ঝাড়খণ্ডের ১০জন সমাজ পরিবর্তনসাধকরা

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 6 h ago
ঝাড়খণ্ডের ১০জন সমাজ পরিবর্তনসাধকরা
ঝাড়খণ্ডের ১০জন সমাজ পরিবর্তনসাধকরা
 
আওয়াজ দ্যা ভয়েস ব্যুরো 

ঝাড়খণ্ড ভারতের নবীনতম রাজ্যগুলির একটি, যা পূর্ব ভারতে অবস্থিত এবং "আদিবাসীভূমি" হিসেবেও পরিচিত। রাজ্য গঠনের পর থেকেই ঝাড়খণ্ড উন্নতির পথে এগিয়েছে, যদিও প্রাথমিক সময়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জের সময়েই কিছু মানুষ সমাজের কল্যাণে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।
 
আওয়াজ–দ্য ভয়েস আপনাদের সামনে তুলে ধরছে ভারতের নানা প্রান্তের এমন কিছু অজানা, অথচ অনন্য ব্যক্তিত্বের গল্প। এখানে থাকছে ঝাড়খণ্ডের দশজন বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিত্বের কাহিনি, যাঁরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছেন এবং রাজ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
 
ড. সাজিদ হুসেন
 
ড. সাজিদ হুসেন তাঁর উজ্জ্বল গবেষণামূলক পেশা ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র রামগড় জেলার চিতরপুর গ্রামের শিশুদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষামূলক প্রকল্প ‘স্কুলোজিয়াম’ (Schoologium) আজ সারা ভারতের শিক্ষার ধরণ বদলে দিচ্ছে। সাজিদের ভাষায়, “যেমন শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম দরকার, তেমনই মস্তিষ্ককেও সক্রিয় রাখতে নিয়মিত ব্যবহার দরকার।” স্কুলোজিয়ামে শিশুরা শুধুমাত্র বই পড়ে না, তারা স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখে। এটি এমন এক শিক্ষাপদ্ধতি যেখানে কল্পনা ও বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের শিক্ষাদর্শের সঙ্গে যার গভীর মিল রয়েছে।
 
ড. সাজিদ হুসেন
 
ড. সাজিদ হুসেন একসময় ন্যাশনাল এরোস্পেস ল্যাবরেটরিজ (NAL)-এর বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝেছিলেন, গ্রামীণ শিশুরা বুদ্ধিতে পিছিয়ে নয়, পিছিয়ে আছে শুধু মানসম্মত শিক্ষাসামগ্রীর অভাবে। এই বৈষম্য দূর করার সংকল্পে তিনি ২০১২ সালে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং ফিরে আসেন নিজের গ্রামে। সেখানেই জন্ম নেয় ‘স্কুলোজিয়াম’, যার নামের মধ্যেই রয়েছে “school” ও “gymnasium”-এর সংমিশ্রণ, অর্থাৎ এক এমন জায়গা, যেখানে মন ও মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয় শিক্ষার মাধ্যমে।
 
সত্তার খলিফা (পেইন্টার জিলানি)
 
সত্তার খলিফা, যিনি ‘পেইন্টার জিলানি’ নামে বেশি পরিচিত, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া ঝাড়খণ্ডের পলামু অঞ্চলের মানুষদের জীবনে আশার আলো জ্বেলেছেন। কলেজ জীবনে জিলানির স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করা। পেশায় তিনি একজন চিত্রশিল্পী, কিন্তু তাঁর রঙ-তুলি শুধু শিল্পের জন্য নয়, মানবসেবার জন্যও। নিজের উপার্জনের প্রায় সবটাই তিনি ব্যয় করেন দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণে। তাঁর মতে, “শিল্প আমার হাতিয়ার, সেবা আমার উদ্দেশ্য।”
 
সত্তার খলিফা
 
নকশাল আন্দোলনের তীব্র সময়েও তিনি বিশ্রামপুর থেকে ডালটনগঞ্জ পর্যন্ত,  নকশাল প্রভাবিত এলাকা পেরিয়ে,  নির্ভয়ে যাতায়াত করেছেন, মানুষের পাশে থাকতে। পলামু ও গড়ওয়া জেলার দরিদ্র, দলিত, মহাদলিত এবং প্রান্তিক মানুষের কাছে জিলানি আজ এক আশ্বাসের প্রতীক। রেশন কার্ড, পেনশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, হাসপাতালের চিকিৎসা সহায়তা, সব ক্ষেত্রেই তিনি সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন।
 
মোহাম্মদ মিনহাজ
 
মোহাম্মদ মিনহাজের শান্ত মুখচ্ছবির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অদম্য আগুন, যা তাঁকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সমাজসেবায় নিবেদিত করেছে। রাঁচির বস্তি এলাকায় অসংখ্য মানুষের জীবনে তিনি পরিবর্তন এনেছেন। তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টায় বস্তিবাসীরা আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক অধিকার পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
 
