কাশ্মীরের সুস্বাদু আপেলের সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু,মাত্র ১০ শতাংশ শস্য নষ্ট হয়েছে

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 4 d ago
কাশ্মীরের সুস্বাদু আপেলের সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু,মাত্র ১০ শতাংশ শস্য নষ্ট হয়েছে
কাশ্মীরের সুস্বাদু আপেলের সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু,মাত্র ১০ শতাংশ শস্য নষ্ট হয়েছে
 
এহসান ফাজিলি / বান্দিপোরা

উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরার সরকারি কর্মচারী নজির আহমেদ এখন বেশ ব্যস্ত। কারণ,তার চাকরির পাশাপাশি বান্দিপোরায় নিজের পূর্বপুরুষদের বাগানে আপেল  সংগ্রহ এবং প্যাকিংয়ের তদারকি করতেও হচ্ছে। তার ফলের বাগানে সাজানো রয়েছে সুস্বাদু আপেলসহ বিভিন্ন প্রকার ফলের স্থানীয় জাত।

অক্টোবর মাসে সাধারণত দিনের বেলা গরম থাকে, আর সকালে হালকা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। এমন সময় তার বাগানে থাকা আপেলের সুস্বাদু জাতগুলো পেকে উঠেছে এবং ছেঁড়ার জন্য প্রস্তুত। শ্রমিকরা সতর্কতার সঙ্গে গাঢ় ডালের থেকে লাল, রসালো আপেল পারতে শুরু করেছে।

গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলার পর আপেলগুলো আকার ও গুণগত মান অনুযায়ী বাছাই করা হয়। তারপর কাঠের বাক্সে ভরে দিল্লির আজাদপুর মণ্ডিতে ট্রাকের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কাজের সময় অধিকাংশ স্থানীয় শ্রমিক গরম কাপড় ও উলনের পোশাক পরিধান করে। নজির আহমেদের মতো আপেল চাষিদের জন্য এটি বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। দীপাবলি উৎসবের আগে তারা আপেল বাজারে পাঠাতে তৎপর থাকেন।
 

আপেলগুলো প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে

উল্লেখ্য,নজিরের কাকাকে ৬০ বছর আগে এই বাগানে প্রথম আপেল গাছ রোপণ করেছিলেন। তার বাবা পরে এই বাগানটি পাঁচ একর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছিলেন। নজির স্মরণ করেন, যুবক অবস্থায়ও এই ঋতুটি সবসময় এক বিশেষ শক্তি এনে দিত। দীপাবলি ও দশেরার আগে দিল্লি এবং অন্যান্য শহরে আপেল পাঠানোর জন্য সবাই দ্রুততর কাজ করত।

গত ২০ বছর ধরে নজির সব কাজ পরিচালনা করছেন। গাছপালা রোপণ ও পরিচর্যা থেকে শুরু করে আপেল বিক্রির সব কাজেই তিনি ব্যস্ত থাকেন। তবে এই ব্যবসায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, ভারী বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি, এবং ফলের রোগ প্রায়ই কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। পথের খারাপ অবস্থাও বড় সমস্যার সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি, কাশ্মীর থেকে ভারতের বাকী অংশে সংযোগকারী প্রধান মহাসড়ক NH-44-এ ভূমিস্খলনের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত হাজার হাজার আপেল ভর্তি ট্রাক প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আটকে ছিল। ট্রাকের ভিতরে অনেক আপেল পচে গিয়েছিল।
 

বাগান থেকে তোলা হয়েছে কাশ্মীরের সুস্বাদু আপেল

"আমরা ভাবেছিলাম যে রাস্তা শীঘ্রই খোলা হবে, কিন্তু এর জন্য প্রায় ২০ দিন লেগেছে," শ্রীনগরের ফল মণ্ডির অধ্যক্ষ বজির আহমেদ বলেন। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ নষ্ট হওয়া ফল ছিল গালা জাতের, যা উচ্চ ঘনত্ব (এইচডি) কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদিত। "শুধু ট্রাকে থাকা আপেল নয়, বাড়িতে সংরক্ষিত অনেক ফলমূল এবং শীতল ভাণ্ডারও ধ্বংস হয়েছে," তিনি জানান। এই মহাসড়ক অবরোধ কৃষক, ব্যবসায়ী এবং আগেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখা ক্রেতাদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়েছে।

কাশ্মীরে প্রতি বছর প্রায় ২০-২২ লাখ মেট্রিক টন আপেল উৎপাদিত হয় এবং এই বছর ২৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা করা হয়েছিল। প্রবল বর্ষণ ও রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ১০ শতাংশ গালা আপেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাশ্মীরের আপেল বাগানগুলো প্রায় ১.৭২ লাখ হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে, যেখানে ভারতের মোট আপেলের প্রায় ৭৮ শতাংশ উৎপাদিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মধ্যে ১,০০০ থেকে ৩,০০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ঘনত্বের গালা জাতের আপেল চাষ হয়।