২০০৪ সালে ডাঃ নকভি প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ হাসপাতাল, যা আজ ছত্তীসগঢ়ের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বহুমুখী বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তিনি হাসপাতালটির পরিচালক এবং মেডিসিন বিভাগের পরামর্শদাতা চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডাঃ আব্বাস নকভি
রোগীদের কাছে তিনি কেবল একজন দক্ষ চিকিৎসকই নন, বরং এক সংবেদনশীল মানুষ, যিনি তাদের সুস্থতা ও স্বস্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। রায়পুরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা ডাঃ নকভির ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। শিক্ষাজীবন শেষে এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর তিনি বড় শহরের সুযোগসুবিধা ত্যাগ করে নিজের জন্মভূমি রায়পুরে ফিরে আসেন। তাঁর বিশ্বাস, সত্যিকারের অবদান সেই, যা নিজের শহর ও সমাজের জন্য রাখা যায়।
প্রতিদিন হাজারো রোগীকে চিকিৎসা দেন তিনি, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি আর সহানুভূতির মেলবন্ধন ঘটে। রোগীদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় তিনি তাদের মনে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলেন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রোগীদের জন্যও তাঁর দরজা সবসময় খোলা, তিনি কখনো চান না যেন আর্থিক সীমাবদ্ধতা মানসম্মত চিকিৎসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসার বাইরে তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, স্বাস্থ্য শিবির, রক্তদান কর্মসূচি, জনসচেতনতা অভিযান ইত্যাদিতে তাঁর অবদান প্রশংসনীয়। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় তাঁর নিরলস পরিশ্রম, দিনরাত এক করে রোগীদের সেবা—তাঁকে সবার প্রশংসার পাত্র করে তোলে।
বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা ও সংগঠন থেকে তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন, তবে তাঁর মতে, “রোগীর মুখের হাসিই আমার সর্বোচ্চ পুরস্কার।” তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, একজন চিকিৎসকের প্রকৃত কর্তব্য কেবল অসুখ সারানো নয়, মানবতাকে রক্ষা করাও। তাঁর কথায়, “আমার চেম্বার থেকে যে রোগী যায়, সে কেবল ওষুধ নয়, আশাও নিয়ে যায়।”
একটি রোগীর সঙ্গে ডাঃ আব্বাস নকভি
ডাঃ নকভির চিকিৎসা জীবন শুরু হয় ১৯৯৫ সালে, মুম্বাইয়ের খ্যাতনামা জসলোক হাসপাতাল-এ কাজ করার পর। গালফ দেশ ও পশ্চিমা বিশ্বের আকর্ষণীয় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি মায়ের ইচ্ছায় নিজের শহর রায়পুরে ফিরে আসেন এবং শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
একটি ছোট ক্লিনিক দিয়ে শুরু করে ১৯৯৮ সালে তিনি আস্থা নার্সিং হোম প্রতিষ্ঠা করেন। স্বল্প খরচে রোগীকেন্দ্রিক পরিষেবার জন্য এই নার্সিং হোম দ্রুতই মানুষের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে এবং সমাজে স্থায়ী ছাপ ফেলে। বিগত বছরগুলোতে তিনি সমাজ ও চিকিৎসা মহল থেকে বহু সম্মান পেয়েছেন, যা তাঁর নিষ্ঠা ও রোগীর প্রতি মমত্ববোধেরই প্রতিফলন।
তাঁর মতে, “অসুস্থতা কেবল দেহকে নয়, মন ও সমাজকেও প্রভাবিত করে। চিকিৎসক যদি আন্তরিকভাবে রোগীর পাশে দাঁড়ান, তবে রোগ অর্ধেক জয় হয়েই যায়।” চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো, চিকিৎসার ক্রমবর্ধমান ব্যয়। তিনি সর্বদা চেষ্টা করে যান যাতে প্রত্যেক অর্থনৈতিক শ্রেণির মানুষ সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা পেতে পারেন।
রায়পুর মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে তাঁর নেতৃত্বগুণ প্রকাশ পায়, তিনি একসময় কলেজের সচিব ও সভাপতি ছিলেন এবং জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ডাঃ নকভি আজও আর্থিকভাবে দুর্বল রোগীদের ন্যূনতম বা বিনা খরচে চিকিৎসা করেন, যার ফলে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের গভীর আস্থা অর্জন করেছেন। রায়পুরের পুরনো বাসিন্দারা এখনও স্নেহভরে স্মরণ করেন ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আস্থা নার্সিং হোম-কে, যা মানবিকতা ও সুলভ চিকিৎসার প্রতীক ছিল।
রায়পুরের এক সাধারণ ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মানো ডাঃ নকভি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা ও সমাজসেবার প্রতি গভীর অনুরাগ দেখিয়েছিলেন। মেডিকেল ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর মুম্বাইয়ের জসলোক হাসপাতালে উচ্চ প্রশিক্ষণ তাঁকে আরও পরিণত করে তোলে।
দীর্ঘ কয়েক দশকের নিরলস পরিশ্রম, পেশাগত উৎকর্ষতা, মানবিকতা, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মেলবন্ধনে ডাঃ আব্বাস নকভি আজ রায়পুরের চিকিৎসাক্ষেত্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।