শ্রীলতা মেনন/ত্রিশূর
নূর জলীলা, শুধু একটি নাম নয়, তিনি জীবনেরই আরেক রূপ। জন্মের সময়ই হাত-পা ছিল না তাঁর, কিন্তু সেই শারীরিক অক্ষমতাকে তিনি কখনো জীবনের পথ রোধ করতে দেননি। বরং তিনি দেখিয়েছেন, অপূর্ণতা নিয়েই মানুষ পূর্ণ জীবন কাটাতে পারে, আনন্দে ও সাহসে ভরপুর। যে-ই হোক না কেন, পুরুষ বা নারী, যেকোনো ধর্ম বা সমাজের মানুষ, যতই অসুবিধা থাকুক না কেন।
নূরের জীবনে ব্যর্থতা বা লজ্জার স্থান নেই। বরং তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতাকেই শক্তিতে রূপান্তর করেছেন। লজ্জা বা সংকোচ না করে তিনি নিজের শারীরিক অবস্থাকেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি আজ টেড এক্স বক্তা, যিনি কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

বক্তৃতা দেওয়ার একটি মুহূর্তে নূর জলীলা
গান, ছবি আঁকা, ব্লগ লেখা, সব ক্ষেত্রেই তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজের আলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাঁর প্রভাব অদ্ভুত শক্তিশালী।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে নিজের অক্ষমতা নিয়ে নূর বলেন: "আজ আমার দিন। কোনো দ্বিধা বা দুঃখ ছাড়াই বলব, আমি ভাগ্যবতী, আমি এভাবেই জন্মেছি। সহানুভূতি বা বাড়তি যত্নকে অতিক্রম করতে আমাকে সময় লেগেছে, কিন্তু আজ আমি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।""
তিনি আরও বলেন, "সমবেদনা আর অতিরিক্ত যত্ন সহ্য করার মতো শক্তি অর্জন করতে আমার বহু বছর লেগেছে। ছোটবেলায় শারীরিক চেহারার কারণে আমি উপেক্ষিত, একঘরে ও উপহাসের পাত্র ছিলাম। কৃত্রিম অঙ্গের যন্ত্রণায় কাতর রাতে আমি ভাবতাম, যাদের পা আছে তারা কত ভাগ্যবান। কিন্তু আজ অটোবক-এর কৃত্রিম অঙ্গ দিয়ে আমার জীবন অনেক সহজ হয়েছে।"
নূর জলীলাতার বাবা-মা এবং বোনের সাথে
নূরের বিশ্বাস, অসামঞ্জস্য বা বিকলাঙ্গতা যেকারও জীবনে আসতে পারে। তাই আমাদের উচিত প্রতিটি আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা।
গান, ব্লগ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতির জন্য তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন। স্বামী হাজির সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যের আনন্দঘন মুহূর্তগুলোও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নেন, আর তাঁর কোটি কোটি অনুরাগী সেই আনন্দে সামিল হন তাঁর অক্ষমতা ভুলে।
তাঁর ঝলমলে হাসি, প্রাণবন্ত গান আর অদম্য সাহস শুধু ভিন্নভাবে সক্ষমদের নয়, বরং সব তরুণ-তরুণী ও নারীর কাছে এক অমূল্য প্রেরণা। বিশেষত মুসলিম সমাজের নারীদের জন্য, তিনি এক নতুন শক্তির প্রতীক।
দিবাঙ্গোতাকে জয় করা নূর জলীলা
ওড়নায় মাথা ঢেকে রাখলেও তিনি কখনো হিজাবের আড়ালে যান না। নিজের আলাদা পরিচয়, স্বতন্ত্র সত্তাকে তিনি প্রতিটি পোস্টেই তুলে ধরেন, যেখানে ধর্ম বা লিঙ্গ নয়, একমাত্র ‘নূর জলিলা’-ই মুখ্য।
তাঁর কাছে পৌঁছনো সহজ নয়, কিন্তু তাঁর সাহসী উপস্থিতি, আত্মবিশ্বাস আর দীপ্ত হাসি আজ মানুষের মনে একটাই বার্তা পৌঁছে দেয়, জীবনকে ভালোবাসো, আর সাহসকে সঙ্গী করো।