মুন্নী বেগম , গুয়াহাটীঃ
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র বড়দিন উৎসব। বড়দিনে সবাই মোমবাতি জ্বালিয়ে যীশু খ্রিস্টের উদ্দেশ্যে প্রার্থনায় মিলিত হয়ে থাকেন এবং আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করেন। ছোট ছেলেমেয়েরা উপহারের জন্য সান্টার পথ চেয়ে থাকে। শিশুদের জন্য সান্টা বিভিন্ন ধরনের চকলেট, খেলনা ইত্যাদি উপহার হিসেবে নিয়ে আসে। কারণ, বড়দিনে উপহারের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকে।
গুয়াহাটীর এক মহিলা প্রস্তুত করেন হ্যান্ডমেড চকলেট। তিনি হলেন গুৱাহাটী মহানগরীর বাসিন্দা পাকিজা শইকিয়া। নেডফি হাটে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া প্রি-ক্রিসমাস মেলায় পাকিজা শইকিয়ার তৈরি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত হ্যান্ডমেড চকলেট ক্রেতাদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ, তার চকলেট অনন্য স্বাদ ও স্বাস্থ্যকর গুণে সমৃদ্ধ।
পাকিজা শইকিয়ার তৈরী চকলেট কেক সম্ভার
আওয়াজ দ্যা ভয়েস অসম’কে পাকিজা শইকিয়া বলেন, “আমি সাধারণত বেকারির কাজের সঙ্গে জড়িত। আমি ময়দা, মিলেট (বাজরা) ইত্যাদি থেকে নানা ধরনের কেক, বিস্কুট, গার্লিক ব্রেড, পিজ্জা, পনির ব্রেড, বাটার বিস্কুট, লাড্ডু-পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে আসছি। যেহেতু আমি রান্না করতে ভালোবাসি, তাই ভাবলাম বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর চকলেট তৈরি করব। সেইভাবেই আমি ঘরোয়া চকলেট তৈরি করার কাজ শুরু করি। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর আমি ঘরের অন্যান্য কাজ শুরু করি এবং সকাল ৯টার মধ্যে সমস্ত গৃহস্থালির কাজ শেষ করে ফেলি। এরপর আমি বেকারি ও চকলেট তৈরির কাজে মন দিই। বর্তমানে আমার তৈরি চকলেটগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছে। নেডফি হাটে অনুষ্ঠিত প্রি-ক্রিসমাস মেলায় আমি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত হ্যান্ডমেড চকলেট ও কেক নিয়ে গিয়েছিলাম, যেখানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বী লোকজনও আমার কাছ থেকে চকলেট ও কেক কিনেছেন।”
উল্লেখযোগ্য যে, চকলেট পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্য ও ফ্লেভার। চকলেট নানা খাদ্যদ্রব্য, বিশেষত কেক, পুডিং, মুস, চকলেট ব্রাউনি ও চকলেট চিপ কুকিজ ইত্যাদিতে একটি মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বহু ক্যান্ডি ও মিষ্টির ভেতরে চকলেট থাকে বা চকলেটের প্রলেপ দেওয়া হয়। চকলেট বার সাধারণত কঠিন চকলেট চকলেট নানা উপাদানে তৈরি হয় এবং এগুলো সাধারণত স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া হয়।
বড়দিন (ক্রিসমাস), ইস্টার, ভ্যালেন্টাইনস ডে ইত্যাদি পশ্চিমা উৎসবগুলিতে নানা আকৃতির চকলেট উপহার দেওয়ার ঐতিহ্য আজও বহাল।চকলেট মানেই শুধু স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যও জানালেন পাকিজা শইকিয়া
পাকিজার খাদ্য সামগ্রী বাজারে বিক্রির জন্য তৈরি
পাকিজা বলেন,“চকলেট, বিশেষত ডার্ক চকলেটকে পুষ্টিগুণের ভাণ্ডার বলা যায়। এতে থাকা উচ্চ মাত্রার আঁশ পাকস্থলীতে চর্বির শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং এর ফলে স্থূলতা অনেকটাই কমে যায়। এতে থাকা পটাশিয়াম স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। আবার এতে থাকা আয়রন শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। ডার্ক চকলেটের আরেক উপাদান ম্যাগনেশিয়াম ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিছু হৃদরোগের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। অন্যদিকে, এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডার্ক