দেবকিশোর চক্রবর্তী / কলকাতা
বয়স সবেমাত্র দু'বছর। তার মধ্যেই মানুষের নজর কেড়েছে জনকল্যাণমূলক সংস্থা 'রাইটস ফর অল'। মহানগর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটে এই সংস্থার প্রধান কার্যালয়। মূলত সমাজকর্মী গোলাম ফারুকের আন্তরিক উদ্যোগেই মানব কল্যাণের ব্রত নিয়ে পথ চলা শুরু। তিনিই এই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। রাজ্য সভাপতি গীতি হাকিম। বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেওয়া কভিড-১৯ পশ্চিমবঙ্গকেও তখন অচল করে দিয়েছে। ২০২৩ সাল, মরণ আতঙ্কে সকলেরই তখন ঘরবন্দী জীবন। একটানা 'লক-ডাউন'-এর কারণে বহু মানুষ তখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সেই সময়েই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা ভাবনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংস্থা।
'রাইটস ফর অল'এর সম্পাদক গোলাম ফারুক 'আওয়াজ দা ভয়েস'কে জানালেন সংস্থার কর্মকাণ্ডের কথা। 'প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি তাদের অশ্রুত কণ্ঠস্বরকে প্রসারিত করাই আমাদের লক্ষ্য। পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যে এই সংস্থার মাধ্যমে সকলের জন্য অধিকারের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই আমরা।'
ছবিতে পূর্ব রেলের ডিআরএমের সঙ্গে সংস্থার সম্পাদক এবং সভাপতি
কথা প্রসঙ্গে জানা গেল এই সংস্থা মোট ১৪টি মৌলিক বিষয়কে তাদের পাথেয় করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলির মাধ্যমে মানব কল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নের কাজ তাঁরা জারি রেখেছেন। ১. মানবতা ও শান্তি বিষয়ক, ২. নারী অধিকার বিষয়ক, ৩. শিশু অধিকার বিষয়ক, ৪. পুরুষ অধিকার বিষয়ক. ৫. ট্রান্সজেন্ডার অধিকার বিষয়ক, ৬. প্রবীণ নাগরিক অধিকার বিষয়ক, ৭. বিশেষভাবে সক্ষম অধিকার বিষয়ক, ৮. শ্রম অধিকার বিষয়ক, ৯. উপভোক্তা অধিকার বিষয়ক, ১০. শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক, ১১. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক, ১২. সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক, ১৩. প্রাণী অধিকার বিষয়ক, ১৪. পরিবেশ ও বন বিষয়ক।
উল্লিখিত বিভাগগুলি নিজের নিজের কাজে সবসময় তৎপর। প্রতিটি বিভাগ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অভিজ্ঞ ও পেশাদার কর্মী দ্বারা পরিচালিত। বিভিন্ন সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইতিমধ্যেই এই সংস্থাটিকে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে। কলকাতাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়মিতভাবে নিয়ে থাকে। ভারতীয় রেলের সঙ্গেও যৌথভাবে কয়েকটি উদ্যোগ সার্থক করেছে এই সংস্থা।
সমাজকল্যাণে সংস্থার প্রধান উদ্যোগ এবং অবদান:
শহরকে আবর্জনা মুক্ত করতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে স্বচ্ছ কলকাতা অভিযান। সম্প্রতিভারতীয় রেলওয়ের (পূর্ব রেলওয়ে) সহযোগিতায়, বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (ডি আর এম) এবং ঊর্ধ্বতন রেল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কলকাতা রেল স্টেশনে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছিল এই সংস্থা। 'রাইট ফর অল' আয়োজিত সেই অনুষ্ঠান অলংকৃত করেছিলেন পদ্মভূষণ শ্রীমতি ঊষা উথুপ। তাঁর উপস্থিতিতে এই স্বচ্ছতা অভিযানটি অনুষ্ঠিত হয় । রেল রেল স্টেশন চত্বরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নাগরিকদের দায়িত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন বক্তারা। নিত্যযাত্রীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়।
গোলাম ফারুক তার সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে
আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের সহায়তায় একটি মাদক বিরোধী অভিযানের আয়োজন করে এই সংস্থা।তাঁদের নিরলস প্রয়াসে মাদক বিরোধী অভিযানের আয়োজনে সাড়া দিয়ে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ মালা রায়, বিধায়ক দেবাশিস কুমার, বিশিষ্ট অভিনেতা যীশু সেনগুপ্ত, ক্রীড়া সংগঠক বাবুন ব্যানার্জি, জাভেদ খান এবং ডিসিপি প্রিয়ব্রত রায় (আইপিএস) সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। কলকাতার বিভিন্ন নামীদামী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও এই অভিযানে যোগদান করেছিল।মাদক বিরোধী অভিযানে মিলে ব্যাপক জনসমর্থন ।
সম্প্রতি এদের আরো একটি অনুষ্ঠান অনেকের নজর কেড়েছিল। 'প্লাস্টিক বর্জন অভিযান'। দক্ষিণ কলকাতার চেতলায় এনসিসি এবং কেএমসির আয়োজনে, এনসিসি ক্যাডেট এবং কলকাতা পৌর কর্পোরেশনের সহযোগিতায় প্রচার অভিযান চলে। পরিবেশ সচেতনতামূলক ওই প্রচার অভিযান শহরের নাগরিকদের নজর কাড়ে। সেই অভিযানে উপস্থিত বক্তারা নাগরিকদের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জনের বিষয়টি নিয়ে মত বিনিময় করেন।
সংস্থার সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, 'আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য একটি শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। শরীর সুস্থ রাখতে যোগ ব্যায়াম যে কতটা জরুরী। যোগ অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করেছি'।
'স্ট্রিট টু মিউজিয়াম ড্রাইভ' শীর্ষক অন্য আরেকটি একটি অনুষ্ঠানে শামিল করা হয়েছিল সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। সেই শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারতীয় জাদুঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইতিহাস এবং বিজ্ঞান বিষয়ক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বক্তারা তাঁদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন পথ শিশুদের কাছে।
সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে গোলাম ফারুক
করোনার সময়ে যখন শহর জুড়ে লকডাউন চলছে তখন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের প্রান্তিক মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিল এই সংস্থা। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ এই পরিষেবা পেয়েছেন। এমনটাই দাবি করলেন সংস্থার সভাপতি গীতি হাকিম। তার কথায়,'নারীর অধিকার আদায়ের বিষয়টি নিয়ে আমরা নিয়মিত প্রচার অভিযান চালাই। বিশেষ করে মুসলিম সমাজের নারীদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার প্রয়াস এই সংস্থা দেখিয়ে আসছে।'
উপসংহার "সকলের জন্য অধিকার" ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি এবং মানবিক মর্যাদার আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। গোলাম ফারুক এবং গীতি হাকিমের নেতৃত্বে, এই সংস্থা সমস্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের কর্মূ অব্যাহত রেখেছে।