মোহাম্মদ মিনহাজ
 
তাঁর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালে। সেই সময় রাঁচি দ্রুত বিকশিত হচ্ছিল, কিন্তু শহরের বস্তিগুলি তখনও অবহেলার অন্ধকারে ঢাকা। দিনমজুর, রিকশাচালক ও শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিনের আহার জোগাড় করতেই সংগ্রাম করছিলেন। তাঁদের কাছে শিক্ষা ছিল এক স্বপ্নমাত্র। সেই সময়ই মিনহাজ সিদ্ধান্ত নেন, এই বাস্তবতা বদলাতেই হবে। এরপর থেকেই তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে অসংখ্য মানুষের জীবনে আলো এনে দেন।
 
মুজাফ্‌ফর হুসেন
 
মুজাফ্‌ফর হুসেনের স্বপ্নটি সরল, কিন্তু গভীর, ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগণার কেউ যেন না খেয়ে না ঘুমায়। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারিদ্র্য কোনো পরিসংখ্যান নয়, বরং এক নির্মম বাস্তবতা। পাকুড়, গোদ্দা, সাহেবগঞ্জ, দুমকা, জামতার ও দেবঘরের ছয়টি জেলা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার ইতিহাস বহন করে চলেছে, আর সেই ইতিহাসকে ধীরে ধীরে নতুনভাবে লিখে চলেছেন মুজাফ্‌ফর হুসেন।
 
 
মুজাফ্‌ফর হুসেন
 
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, এবং তাঁদের অধিকাংশেরই নিজের জমি নেই। এই কঠোর বাস্তবতার মাঝেই পাকুড়ের মুজাফ্‌ফর হুসেন তাঁর সংগ্রাম শুরু করেন, যা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ‘রাইট টু ফুড অ্যাক্ট’ পাশেরও আগে। আজ যদিও আইন কাগজে-কলমে বিদ্যমান, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হল, খাবার যেন সত্যিই প্রয়োজনীয় মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সেই দায়িত্বকেই জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছেন মুজাফ্‌ফর। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজ প্রায় ৬০০–৭০০টি পরিবার রেশন কার্ড পেয়েছে এবং নিয়মিত খাদ্যশস্য সরবরাহ পাচ্ছে।
 
ইবরার আহমে
 
ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচির অলিগলি ও পাড়ায় আজও এক নাম আশার প্রতীক হয়ে বেঁচে আছে, ইবরার আহমেদ। একসময় তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করতেন এবং আইপিটিএ (Indian People’s Theatre Association)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইবরার সমাজের মানুষের জীবনমান উন্নত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। যেখানে কোনো শিশু ফি দিতে না পারায় স্কুল ছেড়ে দেয়, যেখানে কোনো দরিদ্র রোগী চিকিৎসার আশায় অসহায় হয়ে পড়ে, বা যেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সমাজকে ছিন্নভিন্ন করার হুমকি দেয়, সেখানে সবার আগে উপস্থিত হন ইবরার আহমেদ।
 
ইবরার আহমে
 
তিনি বিশেষভাবে শিশু ও তরুণদের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। রাঁচি আঞ্জুমান ইসলামিয়া-র সভাপতি হিসেবে তিনি দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছেন, আয়োজন করেছেন প্রতিভা অন্বেষণ ও কুইজ প্রতিযোগিতা, যাতে শিক্ষা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা গঠনের মাধ্যম হয়ে ওঠে।
 
ড. শাহনওয়াজ কুরেশি
 
রাঁচির কুরেশ একাডেমি (Quraish Academy) আজ অসংখ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রী তৈরি করেছে। এই একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ড. শাহনওয়াজ কুরেশি, যিনি জন্মেছিলেন রাঁচির ঐতিহাসিক আলবার্ট এক্কা চকের কাছে অবস্থিত গুদরী কুরেশি মহল্লা-তে, যে এলাকা পৌর সংস্থার মতে একটি বস্তি হিসেবে চিহ্নিত। সাংবাদিকতা হোক বা সমাজসেবা, ড.কুরেশি শুধু নিজের এলাকার চেহারাই বদলাননি, পরিবর্তন এনেছেন মানুষের মানসিকতায়ও।
 
ড. শাহনওয়াজ কুরেশি
 
১৯৯৩ সালে ন্যাশনাল লিটারেসি মিশন-এ কাজ করার সময় তিনি নিজের এলাকায় একটি রাত্রি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে এলাকার বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলারা সন্ধ্যার নামাজের পর খাতা-কলম হাতে নিয়ে জড়ো হতেন। কেরোসিনের বাতির ক্ষীণ আলোয় কুঁচকে যাওয়া আঙুলে অক্ষর লেখার দৃশ্য হয়ে উঠেছিল আশা ও জাগরণের প্রতীক। এই ক্লাসগুলি ছিল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, আর স্থানীয় মানুষই বাতির তেলের জোগান দিতেন। ড. শাহনওয়াজ কুরেশির এই উদ্যোগই পরবর্তীতে একাডেমির রূপ নেয়, যা আজ শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে রাঁচির প্রান্তিক মানুষের মধ্যে।
 
