ভারতের বিশ্বকাপ দলের মহিলা ওপেনার প্রতীকা এক অসাধারণ প্রতিভা, সিবিএসইতে ৯২.৫ শতাংশ, মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন!

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 4 h ago
প্রতীকা রাওয়াল
প্রতীকা রাওয়াল
 
শান্তি প্রিয় রায়চৌধুরী

ভারতের বিশ্বকাপ দলের মহিলা ওপেনার প্রতীকা রাওয়াল। একজন মৃদুভাষী, আত্মবিশ্বাসী তরুণ ক্রিকেটার, যিনি বিশ্বকাপে নজর কাড়ছেন। নয়াদিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজের তার বন্ধুরা তাকে মনোবিজ্ঞানের একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্মরণ করে।
 
ছোটো বেলায় ক্রিকেটের প্রেমে পড়লেও পড়াশোনাকে তিনি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন। তাইতো সিবিএসই পরীক্ষায় ৯২.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। খেলার পাশাপাশি তিনি মনোবিজ্ঞানের স্নাতক এবং বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন। সে এক অসাধারণ প্রতিভা। 
 
খেলার ময়দানে প্রতীকা রাওয়াল
 
প্রতীকা যখন খেলা শুরু করে তখন সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তবে তার ক্রিকেটে আসা বাবা প্রদীপ রাওয়ালের জন্যই। কারন বাবা দিল্লি ও জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের  একজন বিসিসিআইয়ের লেভেল-১ ক্রিকেট আম্পায়ার। তাই বাবার সঙ্গে তাঁর মাঠে আসা যাওয়ার ব্যাপারটা  প্রতীকাকে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়াতে সাহায্য করেছে।
 
রাজধানীর পশ্চিম প্যাটেল নগরের বাসিন্দা প্রতীকার অবশ্য এই লাইনে আসা সহজ ছিল না। কারন শিক্ষা এবং ক্রিকেটের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাটাই ছিল একটা কঠিন ব্যাপার। তবুও তার বাবা প্রদীপ রাওয়াল এই সমস্যার মধ্যে প্রতীকাকে রোহতক রোডের জিমখানা ক্রিকেট একাডেমিতে নিয়ে যান অভিজ্ঞ কোচ শর্বণ কুমারের অধীনে প্রশিক্ষণের জন্য, যিনি ইশান্ত শর্মা এবং নীতিশ রানা সহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে তৈরি করেছেন। বাবা প্রদীপ যখন ১০ বছর বয়সী প্রতীকাকে একাডেমিতে নিয়ে যান, তখন কোচ শর্বণ এত ছোটো মেয়ের খেলার প্রতি এত উৎসাহ দেখে অবাক হয়ে যান।
 
প্রতীকা রাওয়াল
 
প্রতীকার কোচ বলেছেন,"শীঘ্রই, প্রতীকা তার সমবয়সী ছেলেদের সাথে তার কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শুরু করে। সে ছিল আমার একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রথম মেয়ে। কারন আমি একাডেমিতে ছেলেদের সাথেই কাজ করতাম, কিন্তু যখন তার বাবা তাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন, তখন আমি ভাবলাম, কেন তাকেও একাডেমিতে খেলতে দেওয়া হবে না।" সেই অভিজ্ঞ কোচ এখন বলছেন, "আজ কল্পনা করতে পারিনি যে এক দশক পরে, তার মেয়ে জাতীয় দলে খেলবে।"
 
প্রতীকার বাবা প্রদীপ  ভদোদরায় স্টেডিয়ামে বসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মেয়ের অভিষেক ম্যাচটি দেখেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন,"আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমার সন্তান ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলবে, তা বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতীকা বাস্কেটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাস্কেটবল খেলতে চেয়েছিল। আমি তা চাই নি। আমি চেয়েছিলাম সে ক্রিকেট খেলুক। ঈশ্বরের আশীর্বাদে সে ক্রিকেট খেলে নিজেকে এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আমি আজ গর্বিত বাবা।" 
 
খেলার ময়দানে প্রতীকা রাওয়াল
 
ধীরে ধীরে প্রতীকা দিল্লির সিনিয়র মহিলা দলে জায়গা করে নেন। ২০২১ সালে অভিষেক বছরে প্রতীকা দিল্লির হয়ে ১৫৫ বলে ১৬১ রান করে শিরোনামে উঠে আসেন এবং ২০২২-২৩ মরসুমে ১৪টি খেলায় ৫৫২ লিস্ট এ রান সংগ্রহ করেন এবং পরের ২০২৩-২৪ মরসুমে সাত ইনিংসে ৪১১ রান করেন। তখন তিনি প্রাক্তন ক্রিকেটার দীপ্তির অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। কিন্তু রাজস্থানের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং দিল্লির মহিলা দলের প্রাক্তন কোচ দিশান্ত ইয়াগনিকও তাকে কৌশল পরিবর্তনে সহায়তা করেছিলেন। 
 
পরবর্তীতেও ইয়াগনিক দিশান্ত স্যারের কৌশল পরিবর্তনের শিক্ষাগুলি তাকে দিল্লি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়কত্ব করার সময় সাহায্য করেছিল।দলকে যেমন টি-টোয়েন্টি ট্রফির ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তেমনি ৯টি ম্যাচে ২৬ গড়ে এবং ৮৫.৯৪ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ১৮২ রান করেছিলেন। 
 
দীর্ঘদিন ধরে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা দীপ্তি বিশ্বাস মনে করেন প্রতীকা বছরের পর বছর ধরে একজন ক্রিকেটার হিসেবে পরিণত হয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি একজন ওপেনার হিসেবে খেলছেন। কিন্তু দলের প্রয়োজনে নীচের অর্ডারেও ব্যাট করছেন এবং ভালোও খেলছেন।সম্প্রতি রেলওয়েতে চাকরি পাওয়া প্রতীকার অদম্য মনোবলই তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে এবং তাকে আরো অনেক দূর নিয়ে যাবে।