শান্তিপ্রিয় রায় চৌধুরী 
	
	
	প্রেম, ভালবাসা এবং ধর্ম কোনও প্রতিবন্ধকতাই মানতে চায় না। এই কথাটা হয়ত অনেকের কাছেই ফিল্মি মনে হতে পারে। কিন্তু, এমন প্রচুর গল্প আমাদের চারপাশেই রয়েছে। এমনই এক প্রেমের কাহিনী লিখেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর। ভারতীয় নির্বাচকের প্রেমের গল্প যেন সিনেমার মতো। 
	 
	ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে আগরকর ২৬টি টেস্ট ম্যাচ, ১৯১টি ওয়ানডে এবং চারটি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৯৯, ২০০৩ এবং ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন আগরকর। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি।একটা সময় তিনি টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটারকে আউট করেছেন। কিন্তু, ভালোবাসার উইকেটে তিনি এক মুসলিম বন্ধুর বোনের সামনে ক্লিন বোল্ড হয়ে যান।
	 
	অজিত আগরকর ও ফাতিমা গাদিয়ালির বিয়ের ছবি
	 
	আজ্ঞে হ্যাঁ, অজিত আগরকর তাঁর এক মুসলিম বন্ধুর বোনকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর নাম ফতিমা গাদিয়ালি। 
	ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনায়ও কম উৎসাহী ছিলেন না ফতিমা। মুম্বইয়ের একটি নামী কলেজ থেকে স্নাতকের ডিগ্রি করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাড়ি দেন তিনি। বার্মিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজ়মেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে এমবিএ করেন। সঙ্গে রয়েছে বিএড এবং ইসিসিই ডিগ্রিও।
	 
	এক সমান বেসরকারি সংস্থার চাকরি ছেড়ে শিক্ষাবিদ হিসাবে নাম করেছিলেন ফতিমা। ২০২০ সালে একটি পত্রিকার বিচারে দেশের সেরা ৫০টি শিক্ষাবিদের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি। এখন মুম্বইয়ের কচিকাঁচাদের জন্য স্পোর্টস এডুকেশন সংস্থাও গড়ে তুলেছেন ফতিমা।
	 
	অজিত আগরকর ও ফাতিমা গাদিয়ালির বিয়ের পরবর্তী সময়ের ছবি
	 
	অজিত এবং ফাতিমা ২০০২ সালে বিয়ে করেন। সেইসময় আগরকর টিম ইন্ডিয়ার অন্যতম সেরা পেস বোলার ছিলেন। দুজনের বিয়ের গল্পটা এইরকম -বন্ধুর বোনকে আগরকর  ভালবেসে ফেলেছিলেন ক্রিকেট মাঠ থেকেই। আসলে ফতিমা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে আসতেন। সেখানেই তাঁদের মধ্যে প্রথম আলাপ হয়। এই আলাপ পর্ব থেকেই বইতে শুরু করে প্রেমের জোয়ার। 
	 
	ফতিমার ভাই আসলে অজিতের বন্ধু ছিলেন। প্রাথমিক প্রেম পর্বের পর তাঁরা একে অপরকে ডেট করতে শুরু করেন। এই কথাটা যখন অজিতের পরিবার জানতে পারে, তখন মুম্বইয়ের পন্ডিত পরিবারে বয়ে গিয়েছিল অশান্তির ঝড়। আসলে মুসলিম পরিবারের মেয়ে বলে আগরকার পরিবার মেনে নিতে পারে নি। আর ফতিমার পরিবারও এই অসবর্ন বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। 
	 
	অজিত আগরকর ও ফাতিমা গাদিয়ালি তাঁদের ছেলের সঙ্গে একটি ছবি
	 
	তবে এনিয়ে অজিত আগরকর এবং ফতিমার পরিবারকে বোঝানোটা খুবই কঠিন ছিল। আসলে তাঁরা ধর্ম টরম কিছু মানেনি। তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। শেষপর্যন্ত অনেক বোঝানোর পর দুই পরিবার রাজি হয়েছিল। তারপর? যা হয় তাই হল। ২০০২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পন্ডিত পরিবারের ছেলের সঙ্গে মুসলিম পরিবারের মেয়ের দুই হাতের মিলন ঘটল। বিয়ে ও অনুষ্ঠান হয়েছিল নিরবে। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এবং ভারতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার।