শতানন্দ ভট্টাচার্য :
অসমের বরাক উপত্যকার শ্রীভূমি (পূর্ব নাম করিমগঞ্জ) জেলার ভারত-বাংলা সীমান্তবর্তী মালেগড় মূলত ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের এক গুরুত্বপূর্ণ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্রের স্মৃতি বহন করে, যেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ২৬ জন ভারতীয় সিপাহী জীবন উৎসর্গ করেছিলেন । দেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের এটি এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
আজ ১৮ ডিসেম্বর ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের বীর শহীদদের স্মরণ করতে সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত লাতুর মালেগড় টিলায় শহীদ দিবস পালন করা হয়। শ্রীভূমি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বিএসএফ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাটকাই ট্রেকার্স ও বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সহযোগিতায় সোমবার বিভিন্ন কার্যসূচির মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়।
সকালেই টিলার শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, ১৬৪ টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং বিএসএফ জওয়ানদের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার প্রদর্শন করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মালেগড় টিলার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সাংবাদিক তথা ত্রিপুরা সরকারের প্রাক্তন তথ্য আধিকারিক পান্নালাল রায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ মিশন রঞ্জন দাস। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বি এস এফের ডেপুটি কমান্ডেন্ট আর পি যাদব, সরকারি আধিকারিক জাগৃতি কালোয়ার, লংবং টেরং, আইনজীবী দাইয়ান হুসেইন, পঞ্চায়েত নেত্রী স্নিগ্ধা দাস, পাটকাই ট্রেকার্সের অরূপ রায় প্রমুখ। বিভিন্ন সাংস্কৃতি সংস্থার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন অস্ত্র শস্ত্রের প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, শ্রীভূমি শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দুর মালেগড়ে বিদ্রোহের সময় ১৮৫৭ সালের চট্টগ্রামে অবস্থিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ৩৪তম নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সিপাহীরা বিদ্রোহ করে অস্ত্র ও অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। বিদ্রোহী সিপাহীরা তৎকালীন সিলেটে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) এবং পরে অসমের করিমগঞ্জের মালেগড় টিলায় ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এই যুদ্ধে মেজর বিং সহ অনেক ব্রিটিশ সৈন্য এবং বহু বিদ্রোহী সিপাহী নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৬ জন সিপাহীকে মালেগড় টিলায় সমাধিস্থ করা হয়।