নয়া দিল্লি
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ায় নেপালে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির পদত্যাগ দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমেছেন জেন-জিরা। রবিবার রাতে বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে জেন-জি আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুদান গুরুংয়ের নেতৃত্বে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।
তাঁদের অভিযোগ, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। তাই কার্কির পদত্যাগ ছাড়া বিকল্প নেই বলে তাঁরা দাবি করেন।সুদান গুরুং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি আবার রাস্তায় নামি, কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা যেখানেই বসিয়েছি, সেখান থেকে উপড়ে ফেলব।’
তিনি আরো অভিযোগ করেন, আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্জাল ভেতর থেকে নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় গুরুং সঙ্গে নিয়ে আসেন গত সপ্তাহের বিক্ষোভে নিহত ও আহতদের স্বজনদেরও।
প্রধানমন্ত্রী কার্কি আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্জালকে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর আগে তিনি রমেশ্বর খনালকে অর্থমন্ত্রী এবং কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। আর্জাল সুপ্রিম কোর্টে লোকমান সিং কার্কিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান করার বিরুদ্ধে রিট করে আলোচনায় আসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলায় লড়াই করছেন এবং কাঠমাণ্ডু মহানগর করপোরেশনের আইন উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
অর্থমন্ত্রী রমেশ্বর খনাল সাবেক অর্থসচিব। তিনি কেপি শর্মা অলি সরকারের কাছে সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ৪৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে কুলমান ঘিসিং বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে লোডশেডিং কমিয়ে জনআস্থা অর্জন করেছিলেন। তবে অলি সরকার তাঁকে সরিয়ে হিতেন্দ্র দেব শাক্যকে বসায়, যা জনরোষ সৃষ্টি করেছিল।কার্কি প্রথমে ফোনে তিনজনের সঙ্গেই আলাদাভাবে কথা বলেন, পরে অফিসে ডেকে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে তিনি সিনিয়র অ্যাডভোকেট সবিতা ভাণ্ডারিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন।রবিবার সকালে কার্কি মন্ত্রিসভা গঠনের আলোচনা শুরু করেন। সর্বোচ্চ ১১ থেকে ১৫ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। ফলে মন্ত্রীদের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। দুর্নীতি, সরকারবিরোধী নিপীড়ন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাস্তায় নেমে আসে নেপালের তরুণসমাজ। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং গুলি ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন শহরে জারি করা হয় কারফিউ।
তবে আন্দোলনকারীরা দমে না গিয়ে পরদিনও বিক্ষোভ চালিয়ে যান। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। এদিন বিভিন্ন নেতার বাড়ি ও সরকারি ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। নেপালের সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ৭১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় গত ১২ সেপ্টেম্বর নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেন সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কি। জেন-জি আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেল ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
.webp "দেবী দুর্গা")
