ইরান,ইন্দোনেশিয়ার মডেল অনুসরণে ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার স্থিতিশীল করা সম্ভব: পদ্মশ্রী ডাঃ ইলিয়াস আলী

Story by  Daulat Rahman | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 3 d ago
পদ্মশ্রী ডাঃ ইলিয়াস আলী
পদ্মশ্রী ডাঃ ইলিয়াস আলী
দৌলত রহমান , গুয়াহাটি ঃ

যখন মুসলিম জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি অসমের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে, তখনই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক পদ্মশ্রী ডাঃ ইলিয়াস আলী দাবি করেছেন যে, ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো ইসলামিক দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ মডেল অনুসরণ করাই এই সমস্যার সমাধানের পথ হতে পারে।
 
ডাঃ আলী বলেন, মুসলিম সমাজকে গর্ভনিরোধক এবং বন্ধ্যাকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে ছোট পরিবার গঠনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে, এবং এই উদ্দেশ্যে ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম দেশের গৃহীত পদ্ধতিগুলো জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা উচিত।
‘আওয়াজ - দ্যা  ভয়েস আসাম’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডাঃ আলী বলেন, অশিক্ষিত ও গ্রামীণ মুসলমানরা জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চলেছেন। শুধু অসমেই নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও একই প্রবণতা দেখা যায়।অসমের মুসলমানদের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণের জন্য ২০১৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হওয়া ডাঃ ইলিয়াস আলী এই ক্ষেত্রে তার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
 
তিনি বলেন, “অনেক মুসলমান বিশ্বাস করেন যে সন্তান আল্লাহর দান এবং সন্তান জন্ম নেওয়া আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী ঘটে। তারা মনে করেন, আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া পাপ। এই ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ ছিল না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। আমি ইরান এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলিতে গৃহীত পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি অনুসরণ করতে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হই। এই কাজে আমি ধর্মীয় নেতাদের আস্থায় এনে তাদের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করেছি।”
 
তিনি আরও জানান যে এনএসভি (NSV) অর্থাৎ নন-স্ক্যালপেল ভ্যাসেকটমি হল এমন এক বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি, যেখানে শুক্রনালীতে একটি সূক্ষ্ম ছিদ্রের মাধ্যমে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে কোনো কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না। এটি তুলনামূলকভাবে কম বেদনাদায়ক এবং অস্ত্রোপচারের পর জটিলতার সম্ভাবনাও কম থাকে।
 
পদ্মশ্রী ডাঃ ইলিয়াস আলী গ্রামের পথে
 
উল্লেখযোগ্য যে, ডাঃ আলী এনএসভি পদ্ধতির উদ্ভাবক চীনের ডাঃ লি শুনকিয়াং-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। যদিও এনএসভি পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে, ভারতে এটি চালু হয় ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে।
 
ডাঃ আলী জানান যে,ইরানের পরিবার পরিকল্পনা প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য বিবাহের অনুমতিপত্র পাওয়ার আগে আধুনিক গর্ভনিরোধক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
 
ইরান সরকার অনুমোদিত কনডম উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছে এবং এটি একমাত্র দেশ যেখানে লাখ লাখ পুরুষ ভ্যাসেকটমি (স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ) করিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
 
তিনি বলেন, “ইরানে ধর্মীয় নেতারা মসজিদে শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময় ঘোষণা করে থাকেন যে ছোট পরিবার গঠন করা সমাজের প্রতি একটি দায়িত্ব। তাঁরা আদালতের আদেশের মতো ধর্মীয় ফতোয়া জারি করেন, যা সব ধরনের গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে। এই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে পুরুষ ও নারীদের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণও। ইরানই বিশ্বের প্রথম মুসলিম দেশ, যারা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।"
 
চিকিৎসা শিবিরে কর্মরত
 
ডাঃ আলী আরও বলেন, "ইরানে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে কনডম, পিল এবং বন্ধ্যাকরণের মতো কার্যকর উপায়।" ডাঃ আলীর মতে, ইন্দোনেশিয়া একটি মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খুব বেশি অগ্রাধিকার পায় না। তবে দেশটির সরকার মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি খ্রিস্টান ও ক্যাথলিক ধর্মগুরুদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমগ্র দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করেছে।
 
তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মুখোমুখি উন্নয়নশীল দেশ, যেমন ভারত, যদি ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার মডেল অনুসরণ করে, তাহলে জনসংখ্যা স্থিতিশীল করতে তা তাদের জন্য উপকারী হবে।
 
মুসলিম দেশগুলোতে যে কার্যকর পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে, সেগুলো অসমের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় করার পাশাপাশি, ডাঃ আলী পবিত্র কোরআনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মুসলিম সমাজকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
 
ডাঃ আলী বলেন, “আমি পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, জন্মনিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা ইসলাম বিরোধী নয়।”