সাকিনা খাতুন : প্রত্যেকটি নারীর কাছে একটি অনুপ্রেরণার গল্প

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 d ago
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকাশে  সাকিনা খাতুন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকাশে সাকিনা খাতুন
দেবকিশোর চক্রবর্তী

২০২৫ সালে আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের পতাকা উড়িয়েছেন প্যারা পাওয়ারলিফটার সাকিনা খাতুন। এ বছর আহমেদাবাদে আয়োজিত Para Powerlifting World Championships 2025-এ তিনি ভারতের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর লড়াই ও উপস্থিতি শুধু একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ নয়, বরং সাহস ও অধ্যবসায়ের এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে।

সাকিনা খাতুনের জীবনযাত্রা কখনোই সহজ ছিল না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও আর্থিক সংকটের ভেতর থেকেও তিনি গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াবিদের পরিচয়। অতীতেও তাঁর কৃতিত্ব ভারতের খেলাধুলার ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

২০২৪ সালে Para Powerlifting World Cup (পাটায়া, থাইল্যান্ড) থেকে দুটি ব্রোঞ্জ পদক জেতেন (Best Lift ও Total Lift বিভাগে)।একই বছরে অনুষ্ঠিত প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে মহিলা ৪৫ কেজি বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন।
 

সাকিনা খাতুন
 
এই সাফল্যের ধারাবাহিকতাতেই তিনি ২০২৫ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। যদিও পদক জয়ের সুযোগ মেলেনি, তাঁর দৃঢ় মনোবল ও সংগ্রামী মানসিকতা দেশের কোটি তরুণ-তরুণীর কাছে আজ অনুপ্রেরণা।সাকিনা বারবার বলেছেন— “খেলাধুলাই আমাকে বাঁচার নতুন শক্তি দিয়েছে। আমি চাই, আমার মতো অন্যরাও বুঝুক যে বাধা যতই আসুক, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”

ভারতের ক্রীড়া মহলে সাকিনা খাতুন আজ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মুসলিম নারী হিসেবে, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন—সঠিক দিকনির্দেশনা, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে আন্তর্জাতিক স্তরেও কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব।
 
সাকিনার কাছে খেলাধুলার মধ্যে পাওয়ারলিফটিং বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি আওয়াজ দ্য ভয়েসকে জানান, 'আমি সবসময় ভেবেছি, দুর্বলতা নয়—আমার শক্তিই আমাকে আলাদা করবে। শরীরচর্চার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম। কোচ আমাকে বলেছিলেন, যদি মন দিয়ে চেষ্টা করি তবে একদিন আন্তর্জাতিক স্তরে খেলতে পারব।'
 

প্যারা পাওয়ারলিফটার সাকিনা খাতুন
 
তিনি যে সমাজ থেকে এসেছেন, সেখানে অনেক মেয়েকেই খেলাধুলার জন্য পরিবারের অনুমতি পেতে লড়াই করতে হয়। এক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''সত্যি কথা বলতে, শুরুতে অনেক বাধা ছিল। মেয়েরা খেলবে—এমন ধারণা অনেকেই মানতে চাননি। কিন্তু আমার মা সবসময় পাশে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'তুই যা ভালোবাসিস তাই কর।' মায়ের উৎসাহই আমাকে শক্তি দিয়েছে।''

সাকিনা খাতুন শুধু একজন পাওয়ারলিফটার নন; তিনি এক প্রতীক—যিনি প্রমাণ করেছেন যে খেলাধুলার মাঠে জেদ আর সংগ্রামই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। তাঁর জীবন শুধু এক ক্রীড়াবিদের কাহিনি নয়, এটি লড়াই আর আশার গল্প। প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে তিনি প্রমাণ করেছেন—অধ্যবসায় ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো বাধাই চূড়ান্ত নয়। আজ তিনি কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র দেশের মেয়েদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।