মুন্নী বেগম,গুয়াহাটিঃ
মানুষের হৃদয় জয় করার একটি অন্যতম উপায় হল সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা। এর একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন গুয়াহাটির মহানগরের গনেশগুড়ির বাসিন্দা পাকিজা শইকিয়া।
সুস্বাদু খাবার তৈরি করে তিনি বিভিন্নজনের হৃদয় জয় করেছেন এবং নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। রাজ্য কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত 'মহিলা উদ্যোক্তার বেকারি এবং মাশরুমের থেকে তৈরি করা সামগ্রীর প্রদর্শনী ২০২৪'তে একটি বিপণনের মাধ্যমে তিনি নিজের হাতে তৈরি করা খাবার বিভিন্নজনের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ লাভ করেন।
'আওয়াজ-দ্যা ভয়েস' এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাকিজা শইকিয়া বলেন, "ময়দা দিয়ে তৈরি করা সাধারণ কেক এবং বিস্কুটের পাশাপাশি আমি মিলেট (বাজরা) থেকে কেক, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরি করে গ্রাহকদের যথেষ্ট প্রশংসা লাভ করেছি। কারণ মিলেটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ, মূল ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে, ডায়াবেটিসের শুরু রোধ করে, মানুষকে স্বাস্থ্যকর ওজন লাভ এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে, এবং খাদ্য হজম ও শোষণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।"
পাকিজার তৈরী কেক ও চকলেট
এই গুণসমৃদ্ধ খাদ্য প্রস্তুতির মাধ্যমে পাকিজা একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, এক বিশেষ ধরনের বেকারি উদ্যোগের প্রসার ঘটাচ্ছে।
কেক ও বিস্কুটের তুলনায় মিলেট দিয়ে প্রস্তুত কেক ও বিস্কুটের চাহিদা বর্তমানে খুবই বেশি।অনেক সংখ্যক গ্রাহক আমার কাছে মিলেটের কেক ও বিস্কুট খুঁজে এসে থাকেন," বলেন পাকিজা।
পাকিজা বলেন, "আমি ময়দা দিয়ে কাপ কেক, ফলযুক্ত কেক, মাফিন, চিকেন কাপ কেক, আইসিং কেক, গার্লিক ব্রেড, পিজ্জা, পনির ব্রেড, বাটার বিস্কুট, নানকাতা ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, লাড়ু-পিঠা ইত্যাদি প্রস্তুত করার পাশাপাশি মিলেট দিয়ে কেক, বিস্কুট এবং লাড়ুও তৈরি করে আসছি।"
বেকারি সামগ্রীর পাশাপাশি তিনি ঋতুভিত্তিক ফল ও সবজি থেকে আচার, স্কোয়াশ ইত্যাদিও তৈরি করেন। গ্রীষ্মকালে চাহিদা অনুযায়ী আম, আনারস, বেল ইত্যাদির স্কোয়াশ তৈরি করে গ্রাহকদের সরবরাহ করে আসছেন পাকিজা। তিনি একবারে ২০ লিটার পরিমাণে স্কোয়াশ তৈরি করেন।
অন্যদিকে, তিনি বিহু, ঈদ এবং অন্যান্য উৎসব ও অনুষ্ঠানের জন্য গ্রাহকের অর্ডার অনুযায়ী পিঠা-লাড়ু ইত্যাদিও প্রস্তুত করেন। গুণমান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা পাকিজার সামগ্রী গুয়াহাটি মহানগরের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এবং বিদেশেও রপ্তানি হয়ে আসছে। পাকিজার তৈরি করা আচার স্থানীয় বেশ কয়েকটি কোম্পানি বড় পরিমাণে ক্রয় করে বলে এই মহিলা ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
পাকিজার হাতের আচার ও কেক
পাকিজা বলেন, "বর্তমানে বেকারির বাজার খুবই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। কারণ, বাজারে রিপোজ, ল'য়েন্স সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নানারকম কেক সহজলভ্য। এমন পরিস্থিতিতে আমার পণ্যের জন্য একটি আলাদা বাজার তৈরি হয়েছে। আমি আমার গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করি। আমার কেক ও অন্যান্য পণ্যের গুণমান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি আমি খুব গুরুত্ব দিই। আমার ছয়জন কর্মচারী থাকলেও আমি নিজেই কেক ও বিস্কুট তৈরি করি। সবচেয়ে ভালো লাগে এই যে, আগে যারা রিপোজ, ল'য়েন্স ইত্যাদি ব্র্যান্ডের কেক কিনতেন, তারাও এখন আমার কাছ থেকে কেক নিতে আসেন। আমার কেকের দাম ৬০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত, মিলেট কেক শুরু হয় ৪০ টাকা থেকে। বিস্কুটের প্যাকেটের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।"
বেকারি সামগ্রী তৈরি করে নিজে সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি অনেককেই স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখিয়েছেন পাকিজা।তিনি বহু যুবক-যুবতীকে বেকারি পণ্যের প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। এই প্রসঙ্গে উদ্যোগী মহিলাটি বলেন, “আমি আইআইই-র অধীনে বহু যুবক-যুবতীকে বেকারি, আচার বানানো ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছি। আমি কয়েকজন আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের যুবতীকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, বর্তমানে তারা স্বনির্ভর হতে সক্ষম হয়েছে।”
গ্রাহকদের মধ্যে পাকিজা
পাকিজা বলেন, “কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না নিয়েই আমি ১৫ বছর ধরে বেকারির কাজে যুক্ত আছি। ছোটবেলা থেকেই আমার রান্নাবান্নার প্রতি আগ্রহ ছিল। যখন আমার মা রান্নাঘরে রান্না করতেন, তখন আমি তাকে সাহায্য করতাম। কারণ আমি নিজে কিছু তৈরি করে দিতে খুব ভালোবাসতাম। মায়ের কাজ দেখে দেখে আমি ধীরে ধীরে নানা জিনিস তৈরি করতে শিখে যাই এবং সেগুলো বাড়ির লোকদের খেতে দিতাম। সেজন্য আমি তাদের কাছ থেকে প্রশংসাও পেতাম। এরপর ১৯৯৯ সালে আমি গোলাঘাটে এক প্রদর্শনীতে প্রথম বেকারির দোকান দিয়েছিলাম। সেখানেও গ্রাহকদের কাছ থেকে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলাম। এভাবেই আমি ধীরে ধীরে বেকারির কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি।”
দুই সন্তানের মা, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী পাকিজা কেবল বেকারি সামগ্রী, আচার বা স্কোয়াশ তৈরি করেন এমন নয়, তিনি হস্তশিল্পের কাজেও যুক্ত রয়েছেন। তিনি পরিত্যক্ত সামগ্রী দিয়ে টেবিল, ডেকোরেটিভ আয়না এবং অন্যান্য গৃহসজ্জার জিনিসপত্রও তৈরি করেন।