প্রদীপ দত্ত রায়
শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ভাষা শহিদ রেলস্টেশন নাম করার দাবিতে আসাম সরকারের মনোভাব বরাবরুই নেতিবাচক। না হলে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয় এই নামকরণের অনুমোদন দিলেও শুধুমাত্র আসাম সরকারের অনীহার জন্য এটা আটকে রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ইস্যুতে জোড় গলায় বলেছেন রাজ্য সরকার এনওসি দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখানে এনওসি দেওয়ার কোনও বিষয় জড়িত নেই। ২০১৫ সালে কেন্দ্র আসাম সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল 'ভাষা শহিদ স্টেশন শিলচর ' নামকরণের বানানটা কেমন হবে তা অনুমোদন করে কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে। কিন্তু এ চিঠির কোনো জবাব আসাম সরকার আজ অবধি দেয়নি। ফলে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।
শিলচর রেলস্টেশনকে ভাষা শহিদ স্টেশন করার দাবিটি দীর্ঘদিনের হলেও এটা যাতে বাস্তবায়িত না হয় সেজন্য নানাভাবে প্যাঁচ কষা হচ্ছে। সম্প্রতি ডিমাসা লেখক ফোরামের সভাপতি মুক্তেশ্বর ক্যাম্প্রাই নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনকারীদের বাংলাদেশী আখ্যা দেওয়ানো হয়েছে। দেওয়ানো হয়েছে এজন্যই বলছি কারণ , তার ভাষ্যে রাজ্য সরকারের সুর বাজছে। ওই ব্যক্তির হয়তো জানা নেই ৬১'র ভাষা আন্দোলনের বাঙালিদের সঙ্গে মনিপুরী, ডিমাসা ,চা বাগান সম্প্রদায় সহ অন্যান্য জনজাতি জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এমন একটি সংবেদনশীল ইস্যুতে বেফাঁস মন্তব্য বরাক উপত্যকার আমজনতার মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে এটা জেনেই ওই ব্যক্তি এমন কাজ করেছেন।
যদিও অসমের ডিমাসা সাহিত্য পরিষদ ক্যামপ্রাইর বক্তব্য খন্ডন করেছে। পরিষদ স্পষ্টই বলেছে ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট ভাষিকগোষ্ঠীর কোনো লাভ ক্ষতির বিষয় জড়িত নেই। ৬১ সালের আন্দোলনে ডিমাসাদের সমর্থন ছিল এ কোথাও তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। শিলচর রেল স্টেশনের নাম ভাষা শহিদ স্টেশন হলে কোনভাষিক গোষ্ঠীর এতে কোন ধরনের লাভ বা ক্ষতি নেই। বরং ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে নিরীহ যে ১১ জন ব্যক্তি শহিদ হয়েছিলেন তাদের সেই আত্মত্যাগের যথার্থ মূল্যায়ন এই নামকরণের মধ্যেই হতে পারে।
সর্বশেষ অসম সাহিত্য সভার কেন্দ্রীয় সভাপতি বসন্তকুমার গোস্বামী নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে চিঠিও লিখেছেন। বসন্ত গোস্বামী এই চিঠি লেখার পর হঠাৎ করে ভুইফোড়ের মত উদয় হয়েছে ডিমাসা লেখক ফোরাম নামক সংগঠনের। এই সংগঠনটি গড়ে তোলার পিছনে কে কলকাঠি নাড়ছে সেটা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। কারণ যেন তেনো প্রকারে ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণকে আটকে দেওয়া সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এই বাস্তবকে বরাক উপত্যকার শাসকদলের সদস্যরা অস্বীকার করতে পারবেন না। তবে তারা রাজনৈতিক কারণেই এ নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন।