জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বিদ্যালয় স্থাপন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অসমের নিরক্ষর রিকশা চালক আহমেদ আলী

Story by  Daulat Rahman | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 Months ago
রিকশা চালক আহমেদ আলী
রিকশা চালক আহমেদ আলী
 দৌলত রহমান,গুয়াহাটি ঃ

 সত্তরের দশকের শেষের দিকে একদিন পুরো দিন রিকশা চালানোর পর রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন উজান অসমের শ্রীভূমি জেলার আহমেদ আলী নামের রিকশা চালক। কিন্তু একটি দুঃস্বপ্ন তার ঘুম ভেঙে দেয় এবং পুরো রাত তিনি ঘুমাতে পারেননি। স্বপ্নে তিনি দেখেছিলেন যে তাদের জীবনে শীঘ্রই আসতে চলা সন্তানটিও নিরক্ষর থাকবে এবং জীবিকার জন্য রিকশা চালাতে হবে।

নিজের সন্তান এবং অন্যান্য শিশুরাও যাতে ভবিষ্যতে নিরক্ষর না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আহমেদ আলী রিকশা চালিয়ে উপার্জিত অর্থ এবং ৩২ বিঘা পূর্বপুরুষের জমি থেকে প্রাপ্ত সামান্য সঞ্চয়ের সমস্ত অর্থ নিজের অঞ্চলে ৯টি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ব্যয় করেছেন।আজ এই বিদ্যালয়গুলিতে প্রায় ৫০০ মেয়ে এবং ১০০ ছেলে পড়াশোনা করছে। আলী বলেন যে ‘নিরক্ষরতার পাপ’এ যেন কেউ কখনও বেঁচে থাকতে না হয়, সেই কারণে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ।
 

 
নিরক্ষর কিন্তু সমাজে শিক্ষা প্রদানের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন
 
আলী প্রথমবারের জন্য ১৯৭৮ সালে নিজের জমির একটি প্লট বিক্রি করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। গ্রামের লোকদের কাছ থেকেও তিনি সামান্য অর্থের অনুদান পেয়েছিলেন। এরপর আলী কখনও নিজের স্বপ্নকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

খিলরবন্দ-মধুরবন্দ এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে তিনি স্থাপন করা ৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি নিম্ন প্রাথমিক, পাঁচটি মাধ্যমিক (ইংরেজি মাধ্যম), এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। পাঁচটি বিদ্যালয় প্রাদেশিকীকরণ হয়েছে এবং এর শিক্ষক ও কর্মচারীরা সরকারের কাছ থেকে বেতন পান,অন্যদিকে বাকিগুলিতে শিক্ষকরা স্বেচ্ছায় কাজ করেন।
 
প্রায় ৯০ বছর বয়সেও আলী স্বপ্ন দেখতে এবং নিজের মিশনকে নতুন দিগন্তে প্রসারিত করতে ছাড়েননি। তিনি এখন নিজের গ্রামের আশেপাশে একটি জুনিয়র কলেজ খোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা) উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। আলী নিজের গ্রামে এবং আশেপাশের অঞ্চলে আরও বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনাও করেছেন ।
 

 এলাকাবাসীদের সংবর্ধনা প্রদান
 
 
“সর্বশক্তিমান আমাকে পথ প্রদর্শন করে আশীর্বাদ দেওয়ার সাথে সাথে আমি আগত প্রজন্মের জীবন পরিবর্তনের এক অভিযানে নেমেছি। আমাদের গ্রামের অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি আমার সন্তানদেরও পড়াতে পারায় আমি আনন্দিত।
 
বিদ্যালয়গুলি থেকে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন ভালোভাবে চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমার আত্মা পূর্ণতা এবং সন্তুষ্টির অনুভূতি পেয়েছে। আমি আমার সমাজের প্রভাবশালী এবং ধনী ব্যক্তিদের আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা আমাকে আরও বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আর্থিকভাবে সহায়তা করুন।” আওয়াজ-দ্য ভয়েসকে এভাবেই বলেন আলী।
আলীর জন্য শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এবং সকলের শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাওয়া উচিত। "যেকোনো ব্যক্তির জন্য অশিক্ষিত থাকা একটি পাপ। কোরআনে থাকা প্রথম শব্দটি হলো "ইকরা", যার অর্থ "পড়ুন" বা "পাঠ করুন"।এই শব্দটি সূরা আল-আলাকের প্রথম আয়াতের শুরুতে (অধ্যায় ৯৬) পাওয়া যায়। "ইকরা"র মাধ্যমে ইসলামের মধ্যে জ্ঞান, শিক্ষা এবং শিক্ষার ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আরও বিদ্যালয় স্থাপনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।”  আলী বলেন।

 উল্লেখযোগ্যভাবে, এবার নতুন দিল্লিতে গণতন্ত্র দিবস উদযাপনে আহমেদ আলীর উপস্থিতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সমাজের প্রতি তার অসাধারণ সেবার জন্য ভারত সরকার তাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার মাসিক রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’-এ অসমের শ্রীভূমি জেলার একটি গ্রামীণ গ্রামের বাসিন্দা আহমেদ আলীর কথা উল্লেখ করেছিলেন। এর পর তিনি দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন।