কিভাবে বরপেটার চরের বস্ত্র বিদেশী বাজারে?

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 2 d ago
মঞ্জুযারা মোল্লা
মঞ্জুযারা মোল্লা
মুন্নী বেগম, গুয়াহাটিঃ

আর্থিক দুরাবস্থা এবং গৃহস্থলী হিংসার শিকার হওয়া মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার উদ্দেশ্যে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন পশ্চিম অসমের বরপেটা জেলার এক মহিলা। মহিলাদের আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করার জন্য এই মহিলা হলেন মঞ্জুযারা মোল্লা (Manjuara Molla)। সমাজে পুরুষদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে,  মাঞ্জুয়ারা 'আম্রাপারি' নামে একটি গ্রুপ শুরু করেছিলেন। এই গ্রুপটির মাধ্যমে বর্তমানে বহু মহিলা স্বনির্ভর হতে সক্ষম হয়েছেন।
 
আওয়াজ দ্য ভয়েসের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মঞ্জুয়ারা বলেন:"বরপেটার চর চাপরি অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী, এবং তারা দৈনিক মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। খুব কম উপার্জনে এই মানুষগুলি তাদের পরিবারে পেট চালিয়ে আসছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে  হওয়া 'লকডাউন' এর ফলস্বরূপ এইসব মানুষের জীবিকা এবং উপার্জনে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। কারণ, লকডাউনের ফলে অনেকেই তাদের জীবিকা হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। কর্মহীন হওয়া এইসব মানুষগুলি যথেষ্ট আর্থিক এবং খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়ে মানসিক চাপেও ভুগছিল। যার ফলে অনেকের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি এবং হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। মানসিক চাপের কারণে অনেক পুরুষ মহিলাদের উপর শারীরিক নির্যাতনও চালিয়েছিল। যেহেতু আমি বরপেটার চর চাপরি অঞ্চলে বাস করি, আমি মহিলাদের দুর্দশা এবং সংগ্রামগুলো দেখেছি।"
 

 
মঞ্জুযারা মোল্লার প্রশিক্ষণ
 
মঞ্জুয়ারা আরও বলেন,“মহিলা সবাইকে সাহায্য করার এবং তাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবরে আমি 'আম্রাপারি' নামে একটি গোষ্ঠী শুরু করি। যেখানে মহিলাদের সেলাই এবং এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথমে আমি সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে ১৫ হাজার টাকায় কাপড়ের একটি ঠান এবং এমব্রয়ডারির জন্য প্রয়োজনীয় রঙ-বেরঙের সুতা কিনে এনেছিলাম। মহিলারা প্রথমে চর চাপরি অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় কাপড় ‘রেজাই’ (কাঁথা ) সেলাই করা শুরু করেছিল। রঙ-বেরঙের সুতা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করে মহিলারা সুন্দরভাবে কাঁথার উপর এমব্রয়ডারি করছিল।”

মহিলা সকলকে স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া 'আম্রাপারি'র সঙ্গে এখন ৪০ জন মহিলা শিল্পী যুক্ত রয়েছে এবং তারা আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী।মঞ্জুয়ারা আরও বলেন, "প্রথমে মাত্র ১০ জন মহিলা শিল্পীকে 'আম্রাপারি'র মাধ্যমে সেলাই এবং এমব্রয়ডারির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। মহিলারা প্রথমে কয়েকটি চর চাপরি অঞ্চলের জনপ্রিয় কাপড় রেজাই (কাঁথা ) তে এমব্রয়ডারি করে তৈরি করেছিল। তারপর ধীরে ধীরে 'আম্রাপারি' থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং বর্তমানে মোট ৪০ জন মহিলা শিল্পী এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।"

'আম্রাপারি'র সঙ্গে যুক্ত মহিলা শিল্পীরা হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের এমব্রয়ডারি করা রেজাই (কাঁথা ), কুর্তি, বিছানা চাদর, টেবিল ক্লথ, সোফা কভার, টেবিল রানার, কুশন কভার, মাফলার, রুমাল, মাস্ক, ওয়াশ কোট প্রভৃতি প্রস্তুত করছেন।

মহিলা শিল্পীরা প্রস্তুত করা এই সামগ্রীগুলি অসমের বিভিন্ন জেলা সহ দেশের কয়েকটি রাজ্যে হওয়া কাপড়ের প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে এবং গ্রাহকদের যথেষ্ট প্রশংসা লাভ করেছে। এর পাশাপাশি 'আম্রাপারি'র মহিলা শিল্পীরা অনলাইন মাধ্যমে ব্যবসার মাধ্যমে বিদেশী বাজারও দখল করতে সক্ষম হয়েছেন।
 

স্বাবলম্বী গ্রামের মেয়েরা
 
ভবিষ্যতের দিকে মহিলাদের কাপড়ের পাশাপাশি চর চাপরি অঞ্চলের প্রচলিত বিভিন্ন ধরণের ব্যঞ্জন, আচার, জাম, মসলা প্রভৃতি প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, মঞ্জুয়ারা আওয়াজ দ্যা ভইসকে জানান।

একজন সক্রিয় সমাজকর্মী মঞ্জুয়ারা নারীর অধিকার এবং দরিদ্রদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছেন। তিনি খাদ্য সংকটে ভোগা দরিদ্রদের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাল্যবিবাহ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছেন।