ষাটের দোরগোড়ায়ও রঙিন জীবনের ছন্দে শাহরুখ খান – সাফল্যের শিখরে ‘কিং খান’-এর নতুন অধ্যায়
দেবকিশোর চক্রবর্তী
বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান যেন সময়ের স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা এক অদম্য প্রতীক। ষাটের দোরগোড়ায় এসে যেভাবে নিজেকে নতুন করে রঙিন নায়কের আসনে স্থাপন করেছেন, তাতে অবাক অনুরাগীরা। জীবনের ছয় দশক পূর্ণ করতে চলেও শাহরুখ যেন আগের মতোই তরুণ, প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল—কর্ম, সাফল্য ও ভালোবাসায় ভরপুর।
সম্প্রতি বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় নাম তুলেছেন কিং খান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ইতিমধ্যেই ১০ হাজার কোটির গণ্ডি পেরিয়েছে। বলিউডে দীর্ঘ তিন দশকের ক্যারিয়ারে এমন নজিরবিহীন অর্জন খুব কম শিল্পীরই ভাগ্যে জোটে। মুম্বইয়ের মান্নাত থেকে শুরু করে দুবাইয়ের বিলাসবহুল ভিলা—সবই যেন কিং খানের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের জীবন্ত নিদর্শন।
এতদিন শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যেই মুগ্ধ করেছেন দর্শক, তবে এবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও জুটেছে তাঁর ঝুলিতে। তিন দশকের ফিল্মি জীবনে প্রথমবার হাতে উঠেছে জাতীয় পুরস্কার—যা শাহরুখের মতো তারকার জন্যও এক নতুন গৌরবের অধ্যায়। ‘জওয়ান’ ও ‘পাঠান’-এর সাফল্যের পর তাঁর অভিনয় ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। নিজে এই সম্মান পেয়ে আবেগাপ্লুত শাহরুখ বলেন, “জাতীয় পুরস্কার শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটা আমার পুরো টিমের ভালোবাসার প্রতিফলন। আমি আজও শিখছি, বেড়ে উঠছি।”
তবে এখানেই শেষ নয়—সন্তান আরিয়ান খানও পিতার পথেই ছাপ রেখে চলেছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আরিয়ানের প্রযোজনায় ও পরিচালনায় তৈরি একটি ওয়েব সিরিজ, যা নেটফ্লিক্সে মুক্তির পরই ভাঙছে রেকর্ডের পর রেকর্ড। শাহরুখ গর্বিত পিতা হিসেবে জানিয়েছেন, “আরিয়ান নিজের মতো করে কাজ করছে। ওর সাফল্য আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
এই সাফল্যের আবহেই বৃহস্পতিবার অনুরাগীদের সঙ্গে একটি বিশেষ প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন কিং খান। তাঁর দীর্ঘদিনের অনলাইন সেশন ‘#AskSRK’-এ ভক্তদের নানা প্রশ্নের মজাদার উত্তর দেন তিনি। কেউ জানতে চান—ষাটের দোরগোড়ায় এসে জীবনের কোন বিষয়টি তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? মৃদু হাসি দিয়ে শাহরুখের উত্তর, “জীবনে এখন শান্তি, পরিবার আর ভালোবাসাই সবচেয়ে জরুরি। সাফল্য তো আসবে যাবে, কিন্তু কাছের মানুষের হাসিটাই আসল শক্তি।”
তাঁর এই কথাতেই যেন ধরা পড়ে জীবনের গভীর উপলব্ধি। একসময় যিনি কেবল ‘রোমান্সের রাজা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আজ তিনি পরিণত হয়েছেন এক দর্শনবোধী শিল্পীতে, যিনি জানেন সাফল্যের মানে কেবল অর্থ বা পুরস্কার নয়—বরং আত্মতৃপ্তি ও মানুষের ভালোবাসা।
ষাটের বসন্ত ছুঁয়ে আজও তিনি বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ। নতুন প্রজন্মের তারকাদের জন্য তিনি যেমন অনুপ্রেরণা, তেমনি তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে ভক্তরা খুঁজে পান এক নতুন উদ্দীপনা। সময়ের সঙ্গে বদলেছে সিনেমার ভাষা, দর্শকের রুচি, কিন্তু শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তা যেন দিন দিন আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই যেন এক চলমান কিংবদন্তি—যার গল্প শুধু সাফল্যের নয়, এক অদম্য লড়াই, ভালোবাসা আর আশার গল্প। ষাটের দোরগোড়ায় এসে শাহরুখ খান যেন নতুন করে প্রমাণ করে দিলেন—বয়স কেবল সংখ্যা, আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে মন ও মনোবলে।