স্কুলের মাশুল দিতে না পারা সাফিন হাসান এখন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী আইপিএস অফিসার

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 22 d ago
আইপিএস সাফিন হাসান
আইপিএস সাফিন হাসান
 
আওয়াজ দ্য ভয়েস অসম ব্যুরো

কখনও টাকার অভাবে স্কুলের ফি দিতে সমস্যা হয়েছে, কখনও বই কেনার জন্য তাঁর মা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেছেন, আবার কখনও ঘরের খরচ চালাতে তাঁর বাবা দিনরাত খেটে চলেছেন। 
 
এই ধরনের কঠিন আর সংগ্রামী পরিস্থিতির মধ্যেই বড় হয়ে ওঠা সাফিন হাসান এমন কিছু করে দেখিয়েছেন, যা কেউ ভাবতেই পারেনি। মাত্র ২২ বছর বয়সে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সবচেয়ে কমবয়সী আইপিএস অফিসার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন সাফিন হাসান। তাঁর এই কাহিনি দৃঢ়তা, সাহস ও কঠোর পরিশ্রমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

সাফিন হাসান ১৯৯৫ সালে গুজরাটের পালানপুরের এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি যেমন নানা চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, ঠিক তেমনই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন আইপিএস অফিসার হওয়ার পথেও। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর বাবা-মা এক সময় হিরে শিল্পে কাজ করতেন।

 
কিন্তু ২০০০ সালে মন্দার কারণে তাঁদের পরিবার চাকরি হারায়। এরপর সাফিনের মা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ শুরু করেন এবং তাঁর বাবা ইট বহনের কাজ ধরেন। সংসার চালাতে তাঁরা সন্ধ্যেবেলা একটি ভ্যানে সিদ্ধ ডিমও বিক্রি করতেন।

গুজরাটের ছোট্ট গ্রাম পালানপুর থেকে উঠে এসে দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা UPSC-তে উত্তীর্ণ হওয়া সাফিনের পক্ষে মোটেই সহজ ছিল না। শৈশবে একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে জেলা কালেক্টরের কনভয় দেখে সাফিন ঠিক করেছিলেন, একদিন তিনিও একজন উচ্চপদস্থ অফিসার হবেন।

সীমিত সম্পদের মধ্যেই জীবনযাপন করা সাফিন দিনরাত এক করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন এবং প্রতিটি সমস্যাকে রূপান্তর করেছেন এক একটি সুযোগে। কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে সাফিন হাসান প্রমাণ করেছেন যে প্রতিভাকে কোনো কিছুতেই দমিয়ে রাখা যায় না। তাঁর এই যাত্রা লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর জন্য এক আশার আলো।

অভিযান্ত্রিক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয়ে পড়াশোনার সময়ও সাফিন হাসানের মনোযোগ ছিল সবসময় সিভিল সার্ভিসের দিকেই। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি UPSC সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

ব্যয়বহুল কোচিং কিংবা বড় শহরের সুবিধা না থাকলেও, সাফিন শুধুমাত্র কয়েকটি বই, ইন্টারনেট ও নিজের তৈরি পড়াশোনার কৌশল দিয়ে প্রস্তুতি চালিয়ে যান। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করে, মক টেস্ট দিয়ে, নিজের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করে তা উন্নত করতে থাকেন।

 
ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রথম প্রচেষ্টায় সাফিন হাসান এতটাই বড় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিলেন যে অনেকেই হলে হয়তো সেখানেই হাল ছেড়ে দিতেন। ইউপিএসসি মেইনস পরীক্ষার আগে একটি গুরুতর দুর্ঘটনায় পড়ার পরেও তিনি হার মানেননি এবং হুইলচেয়ারে বসেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষা দেন।

এই মানসিকতাই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। সাফিন হাসানের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের ফলেই তিনি প্রথম প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন। এমনকি সাক্ষাৎকারের আগেও তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবুও তিনি দমে যাননি এবং ২০১৭ সালের ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ৫৭০তম র‍্যাংক অর্জন করেন।

এই সাফল্যের পর তাঁকে গুজরাট ক্যাডারে আইপিএস অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আইপিএস প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করার পর তিনি ইতিমধ্যেই একাধিক জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

আইপিএস সাফিন হাসান সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুব সক্রিয়। ইনস্টাগ্রামে ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ তাঁকে অনুসরণ করেন। তাঁর জীবন প্রমাণ করে, প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ আসলে আপনার সাফল্যের গল্পকে আরও শক্তিশালী করে তোলে — এগুলি কখনোই আপনাকে থামিয়ে দিতে পারে না।