শান্তি প্রিয় রায়চৌধুরী
ঘুন ধরা ময়দানের ফুটবলে কয়েক দিন আগে ম্যাচ ফিক্সিং কান্ড ময়দানের ফুটবলের ভবিষ্যৎকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে। অতীতে ময়দানে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষয়টি নিয়ে নানা ফিসফাস চললেও কিন্তু এতদিন তা প্রকাশ্যে আসেনি। এবার তা প্রকাশ্যে এল প্রমাণ সহ। ধরা দিলেন শতাব্দী প্রাচীন খিদিরপুর ক্লাবের দুই কর্মকর্তা। একজন খিদিরপুর ক্লাবের কর্মকর্তা আকাশ দাস আর অন্য জন ক্লাবেরই মিডিয়া ম্যানেজার রাহুল সাহা। আকাশই এই ম্যাচ গড়াপেটা-কাণ্ডের অন্যতম মূলচক্রী বলে তদন্তকারীরা বলেছেন।
এই আকাশ দাস ও রাহুল সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। জানা গেছে, কলকাতা ফুটবলে সক্রিয় এক ম্যাচ গড়াপেটা চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই দু'জন। কলকাতা ফুটবলে ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে লালবাজারে এক সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার আইএফএর লিগ ছাড়াও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলার ফলাফল আগেভাগে ঠিক করে মোটা অঙ্কের লেনদেন চলত।
সন্দেহ করা হচ্ছে, ক্লাবের কিছু খেলোয়াড়ও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। লাল বাজারে তাদের এব্যাপারে জিজ্ঞাসা বাদের পর গেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোন ও একাধিক আর্থিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছে লালবাজার পুলিশ। আর নথিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে এই চক্রের পুরো সন্ধান পাওয়া যায়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, কলকাতা ফুটবলে ফিক্সিংয়ের মূল সূত্র এখান থেকেই পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেছেন, "আমরা ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক নাম পেয়েছি। তাঁদেরকেও এই তদন্তের আওতাধীন এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।"
আর এই ম্যাচ গড়াপেটার মাধ্যমে আইএফএ-কে প্রতারণা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বউবাজার থানায় কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি রাউডি স্কোয়াড (গুন্ডা দমন শাখা)-র সাব ইনস্পেক্টর সন্দীপ দত্ত এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। লালবাজার সূত্রের খবর, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে এরা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে। লালবাজার জানিয়েছে, এর মধ্যে আন্তর্জাতিক যোগও থাকতে পারে৷ ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তে আছে লালবাজার ও আইএফএ।
আইএফএ সেক্রেটারি অনির্বাণ দত্ত সাংবাদিকদের বলেছেন, "গত শুক্রবার আমি এবং আইএফএ-র প্রেসিডেন্ট কলকাতার নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মার সঙ্গে এ নিয়ে একটি বৈঠক করি, এবং পুলিশকে এই নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলি। পুলিশ এনিয়ে পদক্ষেপ নেয় এবং তার ফলও আমরা পেয়েছি। কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।"
এনিয়ে বহু ফুটবলপ্রেমী ও প্রাক্তন খেলোয়াড়ের প্রশ্ন, ঘরোয়া লিগ এবং টুর্নামেন্ট গুলিতে গড়াপেটার এই অভিযোগ নতুন নয়। এই ঘটনাটি দীর্ঘদিনই ধরেই চোখের আড়ালে চলছে। তাছাড়া এর মধ্যে
এজেন্টদের ও ভূমিকা রয়েছে। এদিকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বড় ক্লাবগুলির কর্তারাও। এই ঘটনায় তদন্ত চলায় তাঁরা খুশি। তারা চাইছেন ময়দান গড়াপেটার "আবর্জনা" মুক্ত হোক।
ময়দানে এই ফিক্সিং কান্ডের পর দাবি উঠেছে এই ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই ঘটনা ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছে, যা ময়দানের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।