রাজ্যে এস আই আর শুরু, প্রশিক্ষণ শেষে আজ থেকেই বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি শুরু করলেন বিএলওরা

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 Months ago
রাজ্যে এস আই আর শুরু, প্রশিক্ষণ শেষে আজ থেকেই বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি শুরু করলেন বিএলওরা
রাজ্যে এস আই আর শুরু, প্রশিক্ষণ শেষে আজ থেকেই বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি শুরু করলেন বিএলওরা
দেবকিশোর চক্রবর্তী

শেষ পর্যন্ত রাজ্যে শুরু হলো ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া বা এসআইআর (Special Intensive Revision)। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই প্রক্রিয়া ঘিরে তৈরি হয়েছিল নানা জল্পনা, আশঙ্কা এবং বিতর্ক। বহু জায়গায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, এমনকি এসআইআর আতঙ্কে কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও প্রকাশ্যে এসেছে।

ঠিক এই পরিস্থিতিতেই আজ, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলির কাজ। গত এক সপ্তাহ ধরে ব্লক স্তরের সরকারি আধিকারিক এবং বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলওদের প্রশিক্ষণ চলার পর, তাঁরা আজ থেকে মাঠে নামছেন। উদ্দেশ্য একটাই—প্রত্যেক বৈধ ভোটার যেন ভোটার তালিকায় নাম লেখানোর সুযোগ পান এবং কোনো বৈধ নাম যেন বাদ না পড়ে।

   নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এবারের এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভোটার তালিকার যথার্থতা এবং হালনাগাদ করার ওপর। প্রতিটি বুথ এলাকায় নির্দিষ্ট বিএলওরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তাঁদের হাতে দেওয়া হবে এনুমারেশন ফর্ম। এই ফর্মে নাগরিকদের নিজেদের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম, বয়স, ঠিকানা, জন্মতারিখ এবং প্রমাণপত্রের তথ্য দিতে হবে। নতুন ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রয়োজনে মৃত বা স্থানান্তরিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়াও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

এদিকে, এসআইআর নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার জানিয়েছেন, রাজ্যের কোনো বৈধ নাগরিকের নাম যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের দাবি, “এসআইআর প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে মানুষকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা চলছে।” সাম্প্রতিক কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায় এসআইআরের আতঙ্কই দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে আজই কলকাতার রাজপথে নেমে প্রতিবাদ মিছিল করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
 
     অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এই প্রক্রিয়া নিয়ে সরব। তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকার যেন এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করে এবং কোনো দলীয় প্রভাব যেন না পড়ে। বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ই জানিয়েছে, ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু তাতে যদি ভয়, আতঙ্ক বা রাজনৈতিক প্রভাব ঢুকে যায়, তবে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করবে।

    নির্বাচন কমিশনের তরফে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি বুথে সচেতনতামূলক পোস্টার টাঙানো হবে এবং ফর্ম বিলির সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, যাতে কোথাও কোনো গুজব না ছড়ায় এবং এসআইআর প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেই ব্যবস্থাও নিতে।

রাজ্য প্রশাসনের এক সিনিয়র আধিকারিক বলেন, “এসআইআর মূলত একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, কিন্তু এবারে মানুষকে আতঙ্কিত করার প্রবণতা দেখা গেছে। আমরা চাই, মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোক, ভয় না পাক।”

সবমিলিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহ এখন এসআইআর কেন্দ্রিক উত্তেজনায় মোড়া। একদিকে ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, অন্যদিকে তার ঘিরে রাজনৈতিক তরজা—এই দুইয়ের মাঝেই সাধারণ মানুষ এখন অপেক্ষা করছেন, কীভাবে এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত এগোয়। আজ থেকে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে যখন বিএলওরা মাঠে নামছেন, তখন তাঁদের দায়িত্ব কেবল ফর্ম বিলি নয়, বরং মানুষের আস্থা ফেরানোও। কারণ, গণতন্ত্রে ভোটার তালিকাই নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রথম ধাপ।