বিশ্বজুড়ে হতাশাগ্রস্ত মানুষদের চিহ্নিত করার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকায় অসম সন্তান রাহুল ইসলাম

Story by  Ariful Islam | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 6 d ago
অসম সন্তান রাহুল ইসলাম
অসম সন্তান রাহুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম , গুয়াহাটিঃ
 
 অসমবাসীর জন্য এক সুখবর। আমেরিকায় গবেষণা করছেন এমন একজন অসমীয়া সন্তানের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা সামনে এসেছে। অসমের এই সন্তানের নাম রাহুল ইসলাম। আমেরিকার নিউ জার্সির হোবোকেনে অবস্থিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্টিভেনস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এক গবেষণার মাধ্যমে এমন একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্ভাবন করেছে, যার মাধ্যমে হতাশায় ভোগা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। অ্যাপটি মানুষের মুখ ও চোখ স্ক্যান করে তাদের মানসিক অবস্থা নির্ধারণ করতে পারবে।

আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এই যে, বিশ্ববিদ্যালয়টির এক প্রবীণ অধ্যাপকের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন অসমের সন্তান রাহুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি কামরূপ জেলার বাইহাটা চারিআলির অন্তর্গত কররা এলাকার রাধাকুচি গ্রামে।
 

 
রাহুল ইসলাম গবেষণারত
 
রাহুল ইসলাম গুয়াহাটিতে অবস্থিত ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (আইআইটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা যান। স্কলারশিপ লাভ করে রাহুল তাঁর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন সফলভাবে পূরণ করতে পেরেছেন। বর্তমানে তিনি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক চ্যাং ওয়ান বাইয়ের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, গোলমহমুদ আলী ও সুলেমা বেগমের পুত্র রাহুল ইসলামের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বাড়ির বাইরে। রাহুলের বাবা গোলমহমুদ আলী কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (CRPF)-এর জওয়ান ছিলেন। বাবা চাকরির জন্য রাহুলকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে বাধ্য হয়েছেন। রাহুল ইসলাম ডিমাপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।মেধাবী ছাত্র রাহুল ২০১০ সালে হাইস্কুল  পরীক্ষায় ৯৭% নম্বর পেয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে শীর্ষস্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়।

আওয়াজ – দ্য ভয়েস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাহুলের পিতা গোলমহমুদ আলী বলেন: "ছোট থেকেই রাহুল পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিল। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বই পড়ে কাটাতো। একজন পিতা হিসেবে আমি আজ খুব আনন্দিত ও গর্বিত। আমার একটি মেয়েও আছে—রাহুল বড়, মেয়েটি ছোট। আমার মেয়েটিও পড়াশোনায় ভালো। রাহুল ছোট থেকেই পড়াশোনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে রাহুল বাড়ি আসে এবং জানুয়ারিতে আবার আমেরিকায় ফিরে যায়।"
 

 
রাহুল ইসলামের গর্বিত বাবা -মা
 
উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমান সময়ে হতাশা মানব সমাজের জন্য এক নীরব ঘাতক এবং মানসিক স্থিতিশীলতার প্রতি এক গুরুতর হুমকি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত মানুষদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হলে তাঁদের প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। যদি তা করা যায়, তাহলে তাঁদের দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এমন মানুষদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন, কারণ অধিকাংশ হতাশাগ্রস্ত মানুষ তাঁদের অন্তর্দ্বন্দ্বকে বাইরে প্রকাশ করতে চান না এবং মুখাবয়বে তা প্রতিফলিত হতে দেয় না।
 
অতএব, স্টিভেনস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকদল দুটি মোবাইল অ্যাপ উদ্ভাবন করেছে, যা কোনো ব্যক্তির মুখমণ্ডল ও চোখ স্ক্যান করে সে হতাশায় ভুগছে কি না, তা শনাক্ত করতে পারে। এই মোবাইল অ্যাপ দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর মাধ্যমে কাজ করে। এর মধ্যে প্রথম অ্যাপটি চোখের মণির আকার ও তার পরিবর্তনের মাধ্যমে এমন রোগীদের শনাক্ত করে।অন্যদিকে, ‘FacePsy’ নামের দ্বিতীয় অ্যাপটি মুখমণ্ডলের পেশির নড়াচড়া এবং মস্তিষ্ক-ভঙ্গিমার (facial expressions linked to brain activity) বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তির আবেগগত অবস্থার উপর ভিত্তি করে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে।

অসমের সন্তানের এই অভিনব আবিষ্কার ইতিমধ্যেই আমেরিকার বিভিন্ন বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ও আলোচনামূলক মঞ্চে যেমন জায়গা করে নিয়েছে, তেমনি ভারতের জাতীয় পর্যায়ের সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। অসমের একজন মেধাবী যুবকের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন, যা সমগ্র মানব সমাজকে উপকৃত করতে পারে—এই সংবাদে রাজ্যের মানুষ স্বভাবতই গর্বিত।