চকলেটের মধ্যে থাকা থিওব্রোমাইন দাঁতের এনামেলকে মজবুত ও সুরক্ষিত করে তোলে। এছাড়াও এর আরও অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আছে। এতগুলো গুণ থাকায় আমি এই চকলেটগুলোকে নিজস্ব সংমিশ্রণে আরও সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত করে তুলেছি। আমি বিশেষভাবে ভূট জলকীয়া (গরম মরিচ), গরম মসলা, নানা রকম নাটস, মিলেট, মাশরুম, ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদি দিয়েও চকলেট তৈরি করি।”
চকলেট খাওয়া হোক বা অন্য কিছু দুনিয়ার অন্যতম আনন্দদায়ক খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষ চকলেটকে ভালোবাসে। বিভিন্ন উৎসব, বিশেষ করে বড়দিনে, চকলেট উপহার হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়।
অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসবে অংশগ্রহণকারী পাকিজা শইকিয়া: “চকলেট এখন লাভজনক ব্যবসা, যা সহজেই শুরু করা যায়”সম্প্রতি নতুন দিল্লির ‘ভারত মণ্ডপ’-এ অনুষ্ঠিত অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসবে অসমের পক্ষ থেকে খাদ্য বিভাগে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা পাকিজা শইকিয়া চকলেট ব্যবসা সম্পর্কে বলেন,“বর্তমানে চকলেট ব্যবসা একটি অত্যন্ত লাভজনক উদ্যোগ। কারণ, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষের কাছে চকলেট প্রিয়। চকলেটের স্বাদ এমন যে, সবাই এটি খেতে ভালোবাসে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নানা ধরনের চকলেট উপলব্ধ হলেও, ঘরোয়া ভাবে তৈরি চকলেটের চাহিদা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। তাই আমি মনে করি, এটি একটি সহজে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা, যার মাধ্যমে কেউ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।”
বাজারে গ্রাহকদের সাথে পাকিজা
তিনি আরও বলেন,“চকলেট ব্যবসায় প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যাকেজিং আকর্ষণীয় হলে তবেই বিক্রিও ভালো হবে। এখন মানুষ জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বিহু কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে গিফট হিসেবে চকলেট দিতে চায়।”
অল্প সময়ে বহু ধরনের ডিজাইন ও স্বাদের চকলেট তৈরি করতে পারেন বলে জানিয়ে পাকিজা বলেন,“আমি চকলেট তৈরি করতে খুব ভালোবাসি, কারণ এটা আমাকে চাপমুক্ত রাখে এবং আনন্দ দেয়। চকলেট নিয়ে আরও অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে। আমি ভবিষ্যতে বিভিন্ন ভ্যারাইটি আনতে কাজ করব। বর্তমানে আমি এক ঘণ্টায় প্রায় ১০০ রকমের আলাদা ডিজাইন ও স্বাদের চকলেট তৈরি করতে পারি। আমার তৈরি চকলেট ২০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যে পাওয়া যায়। পাশাপাশি উপহারের জন্য আকর্ষণীয় গিফট প্যাকেও চকলেট দেওয়া হয়।”
প্রশিক্ষণ ছাড়াই চকলেট তৈরি করে চলেছেন পাকিজা শইকিয়া ‘চকলেটের গন্ধেই পাই আনন্দ ও চাপমুক্তি’। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই চকলেট তৈরি করা পাকিজা শইকিয়া বলেন,“চকলেটের মনোমুগ্ধকর গন্ধ আমাকে চাপমুক্ত করে তোলে এবং এক ধরনের আনন্দ দেয়।”
তিনি এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ রকমের চকলেট তৈরি করে ক্রেতাদের সরবরাহ করেছেন।পাকিজা আরও জানান,“আমি চকলেট তৈরির সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিই। পাশাপাশি, চকলেট তৈরি করার জন্য উন্নতমানের উপকরণ ব্যবহার করি। এছাড়া, চকলেট কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, এবং শিশুরা কখন ও কীভাবে চকলেট খেতে পারে — সেই বিষয়ে আমি ক্রেতাদের পরামর্শও দিয়ে থাকি।”