নূরুল হক, আগরতলাঃ
সরকার এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরের সাথে আইনি লড়াইয়ে একের পর এক জয় পেয়ে 'ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস' এ নাম তুললেন ত্রিপুরার গোমতী জেলার উদয়পুরের যুবক জাকির মিয়া। দীর্ঘ দশ বছরের বেশি সময় যাবত জাকির মিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২২ টির বেশি আরটিআই করেছেন এবং ৯টি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন উচ্চ আদালতে।
এছাড়াও তিনি বহু সরকারি দপ্তরে কাগজে লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজের এবং অসহায় মানুষের অধিকার আদায় করেছেন। জাকির মিয়ার এই ন্যায়যুদ্ধের ফলস্বরূপ 'ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস' তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতের হরিয়ানা ফরিদাবাদে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের অফিসে ডেকে নিয়ে তাকে শংসাপত্র দেওয়া হয়। জাকির মিয়া বর্তমানে ত্রিপুরায় বিচার বিভাগের অধীন গন্ডাতুইসা মহকুমা আদালতে একজন করণিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতাই বাংলায় স্নাতকোত্তর জাকির মিয়া বলেন ২০২০ সালে এই চাকরিটিও তিনি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই পেয়েছিলেন।
জাকির মিয়ার অসাধারণ কাজ সবসময় সাহায্য করছেন গরীব ও অসহায়বর্গকে
আওয়াজ দ্য ভয়েসের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাকির মিয়া বলেন গত ১০ বছরে তিনি বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে উচ্চ আদালতে ৯টি রিড পিটিশন দাখিল করেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে। সবকটি ক্ষেত্রেই মামলা হয়েছে । মামলাই হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকা এসব অধিকাংশ মামলায় তিনি জয়লাভ করেছেন। একইভাবে তিনি প্রশাসনিক কাজকর্মের গ্রাফিলতি এবং দুর্বলতা জনসমক্ষে তুলে ধরতে বাইশটির বেশি তথ্য জানার অধিকার তথা আরটিআই করেছেন। তার এইসব আরটিআই-র মাধ্যমে তার নিজের গ্রাম সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বহু সংখ্যক অসহায় মানুষ নিজেদের অধিকার ফিরে পেয়েছেন।
তিনি আরো জানান ২০১৪ সালে তিনি প্রথমে ত্রিপুরা পুলিশে চাকরি প্রার্থী হিসেবে বোর্ডে বসেছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি সেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। তখনই তিনি প্রথম সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে তথ্য জানার অধিকার মূলে সমস্ত তথ্য বের করেন। আরটিআই করে তিনি জানতে পারেন তার থেকে অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীও চাকরি পেয়েছেন। সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পরবর্তীকালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালে তিনি ত্রিপুরা পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে চাকরি পান। ত্রিপুরা পুলিশের কনস্টেবল থাকাকালীন সময়েই তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে বিচার বিভাগে করণিক হিসেবে চাকরি পান। সেই চাকরি নিতে গিয়েও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাকে আর টি আই করতে হয়েছে এবং আইনি লড়াই করতে হয়েছে।
ত্রিপুরার জাকির মিয়া স্থান পেলেন ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে
জাকির মিয়া আরো বলেন ২০১৪ সাল থেকে তিনি নিয়মিত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আরটিআই করেছেন। এগুলির মধ্যে এলাকার কোন গরীব মানুষের সরকারি ঘর থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বঞ্চনা, এলাকার রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি এই সমস্ত জনস্বার্থ বিষয়ও জড়িত ছিল। তার আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বহু অসহায় লোক প্রশাসনিক সাহায্য পেয়েছেন।
জাকির মিয়া বলেন কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং নৈতিক পথে লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে তিনি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে থাকেন। নিজের ব্যক্তিগত বিষয় সহ জনস্বার্থ বিষয়ে তিনি এই আইনি লড়াইয়ে শামিল থাকতে পছন্দ করেন। দীর্ঘ বছর যাবত এই সমস্ত লড়াই চালানোর মধ্যে সম্প্রীতি তিনি ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের বিষয়টি জানতে পারেন এবং অনলাইনে সেখানে আবেদন জানিয়ে নিজের লড়াইয়ের বিষয়টি তাদের সাথে শেয়ার করেন। তারপরই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড থেকে তার ন্যায় বিচার এবং সত্যের প্রতি লড়াইয়ের মানসিকতাকে সম্মান স্বরূপ ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের তালিকায় তার নাম তুলে তাকে শংসাপত্র দেওয়া হয়। ত্রিপুরার মত একটি প্রান্তিক রাজ্যের এক সংখ্যালঘু যুবকের এই ন্যায়ের লড়াই অন্যদেরকেও প্রতিবাদী হতে সাহায্য করছে বলে তথ্যবিজ্ঞ মহলের দাবি ।