২০২৫ এর শিক্ষক দিবসে ১৫ জন কৃতি শিক্ষক রাজ্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 2 d ago
সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভুঁইয়া
সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভুঁইয়া
 
শতানন্দ ভট্টাচার্য

২০২৫ এর শিক্ষক দিবসে যে ১৫ জন কৃতি শিক্ষক রাজ্যিক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার হাইলাকান্দি জেলা থেকে রয়েছেন সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভুঁইয়া। কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে খুবই নিবেদিত এই সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভুঁইয়া। তিনি তাঁর ছাত্রদের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, যাতে তাদের মধ্যে মুক্ত চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করেন যে উদ্ভাবনী শিক্ষণ কৌশল কৌতূহল জাগায় এবং জ্ঞান সৃষ্টি করে।
 
সুফিয়ান সিদ্দিকীর বাবাও ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক। বাবা আবদুল সাত্তার বড়ভুঁইয়া হাইলাকান্দি জেলার ৬৮৪ সুলতানিছড়া এল পি স্কুল থেকে অবসর নেন। মা প্রয়াত রুকিয়া বেগম একজন প্রকৃত গৃহিণী। মা ও বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই একজন আদর্শ শিক্ষক হতে পেরেছেন বলে জানান সুফিয়ান সিদ্দিকী। 
 
তিনি তাঁর ছাত্রদের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের জন্য নিজেকে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে উৎসর্গ করেছেন, যাতে তাদের মধ্যে মুক্ত চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করেন যে উদ্ভাবনী শিক্ষণ কৌশল কৌতূহল জাগায় এবং জ্ঞান সৃষ্টি করে। তিনি হাইলাকান্দির এসএস কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি (অনার্স), অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ড. এস বি আই ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন থেকে বি এড এবং ইগনো থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
 
২০১০ সালে জামিরা উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত বিজ্ঞান স্নাতক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৩ সালে টিইটি (মাধ্যমিক) পাস করে নিয়মিত প্রশিক্ষিত স্নাতক শিক্ষক (বিজ্ঞান) হন। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজিতে পিজিটিইটি-তেও উত্তীর্ণ হন। ইকো ক্লাব, আর্যভট্ট বিজ্ঞান কেন্দ্র, আসাম বিজ্ঞান সমিতি এবং টিঙ্কারিং ল্যাবের মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের ভবিষ্যৎমুখী শিক্ষা প্রদান করেন। 
 
সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভুঁইয়া
 
২০১৮ সালে তিনি জাতীয় অর্জন জরিপ (এন এ এস) চক্র-২-এর জন্য জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০২৩ পর্যন্ত প্রতি বছর গুণোৎসবের জন্য নিবেদিত মাস্টার ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন। ২০১০ সালে তিনি জেলা যুব নেতৃত্ব পুরস্কার এবং একই বছরে নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠন, গুয়াহাটি থেকে রাজ্যের শ্রেষ্ঠ যুব পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি কাব্যগ্রন্থ 'দশটি তারার আকাশ'-এর সহ-লেখক এবং শিক্ষক-শিক্ষার উপর বেশ কিছু বুকলেট ও গাইড প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ‘শিক্ষা’ বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকের বাংলা অনুবাদ উচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। পি এম শ্রী জামিরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত), ক্যারিয়ার কাউন্সেলর এবং অরোহণ প্রকল্পের অধীনে মেন্টর হিসেবে তিনি ছাত্রদের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
 
সুফিয়ান জানান যে ২০২১ সাল থেকে শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের ফলাফল ও ভর্তির হার হ্রাস পেতে শুরু করে। এই সমস্যা মোকাবিলায় তিনি কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যার ফলে ভর্তির সংখ্যা ২০২২-২৩ সালে ৫০১ থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ সালে ৬২১, ২০২৪-২৫ সালে ৭০০ এবং ২০২৫-২৬ সালে ৭৯০-এ পৌঁছায়। তিনি অভিভাবকদের সাথে মেগা মিটিং এবং নিয়মিত এসএমডিসি সভার আয়োজন করেন, যাতে ছাত্রদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। ম্যানুয়াল রেজিস্টার ও তিন বছরের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশু ট্র্যাকিং ব্যবস্থা উন্নত করা হয়। প্রতিকারমূলক শিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে এইচএসএলসি পাসের হার ২০২১ সালের ২% থেকে ২০২৪ সালে ৬৮% এবং ২০২৫ সালে ৫০%-এ উন্নীত হয়।
 
অরোহণ প্রকল্পের অধীনে তিনি অনাথ ছাত্রী মারুফা তাসমিন লস্করকে মেন্টরিং করেন, যিনি এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে সাফল্যের সাথে পড়াশোনা করছেন। তাঁর আরেক ছাত্র মুস্তাফা জামাল লস্কর ২০২৫ সালের এইচ এস এল সি পরীক্ষায় ৮৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করে বলে সুফিয়ান জানান।
 
তিনি ক্ষেত্র পর্যবেক্ষন এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার আয়োজন করেন এবং আইআইটি গুয়াহাটির নির্দেশনায় টিঙ্কারিং ল্যাবে উদ্ভাবনী প্রকল্পে ছাত্রদের মেন্টরিং করেন। তাঁর সময়ে বিদ্যালয়টি ২০২৪ সালে উচ্চতর মাধ্যমিকে উন্নীত হয়। ২০২৫-২৬ সালে প্রথমবারের মতো দর্পণ পোর্টেলের মাধ্যমে ৬৫ জন ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে বিদ্যালয়ে এইচএসএলসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করাতে সক্ষম হন এবং ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে সফলভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করেন বলেও জানান। 
 
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুফিয়ান জানান যে তাঁর প্রচেষ্টা একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার দিকে কেন্দ্রীভূত, যা ছাত্রদের সম্পৃক্ততা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করে এবং জাতি গঠনে অবদান রাখে। তিনি নিজেকে কমিউনিটির সেবায় নিয়োজিত রেখে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছেন। 
 
শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য অসম সরকারের শিক্ষা বিভাগ তাঁকে আগামি ৫ সেপ্টেম্বর রাজ্য শিক্ষক পুরস্কারে ভূষিত করবে। তেজপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক উনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।