মুখতার আলম খান
 
জামশেদপুরের আজাদ বস্তি, একসময় অপরাধ, ভয়, আর নেতিবাচক ভাবমূর্তির জন্য কুখ্যাত ছিল; অনেকটা ধানবাদের ওয়াসেপুর-এর মতোই। কিন্তু আজ সেই আজাদ বস্তির নাম উচ্চারণ করা হয় গর্বের সঙ্গে, আর এই রূপান্তরের অন্যতম কারিগর মুখতার আলম খান।
 
মুখতার আলম খান
 
মুখতার আলম ও তাঁর দল প্রতিদিন দেখা যায় কখনও রোগীর জন্য রক্ত ও ওষুধের ব্যবস্থা করতে, কখনও ক্ষুধার্ত মানুষকে আহার দিতে, আবার কখনও ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়তা করতে। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা আজাদ বস্তির মানুষদের নতুন করে আত্মসম্মান ও আশার আলো দেখিয়েছে।
 
তানভীর আহমে
 
২০১০ সালে রাঁচির ইসলাম নগর ও বাবা খাতাল এলাকার বহু ঘরবাড়ি উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে ফেলা হয়েছিল, এবং শত শত পরিবার এক রাতের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শিশুরা, কেউ পরীক্ষার সুযোগ হারিয়েছিল, কেউ আবার চিরদিনের জন্য স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এই দুঃসময়েই তানভীর আহমেদ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি এই শিশুদের পাশে দাঁড়াবেন। তাঁর ভাবনা ছিল, যদি পরিস্থিতি স্কুল কেড়ে নেয়, তবে শিক্ষাকে বন্ধুর রূপে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর এক নতুন যাত্রা, বন্ধুত্ব থেকে শিক্ষার পথে।
 
তানভীর আহমে
 
তানভীর আহমেদ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল রাঁচি ও ঝাড়খণ্ডের সেই বঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছানো, যারা মূলধারার শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষা-ই সেই চাবিকাঠি, যা তাদের ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে। রাঁচির নাম শুনলেই অনেকের মনে আসে সবুজ প্রান্তর, পাহাড় ও দ্রুত উন্নয়নশীল শহরের ছবি। কিন্তু এই উজ্জ্বল ছবির আড়ালে লুকিয়ে আছে আরেক বাস্তবতা, শহরের একটি বড় অংশের মানুষ আজও বস্তি ও অস্থায়ী ঘরে বাস করেন।
 
আনোয়ারুল হক
 
রাঁচির কানকে ব্লকের চাদরি গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক এমন এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছেন, যা দারিদ্র্যের কারণে পিছিয়ে পড়া শিশুদের জীবনে পরিবর্তন আনছে। দিনে তিনি ফুটবল শেখান, আর রাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তাঁর এই উদ্যোগ অসংখ্য শিশুর জীবনে আলো এনে দিয়েছে, যাদের কাছে একসময় শিক্ষা ও খেলাধুলা ছিল অধরা স্বপ্ন।
 
আনোয়ারুল হক 
 
এই যাত্রা শুরু হয়েছিল যখন আনোয়ারুল হক, রাঁচির একটি আবাসিক ছাত্রীবিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু নিজের দায়িত্ব পালনেই থেমে থাকেননি, তিনি চেয়েছিলেন সমাজে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে। নিজের ও আশেপাশের গ্রামের শিশুদের দুরবস্থা দেখে তিনি ব্যথিত হন। অধিকাংশই দিনমজুর পরিবারের সন্তান, যারা প্রায়ই স্কুলে যেত না, কেউ কেউ আবার খারাপ সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ত।
 
তখনই তিনি পরিকল্পনা করেন, অবহেলিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবেন। তাঁর উদ্যোগে এখন বহু শিশু আবার স্কুলে ফিরেছে, খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে, এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
 
তারিক আলম
 
সৈয়দ তারিক আলম নিঃশব্দে সমাজ পরিবর্তনের কাজে লেগে আছেন। জামশেদপুরের কোলহান অঞ্চল জুড়ে তিনি শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক কল্যাণমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কাজের মূল ক্ষেত্র কাপালি, যা জামশেদপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট্ট টাউনশিপ। পূর্ব ভারতের অন্যতম শিল্পনগরী জামশেদপুরে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার শ্রমিক কাজের খোঁজে আসেন, যাদের অনেকেই কম খরচের কারণে কাপালি এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। কিন্তু এখানকার শ্রমিকদের চাকরি বেশিরভাগই অস্থায়ী ও কম মজুরির, ফলে তাদের জীবনে স্থিতিশীলতা প্রায় নেই।
 
তারিক আলম
 
এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সরাসরি প্রভাব ফেলে তাদের সন্তানদের শিক্ষায়, ফলে কাপালি ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে বিদ্যালয়ত্যাগের হার অত্যন্ত বেশি। এই কঠিন বাস্তবতা সৈয়দ তারিক আলমকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তখন থেকেই তিনি এক সামাজিক অভিযানে নামেন, শিক্ষা, সহায়তা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পরিবারগুলির ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার লক্ষ্যে। আজ তাঁর সেই প্রচেষ্টা হাজারো মানুষের জীবনে আশার আলো ও দিশা এনে দিয়েছে।