জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু বিভাগের বানিহাল শহরে প্রথমবারের মতো দিবাঙ্গো শিশুদের জন্য কোরআন শিক্ষা শুরু হয়েছে। দারুল উলূম নোমানিয়া নামের এই মাদ্রাসায় বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন দিবাঙ্গো ছাত্রছাত্রী কোরআন শিখছে ব্রেইল লিপির মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও রয়েছে।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূলত পিছিয়ে পড়া সমাজ, বিশেষত দিবাঙ্গো মানুষের জন্য কোরআন শিক্ষা, ধর্মীয় প্রশিক্ষণ ও সাধারণ শিক্ষার প্রচারে কাজ করে আসছে।
দারুল উলূম নোমানিয়ার প্রশাসক মুফতি মোহাম্মদ জুলফিকার কাসেমি জানান, “জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য কোরআন শিক্ষার কোনও সুযোগ ছিল না। প্রথম আমি ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে কোরআন শিক্ষা চালুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।”
এ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটি মুম্বইয়ের ইদারা-এ-দীনিয়াত-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এই সংস্থাই প্রথম ব্রেইল কোরআন তৈরি করেছিল। মুফতি জুলফিকার কাসেমি বলেন, “আমি নিজে ২০১১ সালে কোরআনের ব্রেইল সংস্করণের প্রুফরিডিং করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম।”
এর ফলে দিবাঙ্গো ছাত্রছাত্রীরা শুধু কোরআন পড়তে পারছে তাই নয়, মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার ব্যবহার করেও তারা এই শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারছে।
গত বছর আগস্টে দারুল উলূম নোমানিয়া তাদের প্রথম ব্রেইল কোরআন সম্মেলনের আয়োজন করে। সেই সম্মেলনের পরপরই এক বছরে ভর্তি দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রথমে ১২৫ জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, আর এ বছর নতুন ব্যাচে ভর্তি হয়েছে ১৫০ জন ছেলে ও ২৯ জন মেয়ে।
ছাত্ররা বানিহালের দারুল উলূমে থাকছে, আর মেয়েরা দক্ষিণ কাশ্মীরের কাজিগুন্ডে ঝাঙ্গলদানে অবস্থিত মহিলা শাখায় পড়াশোনা করছে। মহিলা শাখার প্রধান নায়িমা আখতার নিজে দৃষ্টিহীন। তিনি গুজরাটের আহমেদাবাদে ব্রেইল কোরআন শিক্ষা নিয়েছেন এবং বর্তমানে বানিহালের মূল মাদ্রাসাতেও পড়াচ্ছেন।
গত ১৬ ও ১৭ আগস্ট বানিহালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ব্রেইল কোরআন সম্মেলনে অংশ নেন দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাওলানা হাফিজ মোহাম্মদ হুসাইন আবদুল কাদির মিরচি, যিনি নিজ দেশে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি বিশেষ বিদ্যালয় পরিচালনা করেন।
সম্মেলনে মুফতি জুলফিকার কাসেমি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, শিশুদের কোরআনিক জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক বিষয় যেমন বিজ্ঞান ও গণিতেও শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
মুফতি জানান, জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার দিবাঙ্গো মানুষ রয়েছেন। তাদের মূলধারায় আনা ও যতজন চান তাদের ব্রেইল কোরআন শেখার সুযোগ করে দেওয়া এখন জরুরি। তবে এ জন্য জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন, কারণ সেখানকার আধুনিক সরঞ্জাম ও অবকাঠামো উন্নত।
১৯৭৮ সালে বানিহালে জন্মগ্রহণ করেন মুফতি জুলফিকার আহমদ। তিনি উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরের মাদ্রাসা রাহিমিয়ায় হিফজ-এ-কোরআন সম্পূর্ণ করেন। পরে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে আরবি ও মুফতি কোর্স সম্পূর্ণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দিবাঙ্গো শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
২০০৮ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মুখপাত্র এবং প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাজ্জাদ নোমানির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলূম নোমানিয়া। আজ এটি দিবাঙ্গো শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পথ দেখাচ্ছে।