শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নাম সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। তিনি কেবল একজন ঔপন্যাসিক বা গল্পকারই নন, ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভাধর সাহিত্যিক। তাঁর জন্ম ১৪ অক্টোবর ১৯৩০ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রামে। এক গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা এই লেখক পরে হয়ে ওঠেন সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাম।
সাহিত্য জীবন
প্রথম জীবনে তিনি একটি যাযাবর বাউলদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং গান লিখতেন, সুর দিতেন, গাইতেনও। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে তাঁর সাহিত্যকর্মে গভীর প্রভাব ফেলে। ষাটের দশক থেকে তিনি নিয়মিত ছোটগল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর লেখায় গ্রামীণ বাংলার নিসর্গ, মানুষের সুখ-দুঃখ, সংগ্রাম ও সামাজিক বাস্তবতা প্রাণবন্তভাবে ফুটে ওঠে।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখক সত্তায় জড়িয়ে ছিল রাঢ়ের রুক্ষ মাটি। মুর্শিদাবাদের পাশের জেলা বীরভূম। যেখানে লাভপুর গ্রামে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। একই জলহাওয়া তাঁদের দুজনকেই প্রাণোন্মাদনা দিয়েছিল। তাই তারাশঙ্কর বলতেন, "আমার পরেই সিরাজ, সিরাজই আমার পরে অধিষ্ঠান করবে।" তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে সিরাজ বলেছেন , " তারাশঙ্কর তো হিমালয় , আমি তাঁর তুলনায় উইঢিবি মাত্র"।
প্রধান উপন্যাসসমূহ: অলীক মানুষ, আলতাবানু, তৃণভূমি, গলির ঘর, মিথ্যাজীবী প্রভৃতি।
ছোটগল্প সংকলন: কালো আকাশের নিচে, মৌমাছি ও অন্যান্য গল্প, জলপাইগঞ্জের সন্ন্যাসী ইত্যাদি।
গোয়েন্দা সিরিজ:
ভৌতিক গল্প: সিরাজের লেখা ভৌতিক গল্পের সংখ্যা প্রচুর। তাঁর লেখা অনেক ভৌতিক কাহিনী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে হলেও , মূলত ছোটদের কথা মাথায় রেখেই লিখেছেন তাঁর সিংহভাগ ভৌতিক কাহিনী। প্রসঙ্গত , বাংলার " হরর কমেডি " ধারার অন্যতম প্রাণপুরুষ তিনিই।
স্বীকৃতি ও পুরস্কার
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার—- ১৯৯৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (অলীক মানুষ - - উপন্যাসের জন্য)- বঙ্কিম পুরস্কার- আনন্দ পুরস্কার সহ নানা সম্মাননা
প্রয়াণ:
দীর্ঘ সাহিত্যজীবন শেষে ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে কলকাতায় তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে তিনি রেখে গেছেন এক অমূল্য সম্পদ—যেখানে গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা যেমন আছে, তেমনি আছে রহস্য, রোমাঞ্চ আর মানবিকতার গভীর সুর।
আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা এবং বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য তাঁর অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা প্রত্যেক বাঙালির কর্তব্য। তাঁর লেখা আজও পাঠককে আলোড়িত করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।