 
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকজন প্রার্থী
 
ক্ষমতা ও বিরোধীপক্ষের দিগ্গজদের অগ্নিপরীক্ষা
 
এই দফার সবচেয়ে আলোচিত আসন রাঘোপুর, যেখানে রাজদ নেতা তেজস্বী যাদব টানা তৃতীয়বার জয়ের হ্যাটট্রিক গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ময়দানে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সতীশ কুমার, যিনি ২০১০ সালে জেডিইউ প্রার্থী হিসেবে তেজস্বীর মা রাবড়ি দেবীকে পরাজিত করেছিলেন।
 
যদিও এই আসনে জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোরের প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল, কিন্তু তাঁর মাঠ ছাড়ার পর দলটি চঞ্চল সিংহকে প্রার্থী করেছে। অন্যদিকে, নিকটবর্তী মহুয়া আসনে লালু প্রসাদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদব (নিজের দল জনশক্তি জনতা দলের পক্ষে) বহুমুখী লড়াইয়ে ব্যস্ত। তাঁর লক্ষ্য বর্তমান রাজদ বিধায়ক মুকেশ রৌশনকে পরাজিত করা। এই আসনে লজপা (রাম বিলাস) প্রার্থী সঞ্জয় সিং ও ২০২০ সালের নির্দল প্রার্থী আশমা পারভীনের উপস্থিতি লড়াইকে আরও জটিল করে তুলেছে।
 
প্রতীকী ছবি
 
প্রথম দফায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজনের রাজনৈতিক ভবিষ্যতও ঝুঁকির মুখে, যার মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় কুমার সিংহ উল্লেখযোগ্য। লখীসারাই আসনে বিজেপির বিজয় কুমার সিংহ টানা চতুর্থবার জয়ের আশা করছেন, অন্যদিকে প্রাক্তন বিধান পরিষদ সদস্য সম্রাট চৌধুরী প্রায় এক দশক পর তারাপুর থেকে সরাসরি নির্বাচনে নেমেছেন।
 
তাঁর জয় বিজেপিতে তাঁর দ্রুত উত্থানকে আরও দৃঢ় করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁকে রাজদ প্রার্থী অরুণ কুমার সাহ কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এছাড়াও, মন্ত্রী ও বিজেপির প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে প্রথমবার সিওয়ান থেকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছেন, যেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদ নেতা ও প্রাক্তন বিধানসভা স্পিকার अवध বিহারী চৌধুরী।
 
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে  প্রার্থী তেজস্বী যাদব
 
বাহুবলি ও সেলিব্রিটিদের উপস্থিতি
 
এই দফায় কয়েকটি আসন বিতর্কিত পটভূমির প্রার্থী এবং সেলিব্রিটি রাজনীতিকদের কারণে আলোচনায়। রঘুনাথপুর আসনে প্রয়াত গ্যাংস্টার-নেতা মো. শাহাবুদ্দিনের ছেলে ওসামা শাহাবের প্রার্থিতা নজর কেড়েছে। এনডিএ তাঁর প্রার্থিতাকে ‘জঙ্গল রাজের প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে বড় রাজনৈতিক ইস্যু করেছে।
 
অন্যদিকে, মোখামা আসনের লড়াই সবচেয়ে আকর্ষণীয়, যেখানে জেডিইউ নেতা অনন্ত সিং (একটি হত্যাকাণ্ড মামলায় বর্তমানে কারাগারে) রাজদ প্রার্থী বীণা দেবীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বীণা দেবীর স্বামী গ্যাংস্টার সুরজ ভান। মোখামায় অনন্ত সিংয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সবার নজর রয়েছে।
 
প্রার্থী ভোজপুরি সুপারস্টার খেসারী লাল যাদব ও লোকগায়িকা মৈথিলী ঠাকুর
 
বিনোদন জগত থেকে রাজনীতিতে আসা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন তরুণ লোকগায়িকা মৈথিলী ঠাকুর (বিজেপি - আলীগঞ্জ), ভোজপুরি সুপারস্টার খেসারী লাল যাদব (রাজদ - ছপরা) এবং রিতেশ পাণ্ডে (জন সুরাজ পার্টি - করগহর)। তাঁদের নির্বাচনী পারফরম্যান্সে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এই দফায় প্রায় এক ডজন মন্ত্রী, যাদের অধিকাংশ বিজেপির, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
 
ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের পরিসংখ্যান
 
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় ১২১টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। রাজধানী পাটনার পশ্চিমাঞ্চলের দিঘা আসনে সর্বাধিক প্রায় ৪.৫৮ লাখ ভোটার রয়েছেন, আর শেখপুরা জেলার বরবিঘা আসনে সর্বনিম্ন ২.৩২ লাখ ভোটার। প্রার্থীর সংখ্যার দিক থেকে কুঢ়নি ও মুজফ্ফরপুরে সর্বাধিক ২০ জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
 
প্রতীকী ছবি
 
এই দফার জন্য মোট ৪৫,৩৪১টি ভোটকেন্দ্র তৈরি হয়েছে, যার বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত। ১২১টি নির্বাচনী এলাকার ৩.৭৫ কোটি ভোটারের মধ্যে ১০.৭২ লাখ “নতুন ভোটার”, যা বিহারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির প্রতিফলন।
 
নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) করেছে, যার পর রাজ্যে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭.২৪ কোটি। আজকের ভোট সেই সব পরিসংখ্যানকে নির্বাচনী ফলাফলে রূপান্তরিত করার প্রথম ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করবে।