সানিয়া জেহরাকে কেন কাশ্মীরের মৌ রানি বলা হয়?"

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 18 h ago
কাশ্মীরের মৌ রানি
কাশ্মীরের মৌ রানি
 বচিত জাৰ্গার , শ্রীনগরঃ

 বর্তমানে উদ্যোগের ক্ষেত্রে মহিলা-পুরুষের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। উভয়েই সমানভাবে কাজ করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। সেই প্রেক্ষাপটে 'কাশ্মীরে নারীরা কাজ বা ব্যবসা করতে পারে না' এই প্রচলিত ধারণাটি ভুল প্রমাণ করেছেন কাশ্মীরের অনেক মহিলা। নানা বাধা পেরিয়ে ব্যবসার জগতে নিজেদের স্থান তৈরি করে কাশ্মীরি নারীরা নিজেদের নাম উজ্জ্বল করতে পেরেছেন। এমনই এক প্রেরণাদায়ক উদাহরণ হলেন বালহামার বাসিন্দা সানিয়া জেহরা

হ্যাঁ, ২০ বছর বয়সী সানিয়া জেহরাই মৌচাষের ক্ষেত্রে নিজেকে একজন সেরা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কারণ, সানিয়া জেহরা শুধু তাদের পারিবারিক দীর্ঘদিনের ব্যবসার উত্তরসূরি নন, তিনি আজ সমগ্র কাশ্মীরের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সানিয়া জানান, মৌচাষ ছিল তার ঠাকুরদার শুরু করা ব্যবসা, যা পরে তার বাবার হাতে আসে এবং বর্তমানে তিনি তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

সানিয়া বলেন, “শুরুতে আমি এই কাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। কিন্তু তখন এই কাজ করতে আমার বিরক্ত লাগত এবং আমি শুধু সময় কাটানোর জন্যই সাহায্য করতাম। কখনও ভাবিনি যে এই কাজে আমি আগ্রহী হয়ে উঠব। কিন্তু আজ আমি এতটাই আবেগে জড়িয়ে পড়েছি যে মৌচাষ থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত সব কাজ আমি নিজেই সামলাচ্ছি।” 
 
    
সানিয়া মৌমাছি হাতে
 
সানিয়া বলেন যে, মৌচাষ ব্যবসা থেকে লাভ-লোকসান বুঝে তিনি আগের চেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন এবং বর্তমানে তিনি আমদানি-রপ্তানির কাজের সঙ্গেও যুক্ত। অন্যদিকে, বহু ধরনের ব্যবসার সুযোগ থাকলেও কেন তিনি মৌচাষকে বেছে নিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে সানিয়া বিস্তারিতভাবে বলেন,"কোরআনে মৌচাষের কথা বলা হয়েছে। মৌচাষ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান কৃপা লাভ করা যায়। আমি মেয়ে,এটা কোনো বড় কথা নয়। আসল বিষয় হলো কাজটি করার যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে মৌচাষ একটি সম্মানজনক পেশা এবং এর অনেকচিকিৎসাগত গুণও রয়েছে।” 
 
বিশেষ করে কাশ্মীরে মহিলাদের জন্য কোনো পথ সহজ নয় এই কথাটি সানিয়া নিজেও স্বীকার করেন। তিনি বলেন,"শুরুর দিকে অনেকেই আমাকে নিয়ে সমালোচনা করেছিল,এমনকি কাছের আত্মীয়দের দিক থেকেও তীব্র মন্তব্য শুনতে হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহু আকবার, আমি কখনো সাহস হারিয়ে হতাশ হইনি। আমি সবসময় আমার কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে গেছি এবং আজ আমি আমার কাজ নিয়ে সত্যিই সন্তুষ্ট।" 
 
 সানিয়া বলেন, তিনি শুধু ভালো আয় করছেন তা নয়, তাঁর মৌচাষ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি অন্যান্য উদ্যোগে সম্প্রসারণের সুযোগও পাচ্ছেন। তিনি বলেন,"মৌচাষের মাধ্যমে আমি প্রসাধনী সামগ্রী, মোম এবং গ্রীন প্রপোলিস ( সবুজ পরাগ) তৈরি করছি।"
 

মৌ পালনের দিশারি সানিয়া
 
তিনি জানান, সরকার তাঁর এই ব্যবসায় যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। যেকোনো আগ্রহী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৌচাষ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প ও সুবিধা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পেতে পারেন।

সানিয়া তাঁর বার্তায় বলেন,"কোনো কাজই ছোট নয়। প্রত্যেককে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে, কারণ আল্লাহ ছোট ছোট প্রচেষ্টাকেও উন্নতি ও সাফল্যের পথে পরিণত করেন।"
 
কাশ্মীরে মহিলারা ব্যবসার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। কিন্তু যুগ যুগ ধরে মহিলারা রান্নাবান্না,ঘর পরিষ্কার রাখা এবং পরিবারের যত্ন নেওয়ার মতো গৃহস্থালির কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে নতুন প্রজন্মের উদ্যোগী তরুণীরা এই সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে এসে ব্যবসার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।
 
তথ্য অনুযায়ী,প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ নিশ্চয়তা কর্মসূচি (PMEGP)র অধীনে গত তিন বছরে মহিলারা ১৪,৯৪৩টি প্রকল্প স্থাপন করেছে। এই পদক্ষেপ মহিলাদের কর্মজগতের অংশগ্রহণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।