সুদীপ শর্মা চৌধুরী / গুয়াহাটি
ছট্ পূজা হিন্দু ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক উৎসব, যা সূর্যদেব ও তাঁর বোন ঊষা দেবীর উপাসনাকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। এটি সাধারণত দীপাবলির কয়েক দিন পর কার্তিক মাসের ষষ্ঠ তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি চার দিন ধরে চলে, প্রতিটি দিনের রয়েছে নিজস্ব আচার ও বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য।
নহায়-খায় (প্রথম দিন)
এই দিনে ভক্তরা নদী বা পুকুরে স্নান করে শরীর ও মন শুদ্ধ করেন। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে সাত্ত্বিক নিরামিষ ভোজন করেন। নদীর জলে স্নান শরীরকে জীবাণুমুক্ত করে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং সকালের সূর্যালোক শরীরে ভিটামিন ডি সরবরাহ করে।
'নহায়- খায়' উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সময় ভক্তদের নদীতে স্নান করার একটি ছবি (এ আই)
খর্ণা (দ্বিতীয় দিন) – উপবাস ও সংযমের দিন
ভক্তরা সারাদিন নির্জলা উপবাস রাখেন। সূর্যাস্তের পর খির, রুটি ও ফল উৎসর্গ করে উপবাস ভঙ্গ করেন। বৈজ্ঞানিক দিক: উপবাস শরীরের টক্সিন দূর করে, হজমপ্রণালীকে বিশ্রাম দেয় এবং মনোসংযম বৃদ্ধি করে।
সন্ধ্যা অর্ঘ্য (তৃতীয় দিন) – অস্তগামী সূর্যকে প্রণাম
এই দিনে ভক্তরা নদী বা পুকুরে দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্যকে ফল ও থেকুয়া অর্পণ করে। বৈজ্ঞানিক দিক: অস্তসূর্যের কোমল রশ্মি শরীরের বায়ো-রিদম ঠিক রাখে, জলে দাঁড়ানো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ধ্যান মনকে শান্ত করে।
'খর্ণা' উপলক্ষে তৈরি প্রাসাদের ছবি
ঊষা অর্ঘ্য (চতুর্থ দিন) – উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য
শেষ দিনে ভোরে ভক্তরা পুনরায় নদীতে গিয়ে সূর্যোদয়ের সময় অর্ঘ্য দেন ও উপবাস ভঙ্গ করেন। সূর্যের প্রথম রশ্মি শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করে, হাড় ও ত্বক সুস্থ রাখে এবং সকালে ওঠা মন ও শরীরকে সক্রিয় করে।
ছট্ পূজা আমদের শেখায়:
* সূর্যালোকের উপকারিতা ও প্রাকৃতিক জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা শেখায়।
* নদী ও পরিবেশ পরিষ্কারের বার্তা দেয়।
* উপবাস শরীরকে বিশুদ্ধ ও মনকে সংযমী করে।
* সম্মিলিত প্রার্থনা মানসিক শান্তি ও সামাজিক ঐক্য বাড়ায়।
'ঊষা অর্ঘ্য' উপলক্ষে উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য প্রদান করার ছবি ( এ আই)
ছট্ পূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বিজ্ঞান, পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের এক সমন্বিত উৎসব। এটি আমাদের শেখায় প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, শৃঙ্খলায় জীবনযাপন করা এবং সূর্যের শক্তিকে সম্মান জানানো।