বিশ্বজয়ীর প্রত্যাবর্তনে উৎসবে মেতে শিলিগুড়ি, রিচাকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 3 h ago
বিশ্বজয়ীর প্রত্যাবর্তনে উৎসবে মেতে শিলিগুড়ি,  রিচাকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার
বিশ্বজয়ীর প্রত্যাবর্তনে উৎসবে মেতে শিলিগুড়ি, রিচাকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ

বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের তারকা রিচা ঘোষ আজ ফিরছেন নিজের শহর শিলিগুড়িতে। উত্তরবঙ্গের গর্ব এই কন্যাকে বরণ করে নিতে ইতিমধ্যেই সাজো সাজো রব শহরজুড়ে। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সুভাষপল্লীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় রঙিন সাজ, ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে উঠেছে শহর, “স্বাগতম বিশ্বজয়ী রিচা”, “তুমি আমাদের গর্ব”। শিলিগুড়ি যেন আজ এক উৎসবের নগরী।
 
শুক্রবার সকাল থেকেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে ভিড় উপচে পড়েছে। মেয়র গৌতম দেব, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারসহ পুরসভার সদস্যরা সকালেই পৌঁছে গেছেন রিচাকে বরণ করতে। মেয়র বলেন, “রিচা ঘোষ শিলিগুড়ির গর্ব। ওকে হুড খোলা গাড়িতে বাগডোগরা থেকে শহরে আনা হবে। পথে পথে সংবর্ধনা জানাবেন মানুষ, পড়ুয়ারা, ক্লাব ও সংগঠনের সদস্যরা।”
 
রিচার বাবা (বামে), ও রান্না ঘরে ব্যস্ত রিচার মা (ডানে)
 
পুরসভার পক্ষ থেকে সাজানো হয়েছে ফুল ও পতাকায় মোড়া জিপ। বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশের প্রতিটি মোড়ে সংবর্ধনা মঞ্চ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় ক্লাব, বিদ্যালয়, ব্যবসায়ী সংগঠন, মহিলা সংগঠন, সকলে প্রস্তুত ‘আমাদের রিচা’-কে ফুল, মালা ও শঙ্খধ্বনিতে বরণ করতে। মেয়র জানিয়েছেন, “আজ শুধু রিচার নয়, পুরো শিলিগুড়ির গর্বের দিন। বিকেলে নাগরিক সংবর্ধনা হবে বাঘাযতীন পার্কে।”
 
রিচার বাড়িতেও আজ উৎসবের আমেজ। সকাল থেকেই রান্নাঘরে ব্যস্ত তাঁর মা। হাসিমুখে জানালেন, “রিচা নিজেই ফোন করে বলেছে যেন সাদামাটা রান্না হয়; ডাল, ভাজা, চাটনি, সবজি, পনিরের তরকারি আর পায়েস। ওর শৈশবের প্রিয় মেনু।” মেয়ের প্রিয় খাবার রান্না করতে করতে মা যেন ফিরে গেছেন রিচার ছোটবেলার দিনগুলোয়।
 
ভোর থেকেই বাড়ির সামনে ভিড় শহরবাসীর
 
বিকেল চারটের সময় বাঘাযতীন পার্কে শুরু হবে পুরনিগম আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন শহরের বিশিষ্টজনেরা, বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, ক্রীড়া পরিষদের সদস্য ও হাজার হাজার মানুষ। রিচার হাতে তুলে দেওয়া হবে সম্মান স্মারক ও ফুলের তোড়া। মেয়র বলেন, “এই সংবর্ধনা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি শিলিগুড়ির ইতিহাসে এক গর্বের অধ্যায়।”
 
রিচার ছোটবেলার ক্লাবও পিছিয়ে নেই। ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “ছোটবেলায়ই ওর মধ্যে ছিল অন্যরকম প্রতিভা। আজ বিশ্বজয়ীর মঞ্চে সেই মেয়েকে দেখে আমাদের চোখ ভিজে যাচ্ছে।” রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ জানান, “রিচাকে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে চাকরির প্রস্তাব এসেছে। ও ফিরে এলে আলোচনা করব।” পরিবারজুড়ে এখন আনন্দের হাওয়া।
 
যানজট মুক্ত রাখা হয়েছে  রিচার কনভয়ের রাস্তা
 
শুধু শিলিগুড়ি নয়, গোটা বাংলা আজ রিচাকে ঘিরে গর্বিত। আগামী ৭ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)-এর পক্ষ থেকে রিচা ঘোষকে দেওয়া হবে সোনার ব্যাট ও বল। উপস্থিত থাকবেন সৌরভ গাঙ্গুলি ও ঝুলন গোস্বামী। সৌরভের সই করা স্মারকে লেখা থাকবে, “রিচার সাফল্যে গর্বিত সিএবি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ওই অনুষ্ঠানে।
 
এদিকে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও পরিকল্পনা করছে রিচা ঘোষ ও দীপ্তি শর্মাকে সংবর্ধনা দেওয়ার। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই দুই ক্রিকেটার দেশের গর্ব, তাঁদের যথাযোগ্য সম্মান জানানো হবে।” আজকের দিনটি তাই শিলিগুড়ির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শহরের প্রতিটি মুখে হাসি, প্রতিটি চোখে গর্ব, “আমাদের রিচা, ভারতের গর্ব।”