২০২৫-এ অনুপ্রবেশের শীর্ষে বাংলাদেশি নাগরিকরা, লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 16 h ago
২০২৫-এ অনুপ্রবেশের শীর্ষে বাংলাদেশি নাগরিকরা, লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য
২০২৫-এ অনুপ্রবেশের শীর্ষে বাংলাদেশি নাগরিকরা, লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য
 
আওয়াজ  দ্যা ভয়েস / নয়াদিল্লি / ঢাকা

ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যাই সর্বাধিক। লোকসভায় এই তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় জানান, বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তের বিভিন্ন অংশে সক্রিয় অভিযানের সময় বিএসএফ মোট ২,৫৫৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে, যা চলতি বছরে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যা। 
 
রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার , নেপাল ও ভুটান, এই পাঁচটি দেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টাকালে মোট ৩,১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের। এর পরেই রয়েছে মিয়ানমার, যেখানে ৪৩৭ জন অনুপ্রবেশের অভিযোগে ধরা পড়ে। একই সময়ে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ৪৯ জন এবং ভারত–নেপাল–ভুটান সীমান্ত থেকে ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কিছু ব্যক্তিরা
 
নিত্যানন্দ রায় বলেন, এটি কোনও নতুন সমস্যা নয়। গত এক দশকের প্রবণতা অনুযায়ী, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যাই ধারাবাহিকভাবে সর্বাধিক। তিনি জানান, ২০১৪ থেকে ২০২৪, এই ১০ বছরে ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন অংশ থেকে মোট ১৮,৮৫১ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
 
এই একই সময়কালে মায়ানমার সীমান্তে বিএসএফ ১,১৬৫ জনকে আটক করেছে, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ৫৫৬ জন এবং ভারত–নেপাল–ভুটান সীমান্ত থেকে ২৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায় যে ভারতে অবৈধ অভিবাসনের সবচেয়ে বড় চাপ বাংলাদেশ থেকেই আসছে।
 
ভারতের স্থলসীমান্ত ছয়টি দেশের সঙ্গে সংযুক্ত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও চীন। এই সীমান্তগুলির মোট দৈর্ঘ্য ১৫,১০৬.৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তই সবচেয়ে দীর্ঘ, ৪,০৯৬.৯০ কিলোমিটার; যা অবৈধ অভিবাসনের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
 
অবৈধ অভিবাসন রুখতে ভারত একাধিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং বিএসএফের টহল আরও কঠোর করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কিছু ব্যক্তিরা
 
অনুপ্রবেশের ঘটনার বৃদ্ধি এবং তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ, উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। বিএসএফ নিয়মিত নজরদারি ও নিরাপত্তা অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের আটকানোর চেষ্টা করছে। রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশ মানুষই চাকরি, শিক্ষা বা অন্যান্য সুযোগের সন্ধানে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী সময়মতো তাদের ধরে ফেলে।
 
পরিসংখ্যান বলছে, অবৈধ অভিবাসনের সবচেয়ে বড় বোঝা আসে বাংলাদেশ থেকে। নিত্যানন্দ রায়ের মতে, চলতি বছরে গ্রেপ্তার হওয়া মোট ৩,১২০ জন অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই বাংলাদেশি, যেখানে মায়ানমার, পাকিস্তান ও নেপাল–ভুটান সীমান্ত থেকে তুলনামূলকভাবে খুব কম সংখ্যক গ্রেপ্তার হয়েছে।
 
বিএসএফের কৌশলে কেবল সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোই নয়, অভিবাসীদের পরিচয় শনাক্তকরণ, নথিভুক্তিকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য একটি স্থায়ী চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক সহযোগিতাও জরুরি।
 
গত কয়েক বছরে ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে একাধিক আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, যেমন সেন্সর, ড্রোন ও নজরদারি টাওয়ার, যা বিএসএফকে অবৈধ কার্যকলাপে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম করে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী সম্প্রদায়গুলির মধ্যেও সচেতনতা অভিযান চালানো হয়েছে, যাতে মানুষ অবৈধ অভিবাসনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়।
 
বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কিছু ব্যক্তিরা
 
লোকসভায় নিত্যানন্দ রায় স্পষ্ট করেন যে অবৈধ অভিবাসন কেবল নিরাপত্তাজনিত বিষয় নয়, এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীর আগমনে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশৃঙ্খলা, কর্মসংস্থানের উপর চাপ এবং সম্পদের ঘাটতির মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়।
 
রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তা নীতি ও বিএসএফের সক্রিয় নজরদারি ভবিষ্যতে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তিনি আশ্বাস দেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের আরও কার্যকর ব্যবহার করা হবে।
 
এইভাবে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত নজরদারি ও গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায় যে বাংলাদেশ ভারতের জন্য অবৈধ অভিবাসনের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবেই রয়ে গেছে, এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে।