চাকরি নিয়মিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, ভুট্টা চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভর হলেন মায়ঙের আশ্বাদ আলম

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 2 d ago
আশ্বাদ আলম
আশ্বাদ আলম
মুন্নী বেগম , গুয়াহাটিঃ

বর্তমানে বেকার সমস্যা আমাদের রাজ্যে এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের কিছু উচ্চশিক্ষিত যুবক কৃষিকর্মের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার পথ তৈরি করে চলেছেন। তেমনই একজন যুবক হলেন মরিগাঁও জেলার মায়ং থানার অন্তর্গত গাগলমারি বরকুরানি গ্রামের আশ্বাদ আলম।

পেশাগতভাবে তিনি শিক্ষকতা করতেন, তবে চাকরি নিয়মিত না হওয়ায় বর্তমানে তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। মাকই চাষের মাধ্যমে তিনি এখন বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করে স্বনির্ভরতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
 
 আর্শ্বাদ আলম বলেন,“ভুট্টা চাষ খুবই সহজ এবং অত্যন্ত লাভজনক একটি চাষ। আমাদের গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভুট্টা চাষ করে স্বনির্ভর হয়েছে। আমি ৭–৮ বছর ধরে  ভুট্টা চাষ করে আসছি। তার আগে আমি সরিষা, মসুর ডাল ইত্যাদির চাষ করতাম। কিন্তু যখন আমাদের এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হলো, তখন কৃষিক্ষেত্রে নদীর জল আসা বন্ধ হয়ে গেল। ফলে আমার চাষের উপর অনেক প্রভাব পড়ে। এরপর আমি এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করি এবং ৮ থেকে ৯ কুইন্টাল ভুট্টা পাই, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তখন থেকেই আমি আমার ১০ বিঘা জমিতে আরও তিনজন সহযোগী কৃষকের সঙ্গে ভুট্টা চাষ শুরু করি।”
 

ভুট্টার চাষ
 
উল্লেখযোগ্য যে, ভুট্টা চাষ খুবই সহজ। এই চাষ বছরে দু'বার করা যায়। এক বিঘা জমিতে  ভুট্টা চাষ করে ১৬ থেকে ২০ কুইন্টাল পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব।

মাকই চাষ সম্পর্কে কৃষক আলম বলেন,“জারকালি ও জহকালি—উভয় ঋতুত ভুট্টা চাষ করা যায়। তবে জহকালির তুলনায় জারকালি মৌসুমে ভুট্টা উৎপাদন কিছুটা বেশি হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভুট্টার বীজ যেমন—ডিকেসি ৯২/১৭, ৯৫, পাইনুর, বাহুবলী ইত্যাদি সহজলভ্য। এই সব ধরনের ভুট্টার চাষের প্রক্রিয়া একটাই। কৃষকদের ভুট্টা চাষে খুব বেশি সময় দিতে হয় না। কারণ, একবার বীজ বপনের পর ২–৩ বার জল সেচ করলেই যথেষ্ট। আমাদের গ্রামে কৃষকেরা ‘বাহুবলী’ ভুট্টাই বীজের চাষ বেশি করে। ব্যবসায়ীরা বাজারে নিয়ে আসা বীজ কৃষকেরা কিনে নেন, এছাড়াও কিছু সংস্থা আমাদের উন্নত মানের ভুট্টার বীজ প্রদান করে আসছে।”
   
কৃষক আশ্বাদ আলমের মতে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ করে শুধু স্বনির্ভর হওয়া যায় না, বরং এটি একটি লাভজনক কৃষিকাজও বটে।কারণ, বর্তমানে বাজারে ভুট্টার চাহিদা খুবই বেশি। প্রতি কুইন্টাল ভুট্টার বাজারদর ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভুট্টা বিক্রি করে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।
 

 
ভুট্টা চাষে স্বাবলম্বী আশ্বাদ আলম
 
আলম বলেন,“এক বিঘা জমিতে বাহুবলী জাতের ভুট্টা চাষে ১৬ থেকে ২০ কুইন্টাল পর্যন্ত উৎপাদন হয়। অন্য প্রজাতির ক্ষেত্রে এক বিঘায় ১০ কুইন্টাল পর্যন্ত উৎপাদন হয়। ডিকেসি ৯২/১৭ প্রজাতির একটি ভুট্টার ৫০০টি বীজ থাকে, অন্য জাতের ভুট্টার ৩০০ থেকে ৪৫০টি পর্যন্ত বীজ পাওয়া যায়। ভুট্টার বীজ পরিপক্ব হওয়ার পর গাছেই শুকিয়ে নিতে হয়। এজন্য গাছের উপরের ভাগের পাতা ও খোলস কেটে রোদে শুকাতে দেওয়া হয় এবং পরে মূল থেকে বীজগুলো আলাদা করা হয়।”

বাজার প্রসঙ্গে আলম বলেন,“বর্তমানে বাজারে ভুট্টার চাহিদা যথেষ্ট বেশি। শুধু আসামের বিভিন্ন জেলা নয়, কলকাতা সহ অন্যান্য রাজ্যেও আমাদের গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত ভুট্টা রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে ভুট্টা বোঝাই বস্তা তোলার জন্য ট্রাক সারিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে। ভুট্টার দামের ক্ষেত্রে পাইনুর জাতের দাম অন্যান্য জাতের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। সাধারণত ভুট্টার প্রতি কুইন্টাল দাম ১৭০০–১৮০০ টাকা হয়, তবে পাইনুর প্রজাতির ক্ষেত্রে তা ৫০ টাকা বেশি হয়।”

সম্প্রতি ভুট্টার চাষ নিয়ে আমাদের গ্রামে একটি কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়।এই কর্মশালাটি ডিকেসি ৯২/১৭ বীজ সরবরাহকারী একটি এজেন্সির উদ্যোগে আয়োজিত হয়। কর্মশালায় কৃষকদের ভুট্টার চাষ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে সচেতন করা হয়। কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এজেন্সিটি এক লটারির ব্যবস্থাও করেছিল। এই এজেন্সি দরং, মঙলদৈ, মরিগাঁও, নগাঁও, বরপেটা প্রভৃতি বিভিন্ন জেলায় বীজ সরবরাহ করে আসছে এবং যেসব অঞ্চলে ভুট্টার চাষ ভালো হচ্ছে, সেখানে সচেতনতামূলক সভাও করে যাচ্ছে বলে জানান আলম।