গুয়াহাটি
শীতের হাওয়া বইতে শুরু হলেই বাড়তে থাকে সর্দি–কাশি, জ্বর, ত্বকের শুষ্কতা ও নানা সংক্রমণের ঝুঁকি। কিন্তু ঠিক এই সময়েই প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয় এমন কিছু খাদ্য, যা শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। পুষ্টিবিদদের ভাষায় এগুলোকেই বলা হয় উইন্টার সুপারফুড, এমন খাবার যা ঠান্ডা মরসুমে শরীরের জন্য একপ্রকার অদৃশ্য ঢাল তৈরি করে। শীতকে ভয় নয়, সঠিক খাবারের মাধ্যমে জয় করা সম্ভব, আর সেই খাদ্য তালিকায় কোনগুলি থাকা উচিত, দেখে নেওয়া যাক।
শাকসবজি (পালং, মেথি, সর্ষে ইত্যাদি): শীতের বাজারে পাওয়া বিভিন্ন শাক ভিটামিন–এ, ভিটামিন–কে, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও আয়রনে ভরপুর। এগুলো রক্তশূন্যতা কমায়, হাড়কে মজবুত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত শাক খেলে শীতের সর্দি–কাশি ও ক্লান্তি কমে।
গাজর: শীতকালের লাল গাজর বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন-এ-এ সমৃদ্ধ, যা চোখ ও ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। এটি রক্ত পরিষ্কার করে ও টক্সিন দূর করে। সালাড, জুস বা গাজরের হালুয়া, যেভাবেই গ্রহণ করা হোক, স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত।
ব্রোকলি ও ফুলকপি: শীতে সহজলভ্য এই দুটি সবজিতে থাকে প্রচুর ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার। এগুলো হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। নিয়মিত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
শীতের ফল (কমলা, মাল্টা, আপেল, ডালিম, পেয়ারা): শীতের ফলে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ সর্বাধিক, যা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষাবলয় তৈরি করে। ডালিম রক্তশূন্যতা কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর, আর কমলা ও মাল্টা রক্তচাপ ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত রাখে।
শুকনো ফল (বাদাম, কাজু, পেস্তা, আখরোট): স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও ওমেগা–৩ সমৃদ্ধ শুকনো ফল শরীরে শক্তি যোগায়, ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। শীতকালে প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে খেলে দুর্বলতা ও ক্লান্তি কমে।
আদা ও রসুন: শীতের প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে আদা ও রসুনের তুলনা নেই। আদা সর্দি–কাশি প্রতিরোধ করে ও শরীরে তাপ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে রসুন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরভাবে কাজ করে।
গুড় ও খেজুর: গুড় শরীর গরম রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। খেজুর শক্তির অন্যতম ভালো উৎস, যা আয়রন ও প্রাকৃতিক চিনি সরবরাহ করে। শীতে প্রতিদিন গুড় বা খেজুর গ্রহণ শরীরকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে।
হলুদ দুধ: অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ হলুদ দুধ শীতের সর্দি-জ্বর প্রতিরোধে কার্যকর। রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধে একটু হলুদ মিশিয়ে খেলে শরীর উষ্ণ থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সময় খাদ্যতালিকায় নিয়মিত এসব সুপারফুড যুক্ত থাকলে সর্দি-কাশি, সংক্রমণ, দুর্বলতা ও ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। অর্থাৎ শীতের প্রকৃত আশীর্বাদ প্রকৃতির খাবারেই লুকিয়ে। স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ওষুধ নয়, সুপারফুডই হোক শীতের সঙ্গী।