ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক বিক্রম সারাভাই : ৯টি বিস্ময়কর তথ্য

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 15 d ago
ডাঃ বিক্রম সারাভাই এবং চন্দ্রযান 3 এর বিক্রম ল্যান্ডার
ডাঃ বিক্রম সারাভাই এবং চন্দ্রযান 3 এর বিক্রম ল্যান্ডার
 
নয়া দিল্লি

আজ মহাকাশে ভারতের যে দাপট, চাঁদের বুকে পদচিহ্ন, মঙ্গলের কক্ষপথে অভিযান, তার শিকড় লুকিয়ে আছে এক ব্যক্তির স্বপ্নে। তিনি হলেন ড. বিক্রম সারাভাই, যাঁকে যথার্থই বলা হয় “ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক”। 
 
তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজকের ইসরো (ISRO), ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন, যা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মহাকাশ সংস্থা।
 
জাতীয় মহাকাশ দিবস
 
স্যাটেলাইট ইন্সট্রাকশনাল টেলিভিশন এক্সপেরিমেন্ট (SITE) এবং ভারতের প্রথম উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’-র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির পেছনে ছিলেন তিনি। মহাকাশে আত্মনির্ভরশীল হতে হলে উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়া, উপগ্রহ নির্মাণ শুরু করা এবং NASA-র সঙ্গে সহযোগিতা,  এসবের ভিত্তি তিনিই গড়ে দিয়েছিলেন।
 
থুম্বা থেকে ভারতের প্রথম রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতির ছবি
 
২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট চন্দ্রযান-৩ মিশনের ‘বিক্রম ল্যান্ডার’ চাঁদে সাফল্যের সঙ্গে অবতরণ করে এবং ‘প্রজ্ঞান রোভার’ নামানো হয়। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণ করে ২৩ আগস্ট পালিত হচ্ছে জাতীয় মহাকাশ দিবস। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে মনে করা যাক সারাভাইয়ের কিছু অজানা কাহিনি:
 
১. রকেট চেপে নয়, সাইকেল চেপে শুরু
 
সারাভাই-এর নেতৃত্বে ১৯৬৩ সালে ভারতের প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ হয় তুম্বা ইকুয়েটোরিয়াল রকেট লঞ্চিং স্টেশন (TERLS) থেকে। NASA সরবরাহ করা নাইকি-অ্যাপাচি সাউন্ডিং রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল। ছোট একটি জেলেপাড়া বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ এটি পৃথিবীর চৌম্বকীয় নিরক্ষরেখার কাছাকাছি।
 
কাহিনিটি বিখ্যাত হয়েছিল এর বিনম্র সূচনার জন্য, প্রথম রকেটটি আনা হয়েছিল সাইকেলে চেপে, আর গির্জার ভবন ব্যবহার করা হয়েছিল ল্যাব ও কর্মশালার জন্য। রাশিয়ার স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর সারাভাই ভারত সরকারকে বোঝান যে উন্নয়নশীল দেশ হয়েও দেশীয় মহাকাশ কর্মসূচি জরুরি। এর ফলেই ১৯৬২ সালে গঠিত হয় INCOSPAR (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ), যা ১৯৬৯ সালে রূপ নেয় ইসরোতে।
 
রকেট বয়েজ (ওটিটি সিরিয়াল) এর দৃশ্য যেখানে হোমি জে ভাবা এবং বিক্রম সারাভাই দেখাচ্ছেন
 
২. সমৃদ্ধ পরিবারে জন্ম
 
১৯১৯ সালের ১২ আগস্ট গুজরাটের আহমেদাবাদে জন্ম নেন তিনি। জৈন পরিবার, পিতা অম্বালাল সারাভাই ছিলেন বড় শিল্পপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সহায়ক। ছোট থেকেই ছিল বিজ্ঞানচর্চার অনুকূল পরিবেশ।
 
৩. ২৮ বছরেই গবেষণার সাম্রাজ্য
 
মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি গড়ে তোলেন ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (PRL)। এর পাশাপাশি বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স (IISc)-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
 
৪. বিজ্ঞান ছাড়াও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক
 
বিজ্ঞানী হয়েও তিনি গড়ে তোলেন দেশের একাধিক নামী প্রতিষ্ঠান, আই আই এম আহমেদাবাদ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ডিজাইন, কমিউনিটি সায়েন্স সেন্টার, আর স্ত্রীর সঙ্গে মিলেই ‘দর্পণ একাডেমি ফর পারফর্মিং আর্টস’।
 
ডঃ বিক্রম সারাভাই এবং মৃণালিনী সারাভাই
 
৫. ব্যবসায়ও সমান সাফল্য
 
প্রগতিশীল শিল্পপতি পরিবার থেকে আসা সারাভাই বিজ্ঞান ও সংগঠনের দক্ষতা কাজে লাগান ব্যবসাতেও। তিনি চালান পারিবারিক প্রতিষ্ঠান, সারাভাই কেমিক্যালস ও স্বস্তিক অয়েল মিল। এছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের প্রথম বাজার গবেষণা সংস্থা ‘অপারেশন্স রিসার্চ গ্রুপ’ (ORG)।
 
৬. নতুন প্রজন্মকে হাত ধরে নিয়ে যাওয়া
তিনি তরুণ প্রতিভাদের পরামর্শদাতা ছিলেন, যেমন ড. এপিজে আব্দুল কালাম, যিনি পরবর্তীতে ‘মিসাইল ম্যান’ নামে পরিচিত হন, এবং ড. সতীশ ধাওয়ান, যিনি ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন।
 
৭. ভাভার সঙ্গে যুগলবন্দি
 
হোমি জে. ভাভা আর বিক্রম সারাভাই, দু’জনের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভারতের বিজ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ভাভা যেখানে পারমাণবিক কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন, সারাভাই সামলাচ্ছিলেন মহাকাশের স্বপ্ন।
 
৮. সরল জীবনযাপন
 
ড. বিক্রম সারাভাই তাঁর সরল ভারতীয় পোশাকের জন্য পরিচিত ছিলেন। সাধারণত তিনি সাদা কুর্তা-পাজামা এবং কোলহাপুরি চপ্পল পরতেন। তিনি পাশ্চাত্য ধাঁচের ফরমাল জুতো পরতেন না বললেই চলে।
 
ইন্ডিয়ারা গান্ধীর সাথে চপল পায়ে ডাঃ সারাভাই
 
৯. রহস্যে মোড়া মৃত্যু
 
১৯৭১ সালে মাত্র ৫২ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি, কেরালার তিরুবনন্তপুরমের এক হোটেলে। সুস্থ-সবল মানুষ হওয়ায় তাঁর মৃত্যু আজও প্রশ্ন জাগায়। রেখে গেছেন এক অমূল্য উত্তরাধিকার, যা বহন করছেন তাঁর কন্যা মল্লিকা সারাভাই (নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী) এবং পুত্র কার্তিকেয় সারাভাই (বিজ্ঞানী ও সমাজশিক্ষক)।