শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ক্রমশই স্মার্টফোন, ট্যাব, ও ডিজিটাল বিনোদনের জগতে নিমগ্ন। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, এই ক্রমাগত উদ্দীপনার জোয়ারেই হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের একটি অমূল্য বিকাশগত সুযোগ: বোরডম বা একঘেয়েমি।
সম্প্রতি চাইল্ড মাইন্ড ইনস্টিটিউট–এর এক গবেষণায় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. স্টেফানি লি জানিয়েছেন, “বোরডম শিশুদের ‘less-than-ideal experiences’-এর সহনশীলতা তৈরি করতে সাহায্য করে। তারা শেখে কীভাবে হতাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে না গেলেও আবেগকে সামলাতে হয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, একঘেয়েমি শিশুদের মধ্যে আবেগীয় স্থিতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা গড়ে তোলে। যখন কোনো শিশু তাৎক্ষণিক বিনোদন বা পুরস্কার না পেয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে শেখে, তখন তার মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় emotional resilience ও coping skill তৈরি হয়।
মনোবিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, একঘেয়েমি মস্তিষ্ককে দেয় ‘mental downtime’, যা মস্তিষ্কের পুনরুজ্জীবন, স্মৃতি সংরক্ষণ ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক গবেষণা অনুযায়ী, নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল উদ্দীপনা মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত চাপে ফেলে, যার ফলে মনোযোগের পরিধি কমে যায় এবং মানসিক ক্লান্তি দেখা দেয়।
শুধু তাই নয়, একঘেয়েমি শিশুদের বাস্তব জগতের অনুসন্ধান ও সামাজিক মেলামেশায় উৎসাহিত করে। খেলার মাঠ, প্রকৃতির সংস্পর্শ, কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশা, সবকিছুই তাদের সৃজনশীলতা, সামাজিক বুদ্ধি ও সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, “প্রতিটি নিরিবিলি মুহূর্ত পূরণ করতে না গিয়ে” বরং সেই সময়কে সৃজনশীল ভাবনা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আবেগিক পরিপক্কতার জন্য ব্যবহার করতে শেখানোই আধুনিক পিতামাতার অন্যতম দায়িত্ব।
অতএব, একঘেয়েমি আর কেবল “বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা” নয়, বরং তা শিশুদের সৃজনশীলতা, আত্মনির্ভরতা ও মানসিক বিকাশের এক অমূল্য উপাদান, যা তাদের পরিণত করে স্থিতিশীল, চিন্তাশীল ও উদ্ভাবনী প্রাপ্তবয়স্কে।