মুন্নী বেগম , গুয়াহাটিঃ
নৃত্য, গান, সৌন্দর্যসহ শিল্পকলার ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শনকারী ১৫ বছরের কিশোরীর বাজিমাত। আড়াই বছর বয়স থেকেই মঞ্চে নৃত্য, গান এবং সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অসমবাসীর মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে কিশোরীটি। প্রায় পাঁচ শতাধিক পুরস্কার অর্জন করা এই কিশোরীটি হলেন আমগুরির আরলিন বেগম।
"আওয়াজ -দ্যা ভয়েস" এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আরলিন বেগম বলেন, "আমি নৃত্য এবং গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। আমি আড়াই বছর বয়স থেকে মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করে আসছি। আমি যখন নার্চারি স্কুলে পড়তাম, তখন 'চামেলি মেমচাহাব' চলচ্চিত্রের 'অসম দেশের বাগিচারে ছোয়ালী' গানটিতে প্রথমবারের মতো মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেছিলাম। ওই নৃত্যটি আমাকে আমার 'মা' শিখিয়েছিলেন। এরপর আমি আমগুরি সহ বিভিন্ন জায়গায়, যেমন যোরহাট, শিবসাগর ইত্যাদিতে অনুষ্ঠিত নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এই গানে ৬/৭টি পুরস্কার অর্জন করেছি।"
পুরস্কার জয়ী আরলিন বেগম
মাকে প্রথম গুরুরূপে জ্ঞান করেন আরলিন।খুদে শিল্পী সংগীত, নৃত্য ছাড়াও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি খেতাব জিততে সক্ষম হয়েছে।
আরলিন বলেন, "আমাকে প্রথমে আমার 'মা' নৃত্য এবং গানের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তাই তিনি আমার প্রথম গুরু। এরপর আমি নেহা দে' এবং অজয় চুম থেকে হিন্দি এবং অসমীয়া গানে নৃত্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। আমি রেঙণি (টিভি)র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত অসমের 'ডান্স ইন্ডিয়া' অনুষ্ঠানটির জন্য গ্রিন কার্ড লাভ করেছিলাম। এরপর যোরহাটে 'বেস্ট ডান্স' খেতাব অর্জন করার পাশাপাশি ২০১৫ সালে অমিত বরুয়ার স্মরণে অনুষ্ঠিত এক নৃত্য প্রতিযোগিতায় আমি 'মহারথী' পুরস্কার লাভ করেছিলাম।"
গান এবং নৃত্যের পাশাপাশি আরলিন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি খেতাব অর্জন করেছে। আরলিন ১৩ বছর বয়সে "মিস টিন ইন্ডিয়া ২০১৯" এবং "মিস টিন ওয়ার্ল্ড ডাইভার্সিটি ২০১৯" খেতাব লাভ করেছে।
ফ্যাশন দুনিয়াতে খেতাপ জয়ী
আরলিন বলেন, "নৃত্য এবং গান ছাড়াও আমি ফ্যাশনের প্রতি অনেক আগ্রহী। আমি যখন নার্সরি স্কুলে পড়তাম, তখন আমগুরির ডন বস্কো স্কুলে অনুষ্ঠিত সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং প্রথম পুরস্কার লাভ করেছিলাম। এরপর সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আমগুরিতে উদয় শংকর স্যারের কাছে গিয়েছিলাম, এবং তাঁর প্রশিক্ষণে ২০১৬ সালে 'সুদর্শনা সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা'তে দ্বিতীয় রানার আপ হতে সক্ষম হয়েছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে আমি বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছিলাম।"
"আমি যোরহাটের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ের খেতাব অর্জন করেছিলাম। শিবসাগরে এলিগেন্ট আসাম এবং নাজিরাতে মিস কিড খেতাব লাভ করেছি। ২০১৯ সালে নতুন দিল্লিতে 'মিস টিন ইন্ডিয়া ২০১৯' খেতাবের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ইস্ট আফ্রিকা 'মিস টিন ওয়ার্ল্ড ডাইভার্সিটি ২০১৯' খেতাব এবং 'বেস্ট টেলেন্ট' খেতাবও লাভ করেছিলাম।"
আরলিন ২০১৭ সালে 'আপার অসম', ২০১৯ সালে 'কিড বোহনা অব অসম', ২০১৮ সালে 'লিটিল কিড টাইটানিক অব নর্থ ইস্ট', 'কারেং', 'মিস কিডছ মরিয়নি', 'গ্লোরী অসম জুনিয়র', 'মিস ইউনাইটেড অসম', 'মিস কিড কামাখ্যা', ২০১৭ সালে 'অলংকার', 'নর্থ ইস্ট জুনিয়র সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা'তে 'বেস্ট স্মাইল', 'মিস কিড রংপুর' এবং 'প্রাইড গ্লোবাল অসম' সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় 'বেস্ট ফিগার', 'আপার অসম এটিটিউড সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়' 'বেস্ট ওয়াক', 'প্যারাডাইজ অসম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়' 'বেস্ট কনফিডেন্স', 'সোনালী অসম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়' 'বেস্ট ওয়াক', 'কিড উজনি অসম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়' 'বেস্ট পার্সনালিটি', 'জে বি'জ গ্লোবাল এক্ট মডেল হান্ট সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়' 'বেস্ট কস্টিউম' সহ একাধিক খেতাব অর্জন করেছেন।"
আরলিনের মা বলেন, "আমি নিজেও সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু কাজ এবং পরিবারিক দায়িত্বের কারণে সব কিছু ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু এখন আমি খুবই সুখী। কারণ, আমি যে সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলাম, বর্তমানে আরলিন সেগুলো খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। আমি গর্বিত যে, আরলিন সব ক্ষেত্রেই প্রথম খেতাব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।"
রেম্পে খুদে শিল্পী আরলিন
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দক্ষতার ছাপ ফেলা আরলিনের আত্মজনের জন্য একটি বিশাল অন্তর রয়েছে। কারণ, আরলিন ২০১৫ সালে মঞ্চে বিহু নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অর্জিত ১৫ হাজার টাকার পুরস্কার একটি কিডনি রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রদান করেছিল। আরলিন গান, ভারতীয় নৃত্য, সত্ৰীয়া নৃত্য ছাড়াও, অত্যন্ত সুন্দরভাবে চিত্রাঙ্কন করে। শিল্পকলায় অয়েল পেইন্ট, গ্লাস পেইন্ট সহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম করে পুরস্কারও অর্জন করেছেন আরলিন।