কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোয় সম্প্রীতির জ্যোতি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে গড়ে উঠছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে উঁচু ২১ ফুটের প্রতিমা

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 10 h ago
শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্যরা
শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্যরা
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ 

শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো আজ শুধু এক ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একতার প্রতীক। যেখানে হিন্দু ও মুসলিম যুবকেরা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে গড়ে তুলেছেন এক অনন্য সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত। এবারের পুজো ৫ম বর্ষে পদার্পণ করল। পঞ্চম বর্ষেই রীতিমতো চমক নিয়ে হাজির হয়েছে কলেজপাড়া জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি। পুজোয় ২১ ফুট উচ্চতার প্রতিমা উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু বলে দাবি করেছে আয়োজক কমিটি।
 
গত তিন বছর ধরে প্রায় ২০ জন মুসলিম যুবক সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন এই পুজোয়। হিন্দু বন্ধুদের সঙ্গে তাঁরা সমান উৎসাহে প্রতিমা নির্মাণ, আলোকসজ্জা, ও আয়োজনের যাবতীয় দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছেন। উৎসবের এই চিত্র শিলিগুড়ির সামাজিক ঐক্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
 
পুজো কমিটির দুই সচিব — সৌরভ ভাস্কার ও রুস্তম আলম। এক জন হিন্দু, অন্য জন মুসলিম। তাঁদের নেতৃত্বেই এগিয়ে চলেছে কলেজপাড়ার এই সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো। রুস্তম আলম বলেন, “তিন বছর আগে আমি ও আমার দুই বন্ধু এই পুজো শুরু করার উদ্যোগ নিই। আমার পরিবারও এতে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত। আমরা হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে বড় হয়েছি — উৎসবের সময় আলাদা হব কেন? জগদ্ধাত্রী পুজো হোক বা ঈদ, আমরা সবাই মিলে আনন্দ করি।”
 
কমিটির প্রায় ৬০ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই মুসলিম যুবক। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই পুজোকে এক অনন্য সামাজিক ঘটনার রূপ দিয়েছে। সৌরভ ভাস্কার বলেন, “উৎসব কোনও ধর্মের গণ্ডিতে বাঁধা নয়। ঈদ হোক বা জগদ্ধাত্রী পুজো, প্রতিটি উৎসব আমরা একই আবেগে উদযাপন করি। এখানে যে সম্প্রীতির বাতাবরণ, তা শিলিগুড়িতে বিরল।”
 
শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সচিব সৌরভ ভাস্কার (বাঁ দিকে) এবং সহ-সচিব রুস্তম আলম
 
এই বছর পুজোর বাজেট প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ নয়, বরং দুই সম্প্রদায়ের সদস্যদের ব্যক্তিগত অনুদানেই গড়ে উঠেছে এই বিশাল আয়োজন। প্রতিমা ও প্যান্ডেল নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব উপাদান। এবারের থিম ‘দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ’, আর চন্দননগরের শৈলীতে তৈরি হচ্ছে ২১ ফুট উঁচু জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। পুজো মণ্ডপে প্রতিদিন বাজবে জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা ও কাঁসর — যা দর্শকদের নিয়ে যাবে আধ্যাত্মিকতার আবহে।
 
সম্প্রতি পুজোর প্রস্তুতি পরিদর্শনে আসেন মাননীয় মহানগরীক শ্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রতীক। এই ধরনের উদ্যোগই বাংলার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে।”
 
রুস্তম আলমের কথায়, “কিছু মানুষ ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করতে চায়, কিন্তু আমরা সেই পথে হাঁটি না। কারণ এটাই বাংলার সংস্কৃতি — যেখানে ভেদাভেদ নয়, একতার শক্তি বড়।”
পুজোর দিনগুলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে উৎসব পালন করেন। প্রতিমা আনা থেকে বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে মুসলিম বন্ধুদের সক্রিয় ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।
 
প্রতিবছরের মতো এবারও হাজার হাজার দর্শনার্থী কলেজপাড়ার প্যান্ডেলে ভিড় জমাবেন বলে আশা কমিটির। তাদের কাছে এই পুজো শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক মেলবন্ধনের উৎসব — যেখানে আলোকিত হয় মানুষে মানুষে ভালোবাসার দীপ।
 
শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো আজ তাই কেবল একটি উৎসব নয়, এটি এক সামাজিক বার্তা — “ভক্তিতে নয় বিভাজনে নয়, সম্প্রীতিই বাংলার আসল শক্তি।”