মুক্তেশ্বর কেম্প্রাইকে কেন গ্রেফতার করছে না পুলিশ,ভাষা শহিদ স্টেশন ও সোনার বাংলা বিতর্ক নিয়ে সরব হল বিডিএফ
শিলচর ঃ
ভাষা শহিদদের বহিরাগত বলে অপমান করার পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কিত ব্যাক্তিত্ব মুক্তেশ্বর কেম্প্রাই এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বরাকের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। অথচ আজ অব্দি গ্রেফতার তো দূরস্থান, তাঁকে জেরা পর্যন্ত করেনি পুলিশ প্রসাশন। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের গান 'সোনার বাংলা' নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্য ও পদক্ষেপ এই দলের বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাবকে প্রকট করেছে। এসব নিয়ে এবার সরব হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে ভাষা শহিদদের প্রতি ডিমাসা রাইটার্স ফোরামের সভাপতি জনৈক মুক্তেশ্বর কেম্প্রাই এর অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বরাক বাসী। বিজেপি দলের বিধায়করাও এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। কাছাড় জেলার ডিমাসা সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকেও এই মন্তব্যের বিরোধীতা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক গুলো মামলা দায়ের করা হয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আজ অব্দি গ্রেফতার তো দূরস্থান, পুলিশ প্রসাশনের পক্ষ থেকে তাকে জেরা করা হয়েছে এমনও কোন খবর নেই। জয়দীপ বলেন যেখানে শাসক দলের বিধায়করা এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, সেখানে এই বিতর্কিত ব্যাক্তি নিঃশর্ত ক্ষমা তো দূরস্থান উল্টে উত্তেজক মন্তব্য করছেন। তাঁর প্রশ্ন এই ব্যাক্তির এতো সাহস হয় কি করে! পুলিশ প্রসাশনই বা তার ব্যাপারে এখন অব্দি নির্বিকার কেন ? তার মানে কি এটা ধরে নিতে হবে যে তার পেছনে কোন বড় নেতা মন্ত্রীর আশির্বাদ রয়েছে এবং এসব করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা পুর্ব পরিকল্পিত ? জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে পুলিশ প্রসাশন অবিলম্বে তাঁকে গ্রেফতার করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক।নতুবা তাকে বরাক বাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য করুক। অন্যথা এই ইস্যুতে সম্মিলিত ভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে বরাক বাসীকে।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন যে সম্প্রতি শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেসের এক অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান নেতা বিধুভূষন দাস রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গান ' আমার সোনার বাংলা ' গাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করেছেন বিজেপি দলের নেতারা। তিনি বলেন তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়েছেন বলে যে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে তা হাস্যকর। কারণ প্রথমত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী এই সভা 'বন্দে মাতরম' গান দিয়ে শুরু করা হয়েছিল এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ' জনগনমন' গেয়ে শেষ করা হয়েছিল। তাই ' সোনার বাংলা 'বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়েছে এই বক্তব্য ধোপে টেকেনা। দ্বিতীয়ত ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রতিবাদে এই গানটি রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তখন বাংলা বলতে বৃহত্তর বঙ্গের কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে বর্তমান পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খণ্ড,বিহার এবং সুরমা উপত্যকা সহ কাছাড় জিলাও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই গান লক্ষ লক্ষ মানুষের কন্ঠে গীত হয়েছে,মাতৃসমা বঙ্গভূমির মান রক্ষার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে এই গান মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই গানের একাংশ জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেছিল তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার। তাই ভারতবাসীর কাছে এই গান মোটেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নয়,এটি একটি অনবদ্য দেশাত্মবোধক গান যা আজ অব্দি অনেক ভারতীয় শিল্পী রেকর্ড করেছেন। আজো প্রাণের গান হিসেবে অসংখ্য বাংলাভাষী এই গান গুনগুন করেন। প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে হিন্দু মুসলমানের নিকৃষ্ট রাজনীতি করতে গিয়ে এবার বিশ্বকবিকেও রাজনৈতিক বোড়ে বানাবার অপচেষ্টা করছে বিজেপি দল। এতে স্পষ্ট যে এইদল রবীন্দ্র আদর্শ তথা বাঙালি বিদ্বেষী। প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন যে গানের কোন জাত,ধর্ম হয়না। তাই অবিলম্বে এইসব মামলা প্রত্যাহার করে বাঙালির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বিজেপি দলকে। নতুবা এর বিরুদ্ধে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র বরাক বাসীকে গর্জে উঠতে হবে।
তিনি বলেন যে আমরা ধর্মের আফিম আর ভয়ের সংস্কৃতিতে এতটাই মুহ্যমান যে যখন সুদুর পশ্চিম বঙ্গে এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে, তখন সামাজিক মাধ্যমে দু একটি প্রতিবাদী পোষ্ট বাদ দিয়ে আমরা এখনও নির্বিকার হয়ে রয়েছি। অথচ এই রবীন্দ্রনাথই ভারতবর্ষকে সেই স্বর্গে জাগরিত করতে চেয়েছিলেন ' চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির '। তিনি বলেন আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে,ভয়ের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রানের গানকে যাতে কেউ অসম্মান করতে না পারে তাঁর দায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরকেই। নতুবা পরবর্তী প্রজন্ম এনিয়ে আমাদের প্রশ্ন করতেই পারে।
বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এদিন বলেন যে মুক্তেশ্বর কেম্প্রাই এর এই বিতর্ক তৈরি করে ইচ্ছাকৃতভাবে 'ভাষা শহিদ স্টেশন 'নামকরণের দাবিকে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন আগামী নির্বাচনের আগে যে কোন অবস্থায় বরাক বাসীর আবেগের সাথে যুক্ত এই দাবি সরকারকে বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছেন তিনি। নতুন বরাক বাসীকে ভোটের বাক্সে এর যোগ্য প্রত্যুত্তর দিতে এদিন আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।