অসমে সিএএ-এর আওতায় ২ জনকে নাগরিকত্ব প্রদান,মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪

Story by  PTI | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 d ago
অসমে সিএএ-এর আওতায় ২ জনকে নাগরিকত্ব প্রদান,মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪
অসমে সিএএ-এর আওতায় ২ জনকে নাগরিকত্ব প্রদান,মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪

গুয়াহাটি:

অসমে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন বা সিএএ-এর আওতায় একজন মহিলাসহ দুই জনকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজ্যে সিএএ-এর অধীনে নাগরিকত্বপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চার, বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী।

উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে এই প্রথম কোনও মহিলা সিএএ-এর অধীনে নাগরিকত্ব পেলেন বলে জানান প্রবীণ আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব। তিনি শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্যও ছিলেন।

আইনজীবী জানান, ৪০ বছর বয়সি ওই মহিলা ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসেন এবং শ্রীভূমিতে বসবাস করছিলেন। অন্যদিকে, ৬১ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি ১৯৭৫ সালে ভারতে প্রবেশ করেন এবং কাছাড় জেলায় বসবাস করছিলেন।

শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁদের নাগরিকত্বের শংসাপত্র জারি করে। দেব জানান, দু’জনের ক্ষেত্রেই তাঁরা যেদিন ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, সেই দিন থেকেই নাগরিকত্ব কার্যকর বলে গণ্য করা হয়েছে। সম্ভাব্য সামাজিক হয়রানির কথা মাথায় রেখে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

আইনজীবী আরও জানান, বাংলাদেশে চট্টগ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এক আত্মীয়ের সঙ্গে এসেছিলেন। সেই সময় তাঁর পরিচয় হয় শ্রীভূমির এক ব্যক্তির সঙ্গে। পরে তাঁদের বিয়ে হয়, তাঁদের একটি পুত্রসন্তান জন্মায় এবং তিনি ভারতে থেকেই যান। সিএএ-এর নিয়মাবলি গত বছর বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন।

তবে গত বছরের জুলাই মাসে জমা দেওয়া তাঁর প্রথম আবেদন লোকসভা নির্বাচনের আগে হওয়া আসন পুনর্নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন) প্রক্রিয়ার কারণে বিভ্রান্তির জন্য খারিজ হয়ে যায়। বর্তমানে যেখানে তিনি থাকেন, সেই বদরপুর এলাকা আংশিকভাবে শ্রীভূমি থেকে কাছাড় জেলায় স্থানান্তরিত হওয়ায় তাঁর এলাকার প্রশাসনিক এখতিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।

পরে আইনজীবী পুনরায় আবেদন করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর আবেদন মঞ্জুর হয়।ধর্মানন্দ দেব বলেন, তিনিই অসমে সিএএ-এর আওতায় নাগরিকত্বপ্রাপ্ত প্রথম মহিলা এবং উল্লেখযোগ্যভাবে, রাজ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘নিবন্ধন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর ৫(১)(সি) ধারা, ৬বি ধারার সঙ্গে পাঠ করে এই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, কোনও ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করা ব্যক্তি ভারতে সাত বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য নিবন্ধনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।”

দ্বিতীয় নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সিলচর শহরের বাসিন্দা। তিনি ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলা থেকে ভারতে আসেন, স্থানীয়ভাবে বিয়ে করেন এবং পরিবার গড়ে তোলেন।

তিনি স্বাভাবিকীকরণ (ন্যাচারালাইজেশন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এর ফলে ১৯৭১ সালের কাট-অফ তারিখের পরে ভারতে প্রবেশ করা মোট চার জন ব্যক্তি অসমে সিএএ-এর অধীনে নাগরিকত্ব পেলেন।

ধর্মানন্দ দেব জানান, গত ১৮ মাসে তিনি প্রায় ২৫ জন আবেদনকারীকে সহায়তা করেছেন, তবে অনেক আবেদন খারিজ হয়েছে বা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। গত বছর নিয়মাবলি প্রকাশের পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৪০ জন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।

এই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সি সম্প্রদায়ের অভিবাসীরা, যারা ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪-এর মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাশ হওয়ার পর অসম জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়, যার জেরে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

অসমে প্রায় দুই লক্ষ মানুষকে সন্দেহজনক নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক মানুষই সিএএ-এর আওতায় আবেদন করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ হিন্দুই ১৯৭১ সালের কাট-অফ তারিখের আগেই অসমে চলে এসেছিলেন।