শান্তি প্রিয় রায়চৌধুরী/ কলকাতা
কলকাতা তিন প্রধানের অন্যতম মহমেডান স্পোর্টিং এখন নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রীতিমতো লড়াই করছে। যে ক্লাবে এখন নেই কোন স্পন্সর। ভাবা যায়! কলকাতা কেন, ষাট থেকে আশির দশক ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম স্তম্ভ এই মহমেডান স্পোর্টিং, যে ক্লাবে একদিন ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন নামী-দামী ফুটবলার খেলে গেছেন, সেই ক্লাব এখন অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ময়দানে!
খুবই অবাক লাগে, এই ক্লাব একটা স্পন্সর পায় না। একটা স্পন্সরের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে কর্মকর্তারা। তারা বারবার দ্বারস্থ হচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ক্লাব বাচাতে এবার কর্মকর্তা নয় সমস্ত মহমেডান ভক্তরাও মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সমীক ভট্টাচার্যের কাছে দারস্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেছেন ,"এটাতো কোটি কোটি সমর্থকদের ক্লাব। তারাও ক্লাবকে ভালোবেসে এটা করতেই পারে। তাদেরও অধিকার রয়েছে।তারা যদি মনে করে আমরা ঠিক মত ক্লাব চালাতে পারছি না, তাহলে তারা কাউকে নিয়ে আসুক। তবে আমরা এখনো আশা ছেড়ে দিইনি। "
মহমেডান স্পোটিং ক্লাবের খেলার ময়দানের একটি ছবি
এই অবস্থায় কি করবে কর্মকর্তারা তার হদিস পাচ্ছেন না। কর্মকর্তারা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে সুপার কাপে মহমেডান স্পোর্টিংকে খেলতে পাঠিয়েছে। এবারের আইএসএল যদি শুরু হয় তাহলে কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছে স্পনসর ছাড়া তারা খেলতে যেতে পারবে না। বলতে গেলে ইতিহাস সেরা ক্লাবটা এখন ছন্নছাড়া। খুবই আশ্চর্যের বিষয়, তাদের মাঠের লড়াইটা এখন পৌঁছে গেছে রাজনৈতিক মঞ্চে। ক্লাবের এই সংকটজনক মুহূর্তে ক্লাবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী।
কয়েকদিন আগে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে তিনি সরাসরি আক্রমণ করছেন ক্লাবের বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে। আর সেই সঙ্গে আক্রমণ করেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকেও। ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করে তিনি বলেছেন, “সেনার নজরদারি না থাকলে এতদিন হয়তো ক্লাবের জমি বেচে দিত তারা। প্রোমোটিং করে দিত ম্যানেজমেন্টের কিছু কর্মকর্তা। সুতরাং বলতে কোন দ্বিধা নেই মহমেডানের ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই ম্যানেজমেন্টের জন্যই।”
মহমেডান স্পোটিং ক্লাবের ভবন
এরপর তিনি ক্ষোভ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের পাশে তিনি দাঁড়াচ্ছেন, কিন্তু মহমেডানের জন্য তার কোন ভূমিকা নেই কেন? বারবার মহমেডান স্পোর্টিং এর কর্মকর্তারা একটা স্পন্সরের জন্য তার কাছে দ্বারস্থ হচ্ছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি এখনও নিরব! মনে হচ্ছে তিনি কোন কর্ণপাতই করছেন না। আসলে মহমেডানের সঙ্গে ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।”
নওসাদ সিদ্দিকীর ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে বলেছেন, ম্যানেজমেন্ট যদি ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়ে, তাহলে তিনিও তাঁর দল মহমেডান ক্লাবের দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, “আমাদের হাতে দায়িত্ব এলে ময়দানে মহমেডান আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।সুতরাং অস্তিত্ব সংকটে পড়া মহমেডান কর্মকর্তারা কি ভাবছেন। এই নিয়ে কিন্তু ভাববার সময় হয়েছে একদিনের ইতিহাস সেরা এই ক্লাবটির। তারা কি রাজনৈতিক মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে হাত মেলাবেন, না অন্য পথে হাঁটবেন? সেটাই এখন দেখার সময় হয়েছে।